জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের দাবি, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন : প্রেস উইং
Published: 15th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে বলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে দাবি করা হয়েছে তা নাকচ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, ‘এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট, তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছে, ‘বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন এক্সে (পূর্বের টুইটার) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে বলে মিথ্যা তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী এই গুজব ছড়িয়েছে। গুজবে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের পতাকায় পাকিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চাঁদ-তারকার ইসলামি প্রতীক যুক্ত করা হবে।
প্রেস উইং জানায়, ডিজিটালভাবে তৈরি একটি কল্পিত পতাকার ছবি ভাইরাল হয়েছে, যার ভিউ সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ এবং এতে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়েছে — বিশেষত পাকিস্তান, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দর্শকদের মধ্যে।
প্রেস উইং বলছে, যে তথ্য হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
১৪ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো গণমাধ্যম এমন পরিকল্পনা বা আলোচনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
ফ্যাক্ট চেক জানায়, ‘এই বিষয় নিয়ে জাতীয়ভাবে কোথাও আলোচনা হয়েছে এমন কোন ভিত্তি নেই কিংবা দেশি বা আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যম এই পদক্ষেপের কথা কোথাও উল্লেখ করেনি।’
বাংলাদেশি ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম 'দ্য ডিসেন্ট' জানিয়েছে: ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার করেন যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ তার পতাকায় পাকিস্তান ও তুরস্কের অনুকরণে ইসলামি চাঁদ যোগ করার কথা ভাবছে’ যা এআই দিয়ে তৈরি করা এবং লেখক রবার্ট ব্রাউনের নামে ৬ জুন প্রকাশিত হয়।
এই ভুয়া প্রতিবেদনটিতে কোনো তথ্যসূত্র, প্রমাণ বা যাচাইযোগ্য উৎস নেই।
‘পাকিস্তানপন্থী এক্স অ্যাকাউন্ট @SouthAsiaIndex নামক আইডি থেকে গত ৪ জুন একটি পোস্ট থেকে এই গুজবের উৎপত্তি হতে পারে। যেখানে প্রথম একটি কাল্পনিক পতাকার ডিজাইন শেয়ার করা হয়। এই একই ছবি পরে সজীব ওয়াজেদের শেয়ার করা ভুয়া প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়।’
প্রেস উইং জানায়, এই মিথ্যাচার পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী বা রক্ষণশীল শ্রোতাদের মধ্যে পরিচয়ভিত্তিক উত্তেজনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে।
এআই প্রযুক্তিতে তৈরি পতাকার ছবি প্রমাণ করে, যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এটাই প্রথম নয়। জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণ-আন্দোলনের পরে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট — যেমন @AsianDigest- মিথ্যাভাবে দাবি করে যে-ছাত্রনেতারা নতুন জাতীয় পতাকার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রেস উইং জানায়, সেই পোস্টটি ৯০ হাজারের বেশি ভিউ পায়, পরে তা সম্পূর্ণভাবে খণ্ডন করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এমন কোনো বিষয় শেয়ার করার আগে তা যেন যাচাই করে নেন।
প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশে জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের পক্ষে কোনো আন্দোলন বা দাবি নেই, এবং এসব কল্পিত গল্প কেবল সত্যকে বিকৃত করে অপ্রয়োজনীয় বিভেদ তৈরি করতে চায়।
প্রেস উইং বলছে, ‘চলুন আমরা সত্য তথ্যকে প্রাধান্য দিই এবং ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকি।’
ঢাকা/হাসান/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র বর ত ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’