দলীয় রাজনীতির বিশুদ্ধতা ও সংস্কার নিয়ে লন্ডনে আলাপ হবে, আশা ইসলামী আন্দোলনের
Published: 12th, June 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে দলীয় রাজনীতির বিশুদ্ধতা ও সংস্কারের আলাপ প্রাধান্য পাবে বলে আশাবাদ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আশাবাদের কথা জানান ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
আগামীকাল শুক্রবার লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর আলোচনা চলছে।
এ বৈঠক সামনে রেখে ইসলামী আন্দোলনের এই বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই এবং জুলাই অভ্যুত্থানের পর একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রত্যাশা করেছিল জাতি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়েও দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করছে, তা দেশবাসীকে চরমভাবে হতাশ করছে। অতএব দেশবাসী প্রত্যাশা করে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের মধ্যে যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে দলীয় রাজনীতির বিশুদ্ধতা ও সংস্কারের আলাপ প্রাধান্য পাবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি দেশের প্রধানতম দল। ফলে রাজনীতিতে তাদের মতামত ও তাদের দলীয় প্রধানের গুরুত্ব থাকবে, তা স্বাভাবিক। অভ্যুত্থানের পর বিএনপি ও তাদের দলীয় প্রধানের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনলন্ডনে বসছেন মুহাম্মদ ইউনূস–তারেক রহমান, নেপথ্যে আছে খালেদা জিয়ার ভূমিকা১১ জুন ২০২৫তবে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির দলীয় প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে তোড়জোড়, সাক্ষাতে তাঁর ‘অনুমোদন’ এবং সেটা নিয়ে দেশের রাজনীতিতে ও গণমাধ্যমে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে, তাতে দেশের রাজনীতিতে একক ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার অনাকাঙ্ক্ষিত বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে মনে করে ইসলামী আন্দোলন।
শঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গুরুত্বপূর্ণ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নিরাপত্তাসম্পর্কিত বিষয়। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রধানের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি সেই দলের প্রতি ঝুঁকে যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি স্পষ্টত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ভারসাম্য নষ্ট করবে। ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্রের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশা করে।
বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘দেশে তাঁর দল (বিএনপি) যেভাবে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতা করছে, তা নিয়ন্ত্রণে তারেক রহমানকে যথাযথ ভূমিকা পালনে উদ্যোগ নিতে। দেশে পরিশুদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতি চর্চার জন্য প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে পরামর্শ দেবেন বলে আমরা আশা করি। সংস্কারপ্রক্রিয়ায় বিএনপি যেভাবে দ্বিমত করছে, তা নিয়ে কথা বলবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আরও দায়বদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে বলে দেশবাসী আশা করছে।’
আরও পড়ুননির্বাচনের তারিখ নয়, গুরুত্ব পাবে সংস্কার ও বিচার, মনে করে এনসিপি১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র জন ত ক ব এনপ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।