গাজীপুর মহানগর বিএনপির দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করার ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। দীর্ঘদিনে কমিটি দিতে না পরায় মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনেক নেতা–কর্মী বলছেন, যেহেতু তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই দুই সদস্যের ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর আগে সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে একটি কমিটি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের ১৫ দিন সময় দিয়েছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে। কিন্তু দুই বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক। এতে নেতা–কর্মীরাও হতাশ।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১১ জুন গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মহানগর ও জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম ওরফে রনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সেখানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরে দুজন বাদে সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শওকত হোসেন সরকার সভাপতি এবং এম মঞ্জুরুল করিম সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর দুই বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করতে পারেননি তাঁরা।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি করতে না পরায় মহানগরের রাজনীতি স্থবির হয়ে আছে। মহানগরের রাজনীতি গতিশীল করা প্রয়োজন। এটি গতিশীল করতে না পারায় গাজীপুর বারে বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয়ের একটি বড় কারণ। বর্তমান কমিটির দুজন পুরোপুরি ব্যর্থ।

মহানগর বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কমিটি নিয়ে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানিয়েছেন, সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁদের নিজেদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক কমিটি ঘোষণার পরপর দেশের বাইরে চলে যান। এ কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা হলেও তা নিয়ে দলের মধ্যে কোনো চাঙ্গা ভাব আসেনি। পরে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা–কর্মীদের চাপের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকলে সেখানে দেখা গেছে, মহানগরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদাভাবে নিজের কর্মীদের নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের বিরোধ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে ৫ আগস্টের পর চিত্র পাল্টে গেছে। দলীয় অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে, যেখানে সভাপতি আর সম্পাদককে একসঙ্গে দেখা গেছে।

মহানগর বিএনপির কর্মী মো.

আজিম উদ্দিন বলেন, এখন তো সবাই বিএনপি। তাই এখন কমিটি করতে গেলে ত্যাগীরা বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের নতুন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তাঁরা যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকায় তাঁদের লোকজন দিয়ে পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা করছেন। এলাকার ময়লা–বাণিজ্য, দখল, টেন্ডার, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা–বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাণিজ্যিক এসব সুবিধা অল্প কিছু নেতা–কর্মী পাওয়ায় বেশির ভাগ নেতা–কর্মীর মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই কমিটি জমা দিয়েছিলাম; কিন্তু অনুমোদন হয়নি। পরে ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পর বলা হলো আন্দোলন–সংগ্রামে যাদের ভূমিকা বেশি ছিল তাদের প্রাধান্য দিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করতে। সেটিও করা হয়েছে। পরে আবার আন্দোলন, ৫ আগস্ট, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সবকিছু মিলিয়ে আবার একটু স্লো হয়ে গেছে। আমাদের হাইকামান্ড একটু ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’

ওই নেতা আরও বলেন, ‘আন্দোলন–সংগ্রামে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে ক্ষোভ কিছুটা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। আমরাও চেষ্টা করছি এবং আমরা দুজনই চাই কমিটিটা যাতে দ্রুত হয়।’

মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা একসঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছি। আমরা অনেক আগেই ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি; কিন্তু সেটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন করা হয়নি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ণ ঙ গ কম ট প রথম আল ক ব এনপ র ক গঠন করত কর ম দ র দ ই বছর ন সরক র গঠন কর র কম ট সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে হাত-পা বেঁধে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে হাত-পা বেঁধে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় রাজু (১৮) ও শরীফ (২৪) নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

শুক্রবার (১৩ জুন) পৃথক স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে রামগতি থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী ও অভিযুক্তরা রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামের বাসিন্দা। 

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বুধবার (১১ জুন) সকালে বাড়ির পাশে ছাগল বেঁধে এসেছিলেন ওই কিশোরী। ঐ দিন দুপুর ১ টার দিকে ছাগলটি আনতে গেলে জুয়েল (১৮), আজাদ (১৭), রাজু (১৮) ও শরীফ (২৪) তার হাত-পা বেঁধে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটির চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা কাউকে না জানাতে অভিযুক্তরা কিশোরীর পরিবারকে নানা হুমকি ধমকি দেয়।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃত শরীফকে উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ও মামলার প্রধান আসামি রাজুকে একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ