কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যে দলের হোক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 12th, January 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোনো অবস্থায় কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যে দলের হোক, যত বড় নেতা হোক।
আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের কুসুমপুর জাগরণী সংসদ খেলার মাঠে কৃষিজ যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আছেন, আপনারা আপনাদের রাজনীতি করেন আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু আপনারা যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, কোনো অবস্থায় আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না। রাজনীতি করেন, দেশের জন্য কাজ করেন।’
পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা কাউকে ছাড় দেবেন না, সেটা আমার ভাই হলেও না। আপনারা অপরাধীদের চার্জশিটে ঢোকান। তারা এমপি হোক বা না হোক, সেটা যে সময় হবে সে সময় দেখা যাবে। এখন আইনশৃঙ্খলায় তাদের কোনো হাত নাই। আমি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলব, আপনারা তাদের (বিএনপি) তেল মারা বন্ধ করেন। আপনারা কঠোর হন। ভবিষ্যতে কে আসবে, সেটা পরে দেখা যাবে। কোনো মৌসুমি নেতারা দেশের জন্য কিছু করে নাই। কৃষকের পাশে দাঁড়ান, কৃষকরাই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।’
কৃষিকাজ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মুন্সিগঞ্জে আলু উৎপাদন বেশি হয়। গত দুই বছর আলুর দামও বেশি হয়েছে। আলুর দাম বাড়ায় এখন সবাই বলছে, আলুর দাম বেশি, আলুর দাম বেশি। কিন্তু গত পাঁচ-ছয় বছর কৃষকেরা আলুতে অনেক লোকসান গুনেছেন। সে সময় এসব বিষয় নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
স্থানীয় কৃষক জনতার উদ্দেশে এই উপদেষ্টা বলেন, এখন দেশে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যায় না। একজন ছেলে যদি প্রবাসে থাকেন, সে দেশে এসে আর মাঠে কাজ করতে চায় না। এটা একটা খারাপ দিক। চা খেয়ে শরীরের ক্ষতি না করে, মাঠে কাজ করে দেশের উৎপাদন বাড়ান।
কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে কৃষি কর্মকর্তা আছেন। তাঁরা যেন কৃষকের পাশে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে না থাকেন। তাহলে কৃষিতে উন্নতি হবে। আমাদের কৃষকেরা আমাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। আমি, আমার সরকারি কর্মকর্তারা যদি কেউ দুর্নীতি করে, সেটি আপনারা ফলাও করে প্রচার করবেন। দুর্নীতিটা কমে গেলে দেশের উন্নতি হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যাঁরা ভবিষ্যতে আসবেন, তাঁরাও সজাগ হবেন। কিন্তু কোনো মিথ্যা সংবাদ প্রচার করবেন না।’
এর আগে সিরাজদিখানের কৃষকদের মধ্যে ৩০টি পাওয়ার টিলার ও ৪০টি শ্যালো মেশিন বিতরণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং ঢাকা ব্যাংক পিএলসির অর্থায়নে কৃষিজ যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।