৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে কবরস্থান থেকে হাত-পা বাঁধা তরুণকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার
Published: 11th, January 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গা শহরে একটি কবরস্থানের ভেতর থেকে পিঠমোড়া দিয়ে হাত, পা ও মুখ বাঁধা এক তরুণকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে ৯৯৯ নম্বর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সদর থানা-পুলিশ ওই তরুণকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করে।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহবুবা মুস্তারিন বলেন, অচেতন ওই তরুণের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অবস্থা অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক শফিকুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অচেতন ওই তরুণের নাম শরিফুল ইসলাম (২১)। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ভিলিজারপাড়া গ্রামের ফজল করিম ও হোসনে আরা বেগম দম্পতির ছেলে। শরিফুলের পরিবারকে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
শফিকুর রহমান আরও বলেন, সেনাসদস্যদের মতো ছোট করে চুল কাটা অচেতন ওই তরুণের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে সেনাবাহিনীর পোশাক ও ব্যাচ পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শরিফুল তাঁদের কোনো ইউনিটের সদস্য নন। জ্ঞান ফিরে পেলে তাঁর চুয়াডাঙ্গায় আসা এবং হাত, পা ও মুখ বাঁধার ঘটনা ও অচেতন হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ, সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানের ভেতর এক তরুণকে পিঠমোড়া দিয়ে হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানালে তা সদর থানা-পুলিশকে অবগত করা হয় এবং সদর থানা-পুলিশের একটি দল কবরস্থানের ভেতরের বাগান থেকে অচেতন অবস্থায় ওই তরুণকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়।
বিকেলে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় ওই তরুণ শয্যায় শুয়ে আছেন। শরীরে স্যালাইন চলছে। পাশে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় সেনাবাহিনীর দুজন, শফিকুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসক মেহবুবা মুস্তারিন নার্সদের নিয়ে তদারক করছেন।
শরিফুল ইসলামের ভাই আবু তালেব মুঠোফোনে বলেন, শরিফুল সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে বাড়িতে জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার কথা বলে মাসখানেক আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এ জন্য মা-বাবার কাছ থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা নেন। পরে মুঠোফোনে নানা খরচের কথা বলে আরও টাকা নেন। তবে চুয়াডাঙ্গায় কেন গেছেন এবং কার সঙ্গে গেছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।