স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, ‍“তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে যে রাজস্ব দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আমাদের ব্যয় করতে হয় স্বাস্থ্য খাতে।”

তিনি বলেন, “তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার যদি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে ক্যান্সারসহ তামাকজনিত যেসব রোগ হয়; সেগুলোর পেছনে আমাদের এতো ব্যয় করতে হবে না। রোগ প্রতিরোধে নজর দিতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের গড়তেই হবে।”

শনিবার  (৩১ মে) ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপিকে যমুনায় ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

নূরজাহান বেগম বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন’ (ডব্লিউএইচও এফসিটিসি)-এ আমরা স্বাক্ষর করেছি, অথচ একইসঙ্গে তামাক কোম্পানিগুলোর বোর্ডেও সরকার আছে যাতে তাদের ব্যবসা ভালোভাবে চলে। এই বৈপরীত্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের এসব কথা স্পষ্টভাবে বলা উচিত। এখন যদি আমরা এসব বলতে না পারি, তাহলে আর কখনোই পারব না।”

তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের শোষণ করছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, “তারা আমাদের শ্রমিকদের শোষণ করে, দেশের মাটি, আলো-বাতাসে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।”

তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কার্যকর করতে হলে সংশোধন করতে হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। তামাক কোম্পানিগুলো কোমলপ্রাণ কিশোর-তরুণদের নানা উপায়ে তাদের পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করছে, নানা রকম বাধা সৃষ্টি করছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এসব বাধা মোকাবিলা করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে দেশকে তামাকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।”

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ হলেও তামাক কোম্পানিগুলো দেশে উৎপাদনের চেষ্টা করছে। তাদের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের শোষণ করা হচ্ছে। তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন বাংলাদেশ সরকার তামাক কোম্পানির টাকায় চলে—এটি ভুল তথ্য। আমাদের সরকার চলে জনগণের টাকায়।” 

তিনি বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো সাধারণত নদীর পাশের উর্বর জমিতে তামাক চাষ করে, এতে বনজ সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মাছের প্রজনন হ্রাস পাচ্ছে, গরু পালনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও নারীদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমি আশা করি, আমাদের তরুণরা এই ধ্বংসযজ্ঞ রুখে দেবে।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.

মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “সব নেশার প্রবেশদ্বার হচ্ছে ধূমপান। তামাক কোম্পানিগুলো গবেষণা করে তাদের বাজার তৈরি করে, অথচ আমরা আমাদের সন্তানদের রক্ষায় তেমন উদ্যোগ নিচ্ছি না। ধূমপানবিরোধী লড়াইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা থাকা উচিত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তামাকবিরোধী বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, পাঠ্যপুস্তকে একটি প্যারাগ্রাফও নেই—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আট-দশ বছর বয়স থেকেই শিশুদের শেখাতে হবে, ধূমপান শরীরে কী ধরনের ক্ষতি করে।”

তিনি বলেন, “তামাক কোম্পানির প্রভাব ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের ওপরও পড়ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শক্ত অবস্থান নিতে হবে।”

স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন- রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরসহ অন্যরা।

আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় অবদান রাখায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সম্মাননা ২০২৫’ প্রদান করা হয়।

ঢাকা/এএএম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট উপদ ষ ট আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বে এখনো ১২১ কোটি মানুষ ধূমপান করে: প্রতিবেদনের তথ্য

করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের নানা দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। এসব বাধার কারণে অন্তত ৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়ার সুযোগ হারিয়েছে। আজ শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৫৭টি তামাকবিরোধী সংগঠন এই প্রতিবেদনকে সমর্থন করেছে।

২০২৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তামাক নিয়ন্ত্রণ সনদে ১৬৮টি দেশ সই করে। এতে ২০১০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপান ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

২০২৪ সালে এই লক্ষ্যপূরণের সময়সীমা আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। কারণ, নানা সংকটে অনেক দেশ এ–সংক্রান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ ও মনোযোগ দিতে পারেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে; কিন্তু ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমানোর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। ফলে বিশ্বজুড়ে এখনো প্রায় ১২০ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ ধূমপান করছেন। অথচ চলতি বছরের মধ্যে তা কমিয়ে ১১১ কোটি ২৪ লাখে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে জমা দেওয়া হয়েছে, যারা বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো দেখভাল করে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ কানাডা (এএসএইচ কানাডা)। এতে ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডস, ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-সহ ৫৭টি সংগঠন সমর্থন দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তামাক নিয়ন্ত্রণের গতি বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে ধূমপানজনিত রোগে ‘লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু’ হতে পারে।

জাতিসংঘ আগেই বলেছে, অর্থের সংকট, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং মহামারিজনিত সমস্যার কারণে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের বেশির ভাগের অগ্রগতি থমকে গেছে। এসব লক্ষ্যের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, ক্ষুধামুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন অন্যতম।

এএসএইচ কানাডার প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়ানো ও ধূমপান নিষিদ্ধকরণ অন্যতম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই উপদেষ্টার কাছে আজ স্মারকলিপি দেবেন সচিবালয় কর্মচারীরা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২ জুন ২০২৫)
  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের কিছু প্রভিশন অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে: উপদেষ্টা ফাওজুল
  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের কিছু প্রভিশান অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে: উপদেষ্টা ফাওজুল
  • অধ্যাদেশের কিছু বিধানের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে: উপদেষ্টা ফাওজুল
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১ জুন ২০২৫)
  • নানা আয়োজনে বাকৃবিতে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৩১ মে ২০২৫)
  • বিশ্বে এখনো ১২১ কোটি মানুষ ধূমপান করে: প্রতিবেদনের তথ্য