জনসংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও ভোটার তালিকায় পিছিয়ে নারী
Published: 17th, September 2025 GMT
দেশের মোট জনসংখ্যায় পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে নারীরা। তবে ভোটার তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে তারা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৯.
এই বিপরীত চিত্র সমাজে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বেশি হলেও ভোটার তালিকায় পিছিয়ে থাকার পেছনে রয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে তরুণী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং কর্মজীবী নারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না নানা জটিলতায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার জন এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। দেশে পুরুষের চেয়ে নারী সংখ্যায় প্রায় ৩২ লাখ বেশি।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ভোটার তালিকায় তাদের সক্রিয় উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “নারী ভোটার বাড়লে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। তবে সাধারণ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে এখনো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বাধা হয়ে আছে।”
তিনি আরো বলেন, “সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট না থাকায় নারীর রাজনৈতিক সক্ষমতা গড়ে উঠছে না। নারী ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সাধারণ আসনে নারী মনোনয়নের চাপও বাড়বে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, “নারীর আয়ুষ্কাল, শিক্ষার হার এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির ফলে জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের বড় একটি অংশ ভোটার হতে পারছে না।”
তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করতে না পারা, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং সচেতনতার অভাব। এছাড়া, পরিবার থেকে অনেক সময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়াও একটি বড় কারণ।
বলা চলে, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ যারা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চেহারাকে প্রভাবিত করতে পারতেন, তারা এখনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করার প্রথম ধাপেই আটকে আছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, “কর্মজীবী নারীরা ভোটার হতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন ভোটার নিবন্ধনের দিন অফিস থেকে ছুটি নিতে গেলে বেতন কেটে রাখা হয়। দু’দিনের ছুটিতে মাসের বাজেট নষ্ট হয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “ ভোট জালিয়াতির কারণেও অনেক নারী ভোটার হতে আগ্রহী নন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীরা এখনো ভোটার নিবন্ধনের জন্য পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারছেন না। এই নির্ভরশীলতা নারীর আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে। ভোটার হতে না পারা মানে কেবল ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়া।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাড়াতে হলে আগে নারী ভোটার সংখ্যা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নারীর ভোট পাওয়ার কথা ভাবে, কিন্তু তাদের ভোটার করাতেই আগ্রহী নয়।”
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভা“সমান জনগোষ্ঠী, বেদে ও যাযাবরদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা কাজ করছি। তবে কাউকে জোর করে ভোটার বানানো যায় না।”
তিনি জানান, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
ঢাকা-৮ আসনের ভোটার এবং সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, “নারীকে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আনতে হলে তার আগে প্রয়োজন তাকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। ভোটার না হলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গুরুত্ব দেবে না। আর দলগুলো গুরুত্ব না দিলে নারীরা কখনোই নীতি নির্ধারণে অংশ নিতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন, “নারীর ভোটার সংখ্যা বাড়ানো এখন কেবল একটি প্রশাসনিক কাজ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ। সমাজকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা, সম্পৃক্ততা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য প্রথম ধাপ নারীকে ভোটার করা।”
রাজধানীর রায়েরবাগ মডেল স্কুলের শিক্ষিকা ও ঢাকা-৫ আসনের ভোটার সেলিনা আক্তার রাত্রী বলেন, “বাংলাদেশের নারী সমাজ আজ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করলেও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তারা এখনও অনেকখানি পিছিয়ে। ভোটার তালিকায় নারীর অংশগ্রহণ কম থাকা মানে তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতার সংকোচন। এই ব্যবধান কমাতে হলে প্রয়োজন বহুমুখী উদ্যোগ—যেখানে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি এবং গণমাধ্যম সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “নারীর ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সমান অংশীদারিত্বের প্রতীক। সময় এসেছে এটিকে একটি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে দেখার।”
ঢাকা/এএএম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র র র জন ত ক র জন ত ক ক জন ত ক দ ভ ট র হত জনস খ য ক ষমত য় দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে