ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত কী কারণে, বিশেষজ্ঞরা যা ভাবছেন
Published: 12th, June 2025 GMT
ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির ৭৮৭ মডেলের। এই মডেলের কোনো উড়োজাহাজের এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এই দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তাতে একে দশকের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বোয়িং ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ ‘ড্রিমলাইনার’ নামেও পরিচিত, যা ১৪ বছর আগে আকাশে উড্ডয়ন করে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি মডেলটির ১০০ কোটি যাত্রী পরিবহনের মাইলফলক উদ্যাপন করেছে।
ফ্লাইট রাডারের তথ্য অনুযায়ী, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি আজ বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেটি ওই বিমানবন্দরের কাছের একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমান পরিবহন খাতে স্বনামধন্য মডেলের এই উড়োজাহাজের এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এভিয়েশন খাতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজের ডানার ফ্ল্যাপগুলোর অবস্থান এ দুর্ঘটনার একটি কারণ হতে পারে।
ফ্ল্যাপ হলো উড়োজাহাজের ডানার পেছনের বর্ধিতাংশ। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ফ্ল্যাপগুলো বের করে দেওয়া হয়। যখনই ফ্ল্যাপগুলো উন্মুক্ত করা হয়, সেই সঙ্গে ডানার সামনের দিকের বর্ধিতাংশ, যা স্ল্যাট নামে পরিচিত, সেগুলো খুলে যায়। ফলে উড়োজাহাজের ডানার পরিসর বেড়ে যায়। এতে উড়োজাহাজ ওপরের দিকে উঠতে সহায়তা পায়। সাধারণত এক হাজার ফুট ওপরে ওঠার পর ফ্ল্যাপগুলো বন্ধ করা হয়। অপর দিকে উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজ ৫০ ফুট ওপরে উঠলেই ল্যান্ডিং গিয়ার বা নিচের চাকা গুটিয়ে নেওয়া হয়।
বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি নিচের দিকে নামছিল এবং একটি ভবনের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে টমাস বলেন, ‘আমি যখন এটা দেখছিলাম, তখনো উড়োজাহাজের নিচের চাকা (আন্ডারক্যারিজ) খোলা ছিল আর ফ্ল্যাপগুলো গুটিয়ে ফেলা হয়েছিল।’
জিওফ্রে টমাস আরও বলেন, এর অর্থ ফ্ল্যাপগুলো ডানার সঙ্গে একই রেখায় অবস্থান করছিল, যেটা উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পর এত দ্রুত এমন করাটা খুবই অস্বাভাবিক।
জিওফ্রে টমাস বলেন, ‘সাধারণত উড্ডয়নের ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে নিচের চাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফ্ল্যাপগুলো গুটিয়ে নেওয়া হয়।’
আরেকজন বিশেষজ্ঞ টেরি টোজার বলেন, ‘ভিডিও দেখে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা কঠিন। তবে মনে হচ্ছে না ফ্ল্যাপগুলো বাইরে বেরোনো অবস্থায় ছিল এবং সেটা হলে তা একটি উড়োজাহাজ সঠিকভাবে উড্ডয়ন সম্পন্ন না করার ব্যাখ্যা হতে পারে।’
সাবেক পাইলট ও বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মার্কো চ্যান বলেন, ‘যদি ফ্ল্যাপগুলো সঠিকভাবে না রাখা হয়, তাহলে সেটা সম্ভাব্য মানুষের ভুলের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু ভিডিওর রেজ্যুলেশন এতটাই কম যে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান
শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।
মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ