আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এপ্রিলের শেষ দিকে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছ থেকে ফোনে প্রস্তাবটা পেয়েছিলেন তিনি। লোভনীয় এ প্রস্তাব গ্রহণ করতে কালবিলম্ব করেননি বুলবুল। তিনি রাজি হওয়ায় কপাল পোড়ে আরেক সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদের। কারণ তাঁকে অপসারণ করে বিসিবির ১৭তম সভাপতি করা হয় বুলবুলকে।
বিসিবি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্রের নিয়মের সুবিধায় সভাপতি হওয়া বুলবুল গতকাল দায়িত্ব বুঝে নেন। বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুকের পরিচালক পদের মনোনয়ন বাতিল ও বুলবুলকে কাউন্সিলর করে। গতকাল পরিচালক হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর বিকেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির সভায় পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। এনএসসির নির্দেশনায় ৯ জন পরিচালকের সমর্থন পান তিনি। জাতীয় দলের সঙ্গে পাকিস্তানে থাকা নাজমুল আবেদীন ফাহিম জুমে মিটিংয়ে যোগ দেন। বুলবুলের সভাপতি হওয়ার দিনে নাজমুল আবেদীন ও ফাহিম সিনহাকে সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ দুটি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য ছিল।
বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন বুলবুল। যেখানে গত বছরের ২১ আগস্ট উৎসবমুখর পরিবেশে সভাপতি হিসেবে অভিষেক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ফারুক। একই চেয়ারে বসে বুলবুল বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে আমি শত শত প্রশ্ন পেতাম, আপনাকে ডাকা হয় আপনি আসেন না কেন? সত্যিকার অর্থে এই প্রথম গত মাসের (এপ্রিল) শেষদিকে আমি একটা কল পাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে (এনএসসি) এবং বলা হয় যে আপনাকে একটা সুযোগ দেওয়া হবে, আপনি কী সুযোগ গ্রহণ করবেন? আমি ওয়েট করতাম এরকম একটা কলের জন্য। যখন এই কল পেয়েছি, তখন আর পেছনে তাকাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই কলটা পেয়েছিলাম আমাদের সম্মানিত স্পোর্টস উপদেষ্টার কাছ থেকে।’ অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য সভাপতি হলেও দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে ছাপ রেখে যেতে চান বুলবুল, ‘আমি সম্মানিত যে এই রকম একটা কল পেয়েছি; যার ফলে এই দায়িত্বটা পেয়েছি। এই দায়িত্বটা বাংলাদেশের ক্রিকেট না, ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কী ক্রিকেট আছে চেষ্টা করব, সেটি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। আমি বিশ্বাস করি ১১ জন ক্রিকেট খেলে না, বাংলাদেশের সবাই ক্রিকেট খেলে।’
বুলবুল দেশে ফিরে সমকালকে জানিয়েছিলেন, তিনি সীমিত সময়ের জন্য বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন। পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দিয়ে নিজের কাজে ফিরে যেতে চান তিনি। এই নতুন জার্নিকে টি২০ গেমের সঙ্গে তুলনা করেন বুলবুল, ‘আমরা জানি যে টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনের হয়। ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টার। আমি একটা কুইক টি২০ ইনিংস খেলতে এসেছি। একটি ভালো টি২০ ইনিংস খেলব, যেটি আপনারা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। চেষ্টা করব, ক্রিকেটটা যাতে সবাই খেলতে পারে, যাতে সবার খেলা হয়। যেন একটা স্টেটমেন্ট হয়, ক্রিকেটটা সবার জন্য। এই ধারাটা শুরু করে দিয়ে যেতে চাই।’
দেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার সভাপতি বুলবুল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর নেতৃত্ব হারালেও অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন তিনি। ১৩ টেস্ট ও ৩৯ ওয়ানডে খেলা বুলবুল ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ২০০৩ সালে। তিনি আফগানিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভুটান, থাইল্যান্ড, ইরান, চীনসহ অনেক দেশেই ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কোচ ও ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিবি পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদের পরিচালক হয়েছেন করপোরেট ব্যক্তিত্ব ও নারী ক্রীড়া সংগঠক রুবাবা দৌলা। তাঁকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাউন্সিলর মনোনীত করে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রুবাবা দৌলার অন্তর্ভুক্তিতে ২৫ সদস্যের বিসিবি পরিচালনা পর্ষদ পূর্ণতা পেয়েছে।
দেশীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থায় এনএসসি মনোনীত কাউন্সিলর থাকেন দুজন। গত ৬ অক্টোবর বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের পর এনএসসি যে দুজনকে মনোনয়ন দেয়, তাদের একজন ইসফাক আহসানকে নিয়ে সেদিনই বিতর্ক দেখা দেয়। আজ এনএসসির চিঠিতে ইসফাক আহসান ‘পদত্যাগ করেছেন’ বলে উল্লেখ করা হয়।
ব্যবসায়ী ইসফাকের আওয়ামী লীগের পদে থাকা এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়টি আলোচনায় এলে এনএসসি তাঁর জায়গায় রুবাবাকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকায় রুবাবা তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব নেননি।
রুবাবা বর্তমানে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ওরাকলের বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টরের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ও এয়ারটেলের শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন।
রুবাবা দৌলা দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং একই সময়ে বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিকসের বোর্ড সদস্য হিসেবেও যুক্ত ছিলেন।
গ্রামীণফোনে ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত মুখ। সেই সময় গ্রামীণফোন ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর (২০০৩-২০১১), আর ২০০৭ সালে বিসিবির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি স্থাপনেও ভূমিকা ছিল রুবাবার।
আজ বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা রয়েছে। রুবাবা দৌলা সভায় যোগ দিতে পারেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে তিনি ছাড়া মনোনীত অন্য কাউন্সিল ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিক।