আর আমাদের
ডানায় আগুন ধরে গেলে
মাধ্যাকর্ষণ আমাদের পরাজিত করে—
পতনোন্মুখ উড়ালে উড়ালে
পৃথিবীর পৈঠায় পতিত হতে হতে জানা হয়—
পালক গজাবে না কখনো আমাদের ডানায় ডানায়
(আর আমরা কখনো উড়তে পারব না)
আর আমাদের ছিল এক মরিয়া স্বর্গধারণা
সেখানে যা চাই, তা–ই
যখন চাই যেমন
যেমন চাই তেমন
সব পাওয়া পেয়ে যাওয়ার এক ভয়াবহ মুহূর্ত
অথচ
ইচ্ছের বাইরেও আছে তোমার এক প্রগাঢ় উপস্থিতি
শুধু বিশ্রামে সে উপস্থিতি পরিপূর্ণ
আর সে ভালোবাসায়, যে প্রেম চায় না কিছুই
বিশ্রাম এক এমন শুয়ে থাকা
যেখানে তোমাকে কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া যায় না
এমনকি তুমিও জানো না, শুয়ে তুমি আছে, চিরবিশ্রামে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রিকেট ভালোবাসলে বুঝি ফুটবলকে ভালোবাসা যায় না
শূন্য আকাশে তারা খোঁজার ক্লান্তি ছিল বহুকাল। অদূরদর্শীতার কারণে ছিল শুধুই আত্মবিস্মৃতিও। সেখানে ফুটবলের সেই অভিমানের আকাশেই হঠাৎ হামজা, ফাহমিদুল, শমিতদের আগমন। অতীত দৃষ্টান্তে নাড়া দেওয়া মন যেমন চাইছিল শুধু মান রাখার বর্তমানে, তা পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন আকাশ। রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখা চোখ হামজাদের নতুন বাংলাদেশে দেখেছে সেই গতি, সেই ছন্দ, সেই শৈলী। যে ফুটবলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ক্রীড়াপ্রেমীরা এখনা তারাই বুদ লাল–সবুজের ফুটবল নিয়ে। কিন্তু এখানেই একটা চোরা বিভক্তি সর্বজনীন গৌরবের জায়গাটাতে ধাক্কা দিচ্ছে।
যাদের ফেসবুকের দেওয়ালে সারা বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট থাকে, তারা কেন এখন হামজাদের ফুটবল নিয়ে প্রশংসা করবেন? তাদের কি সেই অধিকার আছে? ক্রিকেট মাঠের যে সমর্থককে মুখে বাঘের রঙ মেখে মিরপুরের গ্যালারিতে দেখা যায়, সে কেন আবার জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে গলা ফাটাবেন? লিটন দাস বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হয়ে কেন হামজাদের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে ফেস বুকে স্ট্যাটাস দেবেন?
ফুটবল আর ক্রিকেট নিয়ে ভালোবাসার এই ভাগাভাগি নতুন এক প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্ম দিচ্ছে। যেখানে একদল শুধুই ফুটবল হলে অন্য দল অবশ্যই ক্রিকেট! কিন্তু যেখানে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দুই দলই যখন লাল-সবুজের হয়ে খেলতে নামে, বুকে হাত রেখে জাতীয় সঙ্গীত গায় সেখানে দুই খেলাকেই এক সঙ্গে ভালোবাসলে কী ক্ষতি কে জানে।
তবে এটা সত্য যে ফুটবলের এই মধু মৌসুমে মৌমাছির আনাগোনা বেড়েছে। যে ক্রীড়া সাংবাদিককে বছরের পর বছর ফুটবলের সঙ্গে থেকে খেলার পাতায় সিঙ্গেল কলাম পাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়েছে, তাকেই এখন তিনটির বেশি রিপোর্ট পাঠাতে হয়। খোঁজ নিতে হয় হামজার হবিগঞ্জের গ্রামের। এই ব্যস্ততা তার আনন্দের। সংবাদ সম্মেলনে তাই চেয়ার না পেয়ে মাটিতে বসে থাকতেও তার আপত্তি নেই।
এটাও অস্বিকার করার উপায় নেই যে, নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেট যখন খেলার পাতার বেশির ভাগ জায়গা দখল করতে থাকে তখন থেকেই একটা অবহেলাও বুঝি ছিল ফুটবলের প্রতি। তা নিয়ে নিজেদের অজান্তেই একটা আত্মম্ভরী ভাব এসে গেছে কিছু ক্রিকেট লিখিয়ের মধ্যেও। অনেকেই ধরেই নিয়েছে ক্রিকেট দলের হার জিতের মধ্যেই তারও সাফল্য-ব্যার্থতা জড়িয়ে!
ওই সময়টাতে ক্রিকেটের জেট গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কারণ যেমন ছিল তেমনি ক্লাব ফুটবলে ভাটার টানও ছিল। অঢেল অর্থে তখন অনেক প্রভাবশালী ক্লাবের সভাপতি পদ কিনে নিয়েছেন। আবাহনী-মোহামেডানের মতো সমর্থক গোষ্ঠিদের ক্লাব সেই সব হঠাৎ ‘বড় লোক’ হয়ে ওঠা ক্লাবের কাছে হেরে গেছে। সেই তারাই ক্রিকেটে এসেছিল জোয়ারের টানে। ক্রিকেটে এখন জাতীয় দল খারাপ সময় পার করছে, সমর্থকরাও ব্যথিত তা নিয়ে। ‘ক্রিকেটের দিন শেষ’- বলছেন তারা অভিমানে। তবে এটাও মানতে হবে যে ফুটবলে এখন যে জোয়ার এসেছে তা কেবলই জাতীয় দল কেন্দ্রীক। এর স্থায়িত্ব নির্ভর করছে ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয়তার ওপরই।
এক সময়ের রক্সি, সাব্বির, মুন্না, রুমি, আসলামরা জনপ্রিয় হয়েছিলেন ক্লাব ফুটবল খেলেই। হামজার আজ যে বৈশ্বিক পরিচিত তাও কিন্তু তার ক্লাব লেস্টার সিটি দিয়েই। বছরে জাতীয় দলের হয়ে পাঁচ-ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তারকারা। সেখানে ক্রিকেটে জাতীয় দলের খেলা থাকে অন্তত পনেরো থেকে কুড়িটা। এদিক থেকে ফুটবলের চেয়ে নিশ্চিত অ্যাডভান্টেজ ক্রিকেটের। তাহলে কী জাতীয় দলের ক’টি ম্যাচ ঘিরেই শুধু জোয়ার চলবে দেশীয় ফুটবলে?
এভাবে ভাবলে আবার রাগ, দুঃখ, অভিমান শেষে হতাশা বাসা বাধতে পারে। ফুটবলের প্রতি টান কখনোই কমেনি বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। যদি তাই হতো তাহলে মেসি-রোনালদোকে নিয়ে তর্ক করে একটি প্রজন্ম বুড়ো হয়ে যেতো না, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সঙ্গে নিজেদের আবেগে জড়িয়ে পরতো না। আসলে ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে, যে কোন ধরনের খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসার টান থেকেই তৈরি হয় কৃষ্টি। তাই ভালোবাসায় দ্বন্দ্বের আগুনে ঘি না ঢেলে তা চাপা দিয়ে রাখায় শ্রেয়।