গোপালগঞ্জের কামারেরা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন তৈরি করছেন পশু কোরবানি দেয়ার বিভিন্ন অস্ত্র। ঈদের আগের কয়েক দিন কর্মব্যস্ত থাকেন তারা। মানুষও নতুন অস্ত্র কেনা ও পুরাতন অস্ত্রপাতি ধার করাতে ভিড় করছেন।

কয়েকটি কামারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে পিটানোর টুং টাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। কামারদের কেউ হাঁপর টানছেন, কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দা, বটি, ছুরিসহ কোরবানির গোশত কাটার সরঞ্জাম তৈরি করছেন। 

কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। কোরবানির পশু কাটতে ছোরা, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রের দরকার হবে। এর জন্য কামারদের দারস্থ হচ্ছে মানুষ। 

আরো পড়ুন:

৩১ মণের ‘সান্ডা’ কিনলে ‘পান্ডা’ ফ্রি

এক বছর পর ঘরে ফিরল ৯ ছাগল!

কামারের তৈরি করা ছোরা, চাপাতি ও ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র মান অনুযায়ী কেজি দরে, আবার পিস হিসাবেও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকারভেদে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এখন কামারদের আয়ও বেড়েছে।

মানুষজনও ছোরা, চাপাতি ও ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র কিনতে ভিড় করছে। আবার কেউ পুরনো অস্ত্র ধার দিতে নিয়ে আসছেন।

ছুরি বানাতে আসা হাবিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি প্রতি বছরই কোরবানি দেই। এ বছরেও দেবো। একটু আগেই চাপাতিতে শান দিতে এসেছি। এখন একটা ছুরি দরকার, তাও বানাবো।’’

ক্রেতা হায়াত আলী বলেন, ‘‘প্রতিবছর নতুন অস্ত্র বানানোর পাশাপশি পুরাতন অস্ত্র শান (ধারালো) দিতে আসি। জেলার চন্দ্রদিঘলীয় মাদ্রাসা, গোপীনাথপুর মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় পশু কোরবানি দেয়া হবে। এসব পশু কোরবানি দেয়ার জন্য অস্ত্র তৈরি করতে এসেছি।’’

কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া বাজারের কর্মকার কেশব ভক্ত বলেন, ‘‘এক সময় কামারদের কদর ছিল। বর্তমান আধুনিক মেশিনে যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির চাহিদা কমছে। কোরবানির ঈদের সময় কিছু কাজ হলেও সারা বছরই কষ্টে চলতে হয়। যে কারণে অনেকে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। এ সময় রোজগার ভালো হয়।’’ 

কামারপল্লীর খোকন কর্মকার জানান, ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতার চাপও বাড়ছে। কেউ চাপাতি, কেউ ছোরা, কেউ দা-বটি বানাতে ভিড় করছেন। কাজের চাপ থাকায় খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম ছেড়ে দিতে হয়েছে। সময়মতো ক্রেতাদের হাতে তাদের অর্ডার দেয়া সরঞ্জাম তুলে দিতে হবে।

কানাই কর্মকার জানান, অনেকেই পুরনো অস্ত্র শান দেয়ার জন্য নিয়ে আসছেন। আর নতুন অস্ত্রও বিক্রি হচ্ছে। সারা বছর টুকটাক কাজ করে কোনোভাবে সংসার চলছে। ঈদে কিছুটা বাড়তি আয় হয়। 
 

ঢাকা/বাদল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গর ক রব ন র হ ট সহ ব ভ ন ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ