বায়িং হাউসে চাকরির নামে পর্নোগ্রাফির ফাঁদে তরুণীরা
Published: 30th, May 2025 GMT
বায়িং হাউসে চাকরি দেওয়ার নামে তরুণীদের আটকে রেখে পর্নো ভিডিও তৈরি করে আসছিল একটি চক্র। ভিডিও ধারণের আগে তাদের ইয়াবা সেবনে বাধ্য করা হতো। পরে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অংকের টাকা। অন্তত দুই বছর ধরে তারা রাজধানীর উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়ে এই অপকর্ম করে আসছিল। ভুক্তভোগীদের ভিডিও বিভিন্ন পর্নো সাইটে বিক্রি করা হয়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা পুলিশের।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এক কলেজছাত্রী নিখোঁজের তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এরই মধ্যে চক্রের সদস্য মাসুম পারভেজ, সোলাইমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম সৌরভ, মোছা.
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়। এর পর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ২৭ মে রাত ২টা ৩৬ মিনিটে ছাত্রীর মায়ের মোবাইলে ফোনে কল করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনাটি তারা উত্তরা পশ্চিম থানাকে জানান। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এক পর্যায়ে ২৮ মে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১০/বি সড়কে ৩৭ নম্বর বাসার দোতলা থেকে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানে বিভিন্ন সময় মুক্তিপণ বাবদ আদায় করা ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ৬০ পিস ইয়াবা, দুটি সিসি ক্যামেরা এবং তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তবে তাদের সহযোগী কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার ও পলাতকদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মধুমিতা নামে ভুক্তভোগী তরুণীর এক বান্ধবী এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। সে তরুণীকে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে উত্তরার ওই বাসায় নিয়ে যায়। প্রথম দফায় তার লোক দেখানো ইন্টারভিউ নিয়ে ছবি তুলে রাখা হয়। তাকে বলা হয়, বিদেশি ক্রেতারা মাঝেমধ্যেই এখানে আসে। তাদের সঙ্গে থাকতে হবে, কথা বলতে হবে ইত্যাদি। এর পর ২৬ মে তাকে আবারও ডেকে নেওয়া হয়। সেদিন তাকে আটকে রেখে পরে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ন গ র ফ
এছাড়াও পড়ুন:
এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজ পাতাকা হাতে কেঁদেছি: শাকিল
ঘনকালো মেঘে ঢাকা আকাশ। বৃষ্টি কখনও নামছে ঝুমঝুমিয়ে, কখনও গুঁড়িগুঁড়ি। এরই মধ্যে বিরামহীন বয়ে চলছিল দমকা হাওয়া। তবে এসব কিছুই বাধা হতে পারেনি হাজারো মানুষের জন্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো ইকরামুল হাসান শাকিলের জন্মভিটায় ফেরার সংবাদে তারা ভিড় করেন।
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগচালা গ্রামে দেখা যায় এ দৃশ্য। আশপাশের সব গ্রামের মানুষের গন্তব্য ছিল শাকিলের বাড়ির দিকে। তাদের কারও হাতে তাজা ফুলের তোড়া, কারও হাতে মালা। কেউ আবার নিয়ে এসেছিলেন নানা জাতের মৌসুমি ফল। অগণিত মানুষের সঙ্গে জ্যৈষ্ঠের প্রকৃতিও যেন ছুটে এসেছিল শাকিলকে স্বাগত জানাতে। মানুষের এই ভালোবাসার সামনে এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি।
ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে লাল-সবুজের পাতাকা হাতে নিয়ে আমি কেঁদেছি। এই কান্না ছিল কৃতজ্ঞতার, আনন্দের আর দায়িত্ববোধের। এই পথ সহজ ছিল না।’
বাগচালা গ্রামের প্রয়াত খবির উদ্দিন ও শিরিন আক্তার দম্পতির তিন ছেলে। সবার বড় ইকরামুল হাসান শাকিলকে বিদ্যালয়জীবনেই আকর্ষণ করে কবিতাচর্চা। পরবর্তী সময়ে পাহাড়-পর্বতের চূড়া ছোঁয়ার নেশায় পেয়ে বসে তাঁকে। ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। পরে আরোহণ করেছেন গ্রেট হিমালয়, ৬ হাজার ১৮৬ মিটার উঁচুর মাউন্ট কায়াজো রি পর্বত, ৭ হাজার ১২৭ মিটার উঁচু হিমলুং, ৬ হাজার ৩৩২ মিটারের দোলমা খাংসহ বেশ কিছু পর্বত।
তবে এভারেস্টের শীর্ষ ছোঁয়ার আগে তাঁকে পাড়ি দিতে হয় দুর্গম পথ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তাঁর এই যাত্রা শুরু হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। এদিন দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানী থেকে হাঁটতে শুরু করেন। হেঁটে ৮৪ দিনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান গত ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সেখান থেকে শাকিল দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার বিকেলে। ঢাকায় দু’দিন বিশ্রামের পর শনিবার সকালে জন্মভিটায় ছুটে যান। ঢাকা থেকে মাওনা চৌরাস্তা, ফুলবাড়িয়া রোড হয়ে শালদহ সেতু পেরিয়ে বাগচালা গ্রামের ভিটায় পৌঁছান। শুরুতেই মা শিরিন আক্তারকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চারদিক ফুলের বৃষ্টিতে তাঁকে স্বাগত জানায় এলাকাবাসী।
এ অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে শাকিল সমকালকে বলেন, ‘গ্রামের মানুষ আমাকে বিরল ভালোবাসা দিয়েছে। আমাকে আপ্লুত করেছে। আমাকে ঋণী করে ফেলেছে। আমাকে দায়বদ্ধ করে ফেলেছে। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আমার আর কিছুই দেওয়ার নেই। বাবা বেঁচে থাকলে আজকে অনেক খুশি হতেন। তাঁকে খুব মিস করছি।’
এভারেস্ট অভিযানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাকিল বলেন, ‘হিমালয়ের অতল গভীর বরফের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে আমাদের জীবনবিন্দু। প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য ছিল। যমুনা নদীর উত্তাল খরস্রোতা ঢেউ, অনিশ্চয়তার দীর্ঘ পথ, খুম্বু আইসফল, লোৎসে ফেস, সাউথ কল, হিলারি স্টেপ– একেকটা জায়গা যেন একেকটা মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র ও মৃত্যুর চোখ রাঙানি।’
অক্সিজেনশূন্য উচ্চতা উঠে কৃত্রিম অক্সিজেনের মাস্ক মুখে তাঁর প্রতিবারই মনে হয়েছে, ‘আর পেরে উঠবো না।’ কিন্তু হৃদয়ে বাজতে থাকা বাংলাদেশের নাম আর ‘সি টু সামিট’ অভিযানের অঙ্গীকার তাঁকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
শাকিল বলেন, ‘আমি তখন দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। মাথার ওপরে বিশুদ্ধ নীল আকাশ থাকার কথা ছিল, কিন্তু প্রকৃতি সেটা চায়নি। চেয়েছিল চরম পরীক্ষা। পায়ের নিচে ছিল অসীম শূন্যতা। ৮৮৪৮.৮৬ মিটার ওপরে দাঁড়িয়ে আমি শুধু একজন পর্বতারোহী নই– আমি তখন হাজারো আবেগ, ত্যাগ, সংগ্রাম আর স্বপ্নের প্রতিনিধি।’