দেশের মোট জনসংখ্যায় পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে নারীরা। তবে ভোটার তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে তারা। 

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৯.

৩ শতাংশ। অপরদিকে, পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন। ফলে নারী ভোটার পুরুষের চেয়ে  ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৩৬ জন কম।

এই বিপরীত চিত্র সমাজে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বেশি হলেও ভোটার তালিকায় পিছিয়ে থাকার পেছনে রয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে তরুণী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং কর্মজীবী নারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না নানা জটিলতায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার জন এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। দেশে পুরুষের চেয়ে নারী সংখ্যায় প্রায় ৩২ লাখ বেশি।


নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ভোটার তালিকায় তাদের সক্রিয় উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “নারী ভোটার বাড়লে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। তবে সাধারণ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে এখনো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বাধা হয়ে আছে।”

তিনি আরো বলেন, “সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট না থাকায় নারীর রাজনৈতিক সক্ষমতা গড়ে উঠছে না। নারী ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সাধারণ আসনে নারী মনোনয়নের চাপও বাড়বে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, “নারীর আয়ুষ্কাল, শিক্ষার হার এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির ফলে জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের বড় একটি অংশ ভোটার হতে পারছে না।”

তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করতে না পারা, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং সচেতনতার অভাব। এছাড়া, পরিবার থেকে অনেক সময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়াও একটি বড় কারণ।

বলা চলে, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ যারা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চেহারাকে প্রভাবিত করতে পারতেন, তারা এখনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করার প্রথম ধাপেই আটকে আছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, “কর্মজীবী নারীরা ভোটার হতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন ভোটার নিবন্ধনের দিন অফিস থেকে ছুটি নিতে গেলে বেতন কেটে রাখা হয়। দু’দিনের ছুটিতে মাসের বাজেট নষ্ট হয়ে যায়।”

তিনি আরো বলেন, “ ভোট জালিয়াতির কারণেও অনেক নারী ভোটার হতে আগ্রহী নন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীরা এখনো ভোটার নিবন্ধনের জন্য পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারছেন না। এই নির্ভরশীলতা নারীর আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে। ভোটার হতে না পারা মানে কেবল ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়া।”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাড়াতে হলে আগে নারী ভোটার সংখ্যা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নারীর ভোট পাওয়ার কথা ভাবে, কিন্তু তাদের ভোটার করাতেই আগ্রহী নয়।”


নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভা“সমান জনগোষ্ঠী, বেদে ও যাযাবরদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা কাজ করছি। তবে কাউকে জোর করে ভোটার বানানো যায় না।”

তিনি জানান, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

ঢাকা-৮ আসনের ভোটার এবং সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, “নারীকে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আনতে হলে তার আগে প্রয়োজন তাকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। ভোটার না হলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গুরুত্ব দেবে না। আর দলগুলো গুরুত্ব না দিলে নারীরা কখনোই নীতি নির্ধারণে অংশ নিতে পারবে না।”

তিনি আরো বলেন, “নারীর ভোটার সংখ্যা বাড়ানো এখন কেবল একটি প্রশাসনিক কাজ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ। সমাজকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা, সম্পৃক্ততা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য প্রথম ধাপ নারীকে ভোটার করা।”

রাজধানীর রায়েরবাগ মডেল স্কুলের শিক্ষিকা ও ঢাকা-৫ আসনের ভোটার সেলিনা আক্তার রাত্রী বলেন, “বাংলাদেশের নারী সমাজ আজ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করলেও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তারা এখনও অনেকখানি পিছিয়ে। ভোটার তালিকায় নারীর অংশগ্রহণ কম থাকা মানে তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতার সংকোচন। এই ব্যবধান কমাতে হলে প্রয়োজন বহুমুখী উদ্যোগ—যেখানে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি এবং গণমাধ্যম সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “নারীর ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সমান অংশীদারিত্বের প্রতীক। সময় এসেছে এটিকে একটি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে দেখার।”

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র র র জন ত ক র জন ত ক ক জন ত ক দ ভ ট র হত জনস খ য ক ষমত য় দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোরালো ভূমিকা পালন করবে আনসার: ডিজি

আসন্ন জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জোরালো ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা মহড়া ও চতুর্থ ধাপের আনসার কোম্পানি প্লাটুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, আনসার সদস্যরা ভোট কেন্দ্রগুলোর প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের নিরাপত্তা এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করবেন।

ডিজি আরো বলেন, সাধারণত নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে অস্ত্রধারী এবং অস্ত্রবিহীন নারী ও পুরুষ আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি দল মোতায়েন করা হয়। আনসার বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হয়ে কাজ করবে এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা হবে।তিনি

জানান, আনসার বাহিনী প্রথমবারের মতো ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে প্রতিটি সদস্য সদর দপ্তরের সঙ্গে ডিজিটাল সিস্টেমে যুক্ত থাকবেন।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ