বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকালে বায়ুদূষণে পঞ্চম স্থানে আছে ঢাকা। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার বায়ুর মান ১৮৬। বায়ুর এই মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ বিশ্বে বায়ুদূষণে ৫৩১ স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা।

বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। সেই সতর্কবার্তায় নগরবাসীর উদ্দেশে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

দেশের অন্য বিভাগীয় শহরের মধ্যে চট্টগ্রামের বায়ুর মান ১০৩, রাজশাহীতে ১৮৬ আর খুলনায় ১৭৭। ঢাকা ও আশপাশের তিন সর্বোচ্চ দূষিত এলাকার মধ্যে আছে হেমায়েতপুর (৩৪২), ইস্টার্ন হাউজিং-২ (৩০২) এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (২৪১)।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.

৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেশি।

বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তা থেকে রক্ষা পেতে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

গত রোববার (৫ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ৪৫২, পরে তা আরও বেড়েছিল। বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হলেই তাকে দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ওই দিন ঢাকার দূষিত ১০টি স্থানের প্রতিটির মানই ছিল দুর্যোগপূর্ণ। এর মধ্যে গুলশানের দুটি স্থানের স্কোর ছিল ৭০০-এর ওপর।

যদি কোনো অঞ্চলে পরপর ৩ দিন ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাই রোমান ৩০০-এর বেশি থাকে বা দুর্যোগপূর্ণ থাকে, তবে সেই অঞ্চলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা।

গত ডিসেম্বরের একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ।

ক্যাপসের গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮। ২০১৬ সালের থেকে এত খারাপ কখনোই হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বায়ুর মান ছিল ১৯৫। গত ৯ বছরে ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২১৯ দশমিক ৫৪। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই মান ৩১ ভাগের বেশি বেড়ে গেছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৬ ভাগের বেশি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক

এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?

এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?

অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?

তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।

তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।

এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।

এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক