ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের ‘ব্যক্তিগত খেসারত’ বর্ণনা করতে গিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকির কারণে তাঁর ছেলের বিয়ের আয়োজন দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত করতে হয়েছে।

আর এমন কথা বলে ইসরায়েলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের দক্ষিণের সোরোকা হাসপাতালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকজন আহত হন। এই ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতালটির সামনে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন নেতানিয়াহু।

সাক্ষাৎকারে যুদ্ধের ব্যক্তিগত খেসারত নিয়ে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে এ যুদ্ধে খেসারত দিচ্ছি। আর আমার পরিবারও এর ব্যতিক্রম নয়।’

আরও পড়ুন‘বলে এক, করে আরেক’: ইরান ইস্যুতে ট্রাম্প শেষমেশ কী করবেন১ ঘণ্টা আগে

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকির কারণে আমার ছেলে আভনার দ্বিতীয়বারের মতো তার বিয়ের আয়োজন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এটি তার বাগ্‌দত্তার জন্যও একটি ব্যক্তিগত খেসারত। আর আমি বলতে চাই, আমার প্রিয় স্ত্রী একজন বীর। সে–ও এই যুদ্ধের একটি ব্যক্তিগত খেসারত দিচ্ছে।’

আভনার নেতানিয়াহুর বিয়ে প্রথমে নির্ধারিত হয়েছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তখন বিয়ের আয়োজন স্থগিত করা হয়। এরপর নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০২৫ সালের ১৬ জুন। ১৩ জুন ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে ইরান পাল্টা হামলা শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের আয়োজনটি দ্বিতীয় দফায় স্থগিত করা হয়েছে।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ‘ব্যক্তিগত খেসারত’ নিয়ে নেতানিয়াহু বক্তব্যে কিছু ইসরায়েলি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে নরক নেমে আসবে: ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী২ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট সদস্য গিলাদ কারিভ এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ইসরায়েলে এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের এখন আর কোনো দিন বিয়ের আনন্দ উদ্‌যাপন করার সুযোগ হবে না, যা একসময় হওয়ার কথা ছিল।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জিম্মি থাকা এক ইসরায়েলির বাবা ইহুদা কোহেন বলেন, তাঁর ছেলের বিয়ে করা তো দূরের কথা, নিশ্বাসও নিতে পারছে না। সে দিনের আলো দেখতে পারছে না। গত ২০ মাসের বেশি সময় ধরে সে মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থায় আছে।

আরও পড়ুনইরান নিয়ে সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে : ট্রাম্প১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনট্রাম্প কেন এই সময়ে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আপ্যায়ন করলেন১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।

শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”

আরো পড়ুন:

হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান  

দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে

বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”

বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”

২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ