অনলাইন জুয়ায় জড়িত হাজারের বেশি এমএফএস এজেন্ট শনাক্ত
Published: 26th, May 2025 GMT
সদ্য জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যেই জুয়ার সঙ্গে জড়িত এগারো শ-এর বেশি মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) এজেন্ট শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
২১ মে জারি করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে অনলাইনে জুয়া খেলা, জুয়ার অ্যাপ বা পোর্টাল তৈরি, প্রচারণায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে দুই বছরের দণ্ড বা ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া ২১ ও ২২ ধারায় জুয়া খেলার জন্য কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন, জুয়া খেলা বিষয়ে কোনো প্রতারণা বা জালিয়াতি করাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দেওয়া মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুয়া খেলা নিয়ে উৎসাহ প্রদান বা বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়াও অপরাধ। কোনো নাগরিক, সম্মানিত ব্যক্তি বা তারকা যদি মনে করেন তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট বা পোর্টালে তাঁর ছবি বা ভিডিও ব্যবহৃত হচ্ছে, তখন তাঁকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই আইন প্রণয়নের আগে যাঁরা জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত বা জুয়া খেলার বিজ্ঞাপনে জড়িত ছিলেন, তাঁদের দ্রুত এই কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
জুয়ার কারণে যাঁরা আগে প্রতারণার শিকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, অনলাইন জুয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী, বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানি, মিডিয়া বায়ার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপনগ্রহীতা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনলাইন জুয়া নিয়ে অভিযোগ জানাতে [email protected]– মেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এমএফএস-ব্যাংক আন্তলেনদেন চালু হয়েছে, শুরু করতে পারেনি বিকাশ ও নগদ
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর (পিএসপি) মধ্যে আন্তলেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবা আজ শনিবার চালু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ এই সেবা চালু করতে পারেনি। এমনকি রকেটও সেবাটি চালু করতে পারেনি। ফলে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে সেবাটি চালুর জন্য। যেকোনো সময় গ্রাহকেরা সেবাটি পাবেন। অন্যদিকে নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সেবা চালু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে চালু করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেবাটি চালু করতে বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স না থাকায় নগদকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই সেবাটি চালু করেছে। আশা করছি শিগগির সবাই সেবাটি চালু করতে পারবে।’
এর আগে গত মাসের শুরুতে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করবে।
কারা চালু করতে পেরেছেআজ থেকে কারা এই সুবিধা চালু করতে পেরেছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা চালু করেছে। এই তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, রকেট ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট এই সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের টাকা জমা সুবিধা চালু হয়েছে। তবে এসব হিসাব থেকে টাকা পাঠানো সুবিধা চালু হয়নি। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান জমা ও পাঠানো দুটো সুবিধা চালু করেছে।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম এক লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তলেনদেন সেবা চালুর উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছে এবং সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এই সেবার সর্বশেষ সংস্করণে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। তবে আন্তলেনদেনের কার্যকারিতা এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত অন্য অংশীজনদের ওপরও নির্ভর করে। তাই এই মুহূর্তে আমরা শক্তিশালী অথেনটিকেশন এবং স্তরভিত্তিক (লেয়ারড) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং এ-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ (ডিসপিউট) দেখা দিলে তা সমাধান করা যায়। সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আমরা আশা করি খুব দ্রুতই গ্রাহকেরা পূর্ণাঙ্গভাবে সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
নগদের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও মাশুল নির্ধারণ, কারিগরি কমিটিসহ এ-সংক্রান্ত সব সেবায় নগদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপরও সংযোগ না পাওয়ায় সেবাটি চালু করা যায়নি।
এদিকে রকেটের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ছুটির দিনের কারণে এখনো সেবাটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি রোববার থেকে শুরু হবে।’
খরচ কতনতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।
বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা।