সিনেমার গানে খুব একটা দেখা যায় না রক সংগীতশিল্পী মিলা ইসলামকে। এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘ইনসাফ’ সিনেমার প্রমোশনাল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’ গানের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন পর প্লে-ব্যাকে ফিরলেন মিলা। শুধু তাই নয়, এই গানের সুবাদে প্রেক্ষাগৃহেও ঘুরছেন এই শিল্পী।
মিলা বলেন, “শওকত আলী ইমন ভাই হঠাৎ ফোন করে একটি গানের কথা বললেন। পরে গানটি গাইলাম। তখনও জানতাম না এটা ‘ইনসাফ’ সিনেমার প্রমোশনর গান। গানটি রিলিজ হওয়ার পর ভালো সাড়া পাচ্ছি। সেটার জন্য সিনেমা হলে হলে যাচ্ছি। দর্শক শ্রোতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে।”
মিলা বলেন, ‘কয়েকদিন হল দেখছি কামব্যাকের কথা বলে বারবার আমাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। বিষয়টা আসলে এমন নয়। করোনার সময় আমার কিছুটা গ্যাপ ছিল। তাছাড়া সব সময় আমি খবরের শিরোনামে ছিলাম। সেটা খারাপ হোক বা ভালো হোক। গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা যদি আসে তাহলে বলব, আমি কখনোই গায়েব হয়ে যাইনি। গত তিন বছর ধরেই আমি নিয়মিত মঞ্চে পারফর্ম করে যাচ্ছি। এছাড়া দেশের বাইরেও শো করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে ফোক গানকে রিমিক্স করে নতুন কারে গাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও করছেন অনেকে। তবে এটাকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন মিলা।
মিলার কথায়, ‘আমি নিজেও ফোক গানের রিমিক্স করেছি। আমি একটা কথা সবসময় বলি, নতুন হোক বা পুরাতন হোক সংগীত কারো একক সম্পদ নয়। সবার জন্যই একজন শিল্পী সংগীত দিয়ে যায়, যা মৃত্যুর পরও মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে। নতুন করে গান করাটা আমি ইতিবাচকভাবেই নিই। এতে করে নতুন প্রজন্ম পুরনো গানগুলো নতুন করে শোনার সুযোগ পান।’
সাত বছর সিনেমার গান না করলেও এখন থেকে নিয়মিত সিনেমার গান করতে চান তিনি। মিলার ভাষ্য, ‘আগে গান নিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি রি-অ্যাকশন খুব একটা হয়নি। এটা খুব ভালো লাগছে। যদিও আমি কাজ কম করি। বর্তমানে ভালো বাজেটের সিনেমা হচ্ছে। এখন থেকে সিনেমায় আরও ভালো ভালো কাজ করতে চাই।”
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন।
বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে।
আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব।
সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।
আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।
আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।
সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ