আমাদের ধারণা, শতাধিক লোক মারা গেছে: জামায়াত আমির
Published: 22nd, July 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি মারা গেছে বলে ধারণা করছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর সদরের মমিনপুর স্কুলমাঠে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
১৯ জুলাই জামায়াতের ঢাকার মহাসমাবেশে মারা যাওয়া রংপুর মহানগর জামায়াতের রোকন শাহ আলম মিয়ার কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসে মমিনপুর স্কুল মাঠে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির। এ সময় তিনি বলেন, ‘গতকাল ঢাকার উত্তরায় একটি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট মারা গেছেন। সঙ্গে আমাদের ধারণা, শতাধিক লোক মারা গেছে। এরা কারা? এরা কচি কচি বাচ্চা, স্কুলের বাচ্চা। মায়ের বুকের খাঁচা থেকে ওরা চলে গেছে। আমরা এই পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমরা নিজেরা চাঁদাবাজি করব না। কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেব না। এই বাংলাদেশে কোথাও আমাদের লোকেরা ঘুষ হাতে তুলে নেবে না এবং ঘুষের জন্য যে হাত বাড়াবে, তার হাত অবশ করে দেওয়া হবে। এই বাংলাদেশই চাই।’ তিনি বলেন, ‘যদি সরকার গঠনের সুযোগ পাই, তাহলে যাঁরা মন্ত্রী হবেন, আগামী দিনে আমাদের কেউ সরকারি কোনো প্লট নেবেন না এবং বিনা ট্যাক্সের গাড়িতে চলবেন না।’
এর আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে জামায়াতের এক কর্মীর জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন জামায়াতের আমির। ওই কর্মী ঢাকার সমাবেশে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘উত্তরায় সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এ পর্যন্ত ডিক্লিয়ার্ড (ঘোষিত), যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, তাদের সংখ্যা ২৭ বলা হচ্ছে। বাট আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমার ধারণা এবং বিশ্বাস, এই সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। হয়তো একদিন আমরা জানব, ইনশা আল্লাহ। তারা তাদের মা-বাবার বুকের খাঁচা ভেঙে চলে গেছে। এই সন্তানেরা আর তাদের মায়ের বুকে, বাবার বুকে আর ফিরে আসবে না। তারা কবরের বুকে আশ্রয় নিছে। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ তাদের জান্নাতবাসী করুন। তাদের মা-বাবার বুকে আল্লাহ প্রশান্তি দান করুন। এই শোককে সওয়ার তৌফিক দান করুক। আর যারা এখনো বেঁচে আছে, আল্লাহ তাআলা তাদের শিফা দান করুন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সংগঠন হিসেবে কাল থেকে তাদের পাশে আছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা আছেন। ইতিমধ্যে সীমিত সামর্থ্যের ভেতরে আমরা আশা করেছি, যার যেখানে যেটা লাগবে, অর্থ লাগে অর্থ, রক্ত লাগে রক্ত, শ্রম লাগে শ্রম—যেটা যেখানে লাগে, ইনশা আল্লাহ, আমাদের সহকর্মীরা প্রস্তুত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন জ ম য় ত র আম র আম দ র আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।