দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের মাঝারি আয়তনের গ্রাম কাডাভেন্ডি দেখতে ভারতের প্রায় সাত লাখ গ্রামের মতোই। কাঁচা-পাকা রাস্তা, কিছু বাড়ির সিমেন্ট ঝরে ইট বেরিয়ে পড়েছে, কিছু বা আবার চুনকাম করা। এই বাড়িগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লাল স্তম্ভ আর এটাই কাডাভেন্ডির সঙ্গে অন্য গ্রামের তফাত।

১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে তেলেঙ্গানায় যখন স্বাধীনতা–উত্তর ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ হয়, তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা বামপন্থী বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়েছেন; যখন মারা গেছেন, তখন তাঁদের মরদেহ আনা হয়েছে কাডাভেন্ডিতে। ১০-১২ ফুটের লাল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তার মাথায় কাস্তে-হাতুড়ি লাগিয়েছেন গ্রামের মানুষ। ১৯৪৬-এর আন্দোলনের নেতা ডোড্ডি কোমারাইয়ার স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে গ্রামের মাঝখানে, যেখানে গুলি করা হয়েছিল কোমারাইয়াকে। তাঁর মৃত্যু দিয়ে শুরু হয় প্রথম তেলেঙ্গানা সশস্ত্র বিদ্রোহ।

শেষ মরদেহটি গ্রামে এসে পৌঁছেছে সপ্তাহখানেক আগে। এটি ভারতের নিষিদ্ধ ও সশস্ত্র দল, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মাওবাদী) নেত্রী গুমুডাভেল্লি রেণুকার। মাওবাদীদের ঘাঁটি অঞ্চল ছত্তিশগড়ে রাজ্য কমিটির সদস্য এবং মুখপাত্র ছিলেন ৫৪ বছরের রেণুকা। তিনি মারা গেছেন ৩১ মার্চ। তাঁর স্মৃতিতে রেণুকার পরিবার কাডাভেন্ডিতে বানাচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ, জানালেন রেণুকার ছোট ভাই রাজাশেখর।

গত সপ্তাহে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদ থেকে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে রাজাশেখর বলেন, ‘দিদির শহীদবেদি বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। উচ্চতা হবে মোটামুটি দুই মিটার, ওপরে থাকবে কাস্তে-হাতুড়ি। স্তম্ভের মাঝখানে, চোখের উচ্চতায় একটা কালো পাথর বসিয়ে তার ওপর নাম খোদাই করে দেব।’

ভারতে প্রায় দেড় বছর ধরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযান চালাচ্ছে, তাতে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রেণুকা ছাড়াও এঁদের মধ্যে একাধিক শীর্ষস্তরের নেতা-নেত্রী রয়েছেন, যাঁদের অন্যতম সিপিআই-মাওবাদীর সর্বোচ্চ নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক নামবালা কেশভা রাও। ২১ মে রাওয়ের মৃত্যুর পর ধরে নেওয়া হচ্ছে যে ছত্তিশগড় রাজ্যে মাওবাদীদের শেষের শুরু হয়ে গেছে। সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ভারতে মাওবাদীদের অস্তিত্ব থাকবে না।

২০০৪ সালে ভারতের দুটি প্রধান সশস্ত্র দল এক হয়ে তৈরি হয়েছিল সিপিআই-মাওবাদী। কিন্তু ভারতে সশস্ত্র মাওবাদী বা নকশালপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৪৬ সালে প্রথম তেলেঙ্গানা কৃষক বিদ্রোহের দুই দশক পর উনসত্তর সালে পশ্চিমবঙ্গে গঠিত হয় সিপিআই-এমএল। শিলিগুড়ির নকশালবাড়িতে কৃষকদের ওপর গুলি চলার কারণে তাদের আন্দোলনকে ‘নকশাল আন্দোলন’ বলে চিহ্নিত করা হয়।

এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর মধ্যে পরপর দুজন সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুসহ একাধিক কারণে পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ভরকেন্দ্র সরে যায় পূর্ব ভারতের বিহারে ও দক্ষিণের অন্ধ্র প্রদেশে। এই সময়ে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তেলেঙ্গানার বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক এন ভেনুগোপাল। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের আন্দোলনের মৌলিক তফাত রয়েছে।

ভেনুগোপাল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন গণসংগঠন তৈরি করে তাদের নিয়ে এগোনোর ওপর জোর দেওয়া হয়নি। সেখানে জোরটা ছিল ছোট ছোট স্কোয়াড গঠন করে শ্রেণিশত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর ওপর। কিন্তু অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় জোর দেওয়া হয়েছিল গণসংগঠনের ওপর। গোপন সশস্ত্র সংগঠন ছিল; কিন্তু গণসংগঠনের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছিল।

ফলে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫—এই সময়ে  দক্ষিণের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। লাখো মানুষ রাস্তায় নামেন সশস্ত্র আন্দোলনের সমর্থনে, শুরু হয় দ্বিতীয় সশস্ত্র তেলেঙ্গানা আন্দোলন। এই পর্যায়ের প্রধান সাফল্যের কথা বললেন ভেনুগোপাল, সমাজের বিরাট একটা অংশকে দূরে ঠেলে রাখা হয়েছিল, ছোট জাত বলে। নকশালপন্থীদের অন্যতম প্রধান সাফল্য এই তথাকথিত ছোট জাতের তকমা সরানো, গরিব ভূমিহীন মানুষকে এটা বোঝানো যে তাঁদেরও সেই একই অধিকার রয়েছে, যা উঁচু জাতের রয়েছে। এ ছাড়া বড় জমিদারের জমি গরিব ও ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করাও বড় সাফল্য। দলিতদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তাঁরা ‘আন্নালু’; অর্থাৎ ‘বড় দাদা’ বা নকশালদের সমর্থক হয়ে পড়েন।

আন্নালুদের প্রতি সহমর্মিতার কারণে তেলেঙ্গানা থেকে সরে যাওয়ার তিন দশক পরও শহীদের মরদেহ গ্রামে এলে হাজারে হাজারে মানুষ ভিড় করেন, যেমন করেছেন গত মাসে রেণুকাকে শ্রদ্ধা জানাতে, কাডাভেন্ডিতে তৈরি হয় শহীদবেদি, মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় নিয়ম করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ছাত্রনেতা, যিনি এখন তেলেঙ্গানার এক বড় শিল্পপতি, তিনি বলেন, ‘এখানে অনেককে পাবেন, যাঁরা ছাত্রজীবনে নকশালপন্থী ছাত্রসংগঠন করেছেন। আজ কেউ পুলিশের বড় অফিসার, কেউবা ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক নেতাদের তো প্রায় সবাই নকশালপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এঁদের বাপ-ঠাকুরদারা হয়তো ছিলেন তথাকথিত নিম্নবর্ণের ভূমিহীন কৃষক। পুলিশে কাজ করলেও এঁরা জানেন, তাঁদের সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে আন্নালুদের কী ভূমিকা।’

এ কারণে যেমন মানুষ বিপ্লবীদের মরদেহে মালা দেন, তেমনি মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারের অস্ত্রবিরতির দাবিতে তেলেঙ্গানায় মিছিল-জমায়েত করেন; যেমন আজকাল করছেন। এই জমায়েতে তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী থেকে ১০টি বামপন্থী সংগঠন আছে। এটাই দেখায় নকশাল আন্দোলনের শিকড় দুই রাজ্যে কতটা গভীর এবং বিস্তৃত, বললেন ভেনুগোপাল।

তারপরও পরাজয় তেলেঙ্গানায়

এত কিছুর পরও আটের দশকের মাঝামাঝি তেলেঙ্গানায় নকশালরা বোঝে, তারা হারতে চলেছে। নকশাল দমন অভিযান শুরু হয়। এরপরের ১০-১৫ বছরে অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এখানেই প্রশ্ন; এত কাজ করে অন্ধ্র প্রদেশ বা তেলেঙ্গানা থেকে কেন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন নকশালপন্থীরা?

এর একটা ব্যাখ্যা ২০১০ সালে দিয়েছিলেন চাম্বালা রবিন্দার। সে সময় আমি যখন ছত্তিশগড়ের বস্তারে মাওবাদীদের শিবিরে ৩৪ দিন ছিলাম, তখন রবিন্দার আমাকে তাঁদের প্রশিক্ষণশিবির ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। তিনি সে সময় সিপিআই-মাওবাদীর অন্যতম শীর্ষ সেনানায়ক ছিলেন; একাধারে দ্বিতীয় গেরিলা ব্যাটালিয়নের প্রধান এবং অন্যদিকে নর্দান মিলিটারি কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন।

চাম্বালা রবিন্দার বলেছিলেন, ‘তেলেঙ্গানাতে ভালো কাজ করলেও, সামরিক সামর্থ্য গড়ে তুলতে পারিনি। সামান্য ধাক্কাতেই ভেঙে পড়েছিলাম। তাই ছত্তিশগড়ে গোড়া থেকেই (১৯৮০ সাল থেকে) জোর দিয়েছিলাম ঘাঁটি অঞ্চল (বেজ এরিয়া) এবং “কমান্ড স্ট্রাকচার” গড়ে তোলার ওপর। সেই কারণে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছি।’

গত সপ্তাহে আবার আমি তাঁকে ফোন করেছিলাম। রবিন্দার এখন হায়দরাবাদের এক কলেজে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। ২০১৪ সালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তিনি প্রথমে বললেন, মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ছে। পরে স্বীকার করলেন, ২০১০ সালে তাঁর পর্যবেক্ষণে ভ্রান্তি ছিল। তিনি বলেন, সমাজের পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের হাতে মুঠোফোন, সবাই ফেসবুক দেখছেন। এই অবস্থায় জঙ্গলের ভেতর থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই এখন তাঁর মনে হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা

রবিন্দারের মতো প্রায় এই একই কথা বললেন আরও একজন; এম এ গণপতি। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরপরই মাওবাদীদের মোকাবিলায় একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নেওয়া হয়েছিল। ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নকশাল দমন বিভাগের যুগ্ম সচিব হিসেবে পরিকল্পনার খসড়া করেছিলেন গণপতি। ২০২৪ সালে বিশেষ বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি অবসর নেন।

গণপতির মুখেও সামাজিক পরিবর্তনের কথা। তিনি বললেন, ‘মাওবাদীরা একটি আদর্শভিত্তিক দল। সেই আদর্শ দিয়ে আর তারা সংগঠনে কম বয়সীদের টানতে পারছে না। মুঠোফোন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের প্রভাবিত করছে, পৃথিবী প্রসারিত হচ্ছে। তারা সশস্ত্র বিপ্লবে আসছে না। দলে যোগদান কমছে, মাওবাদীদের পতন অনিবার্য।’

গণপতির দ্বিতীয় যুক্তি ছিল, সামরিক কৌশলগত। মাওবাদীদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিশেষ বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক। তাঁর মতে, ছত্তিশগড়ের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে রাজ্য পুলিশ শক্তিশালী হয়ে উঠলেও, নানা কারণে ছত্তিশগড়ে হয়নি। এই পরিস্থিতি কিছু বছর আগে পাল্টাতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী ‘হোল্ডিং অপারেশন’ শুরু করে; অর্থাৎ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা বা দখল করা অঞ্চল ধরে রেখে একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, যাতে পুলিশ কাজ করতে পারে। তারা অভিযানের সময়ে অঞ্চলও ঘিরে রাখে, যাতে ক্যাডাররা পালাতে না পারে। অন্যদিকে রাজ্য পুলিশ গঠনমূলকভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এবং বিশেষ বাহিনী অভিযান চালায়। বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের কারণেই মাওবাদীদের শক্তিক্ষয় শুরু হয়।

রাজনৈতিক ফ্রন্টে, অতীতে যে অঞ্চলে তারা শক্তিশালী ছিল, সেখান থেকে তারা জনসমর্থন জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। গণভিত্তি ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকে থাকতে পারে না, বলেন এম এ গণপতি। তাঁরই লেখা ‘অ্যাকশন প্ল্যানে’ আরও বলা হয় মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে বাড়তি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্রের জোগান বাড়ানোর কথা।

রাজ্য ও কেন্দ্রের বাহিনী এবং সরকারের মধ্যে তথ্যের আদান–প্রদান বাড়ানো এবং মাওবাদী অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর শিবির সুরক্ষিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের, বিশেষত রাস্তা নির্মাণের কথাও বলা হয়। এর সঙ্গে চাম্বালা রবিন্দার যোগ করেন, অসংখ্য পার্টি কর্মীর আত্মসমর্পণের কথা। তিনি বলেন, ‘এঁরা রাজ্য পুলিশে যোগ দিয়ে বড় বিপদে ফেলেছেন মাওবাদীদের।’

এরপরও বস্তারের জনপ্রিয় দল সিপিআই-মাওবাদী। ভেনুগোপালের কথায়, এর প্রধান কারণ, ৪০ বছর ধরে সেখানে অরণ্য অঞ্চল, বিভিন্ন খনি এবং আদিবাসীদের জমি দখলের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের আন্দোলন। জল-জঙ্গল-জমিতে প্রাথমিক অধিকার অঞ্চলের আদিবাসীদের, বহুজাতিক মাইনিং সংস্থার নয়। এ নিয়ে মাওবাদীরা দীর্ঘ আন্দোলন করেছে। এই কারণেই মানুষ তাদের সঙ্গে জুড়েছেন, মাওবাদীরা টিকে থাকতে পেরেছে এত দিন, বলেন ভেনুগোপাল।

‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’

কিন্তু ওই যে ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’, সেটা সরাসরি অস্বীকার করছেন না কেউই; এমনকি যাঁরা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাঁরাও। একসময় মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমন্বয়ক বললেন, সামাজিক ন্যায়ের আন্দোলন থেকে সেনাবাহিনী গঠন, এই সবকিছু করতে পারলেও আন্দোলনের একটা সার্বিক রাজনৈতিক চেহারা দেওয়া যায়নি। আন্দোলন প্রসারিত হয়নি, অরণ্য অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।

কেন এটা হয়েছে, তারও তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, কর্মীদের কল্পনার কেন্দ্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি ‘মুক্ত অঞ্চল’ (লিবারেটেড জোন) গড়ার চেতনা রয়েছে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে জনযুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্য বা দেশ দখলের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা ভারতে আর সম্ভব নয়। কারণ, খুব স্বল্প অঞ্চলেই রাষ্ট্র এতটা শক্তিহীন, যেখানে মুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব। আর যদি এমন জায়গা থাকে, যেখানে রাষ্ট্র দুর্বল, তাহলে মাওবাদীরা সেখানে পৌঁছানোর পরই রাষ্ট্র সেখানে শক্তি বাড়াবে। আন্দোলনকারীরা পিছিয়ে পড়বেন, বললেন ওই সাবেক সমন্বয়ক।

ভেনুগোপালও বললেন মুক্ত অঞ্চল গড়ে সেখান থেকে অভিযান চালানোর নীতি যেভাবে ছয়ের দশকে বাস্তবসম্মত বলে মনে হতো, এখন আর তা হচ্ছে না। তবে সে ক্ষেত্রে মাওবাদীদের নির্বাচনে আসা উচিত কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে ভেনুগোপাল বলেন, এ বিষয়ে চর্চা থামেনি। এটা কীভাবে করা উচিত, তা স্পষ্ট নয়। মানুষের ওপর যত দিন রাষ্ট্র অত্যাচার চালিয়ে যাবে, তত দিন গোপন সশস্ত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে না। কিন্তু প্রকাশ্য সংগঠনের সঙ্গে কীভাবে তা করা সম্ভব, এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। বিতর্ক অব্যাহত থাকবে, আন্দোলন তার পথ খুঁজে নেবে।

মাওবাদীদের ২০০৭ সালের রাজনৈতিক নথিতে কিন্তু এখনো আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও জেদং–এর সেই একশো বছর আগের তত্ব লেখা রয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় মুক্ত অঞ্চল গঠন করে গ্রাম থেকে শহরে আক্রমণ হানতে হবে। এই নথি কবে সংশোধন করা হবে বা আদৌ হবে কিনা সেই প্রশ্ন অনেক পিছিয়ে গিয়েছে আপাতত দলের অবশিষ্টাংশকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে। মাওবাদী আন্দোলনের সদস্য-সমর্থকদের অতএব অপেক্ষায় থাকতে হবে।

শুভজিৎ বাগচী  প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন সশস ত র র জন ত ক রব ন দ র স গঠন র সরক র র ক জ কর ন কর ছ স তম ভ প রথম বলল ন নকশ ল মরদ হ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশে জোর সেনাপ্রধানের

কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে জাতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, এই নেতৃত্বই দেশকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে তিন সপ্তাহব্যাপী স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপ প্রশিক্ষণ ক্যাপস্টোন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সেনাপ্রধান ক্যাপস্টোন ফেলোদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন।

এই কোর্সে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ৪৫ জন ফেলো অংশগ্রহণ করেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতি গঠনের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশলগত নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য গতিশীল ও সংস্কারমুখী নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করে সেনাপ্রধান বলেন, বিদ্যমান পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নতুন জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্যাপস্টোন কোর্স কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি, সহযোগিতা ও জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এনডিসি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক বলেন, ‘ক্যাপস্টোন কোর্স জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বস্তুনিষ্ঠ সংলাপ ও একীভূত চিন্তাধারার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। এতে অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয়, চিন্তাশীল ও সশ্রদ্ধ অংশগ্রহণ তাদের কৌশলগত ও মননশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের মেলবন্ধন তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।’

ন‍্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাপস্টোন কোর্স ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ পরিচালিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কোর্স। এই কোর্সের লক্ষ্য কৌশলগত সচেতনতা বৃদ্ধি, সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনার বিকাশ, আন্তসংস্থার সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার নেতৃত্ব পর্যায়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নবিষয়ক সমন্বিত ধারণা গড়ে তোলা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, এনডিসির ফ্যাকাল্টি ও স্টাফ অফিসার এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ