বগুড়ার শেরপুরে মেসেঞ্জার গ্রুপে বাকবিতণ্ডার জেরে ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে গোলাম হামিম নামের এক চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইকবাল হোসেন সানি নামের আরেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী গোলাম হামিম। এর আগে, গতকাল দুপুরে উপজেলার ধুনট মোড়ে ন্যাশনাল ক্লিনিকে হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে গোলাম হামিম বলেন, ‘‘রবিবার ক্লিনিকে রোগী দেখছিলাম। হঠাৎ ডাক্তার ইকবাল হোসেন সানি তার দলবল নিয়ে এসে ক্লিনিকে হামলা চালায়। এ সময় আমাকে মারধর করা হয়। এতে আমার ডান হাতের কনুই ভেঙে যায় ও বাম কানের পর্দা ফেটে গেছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘তিনি বয়সে আমার বড়। সে যদি একা আসত, শাসন করত কিছু বলতাম না। কিন্তু, সে দলবল নিয়ে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং মারধর করেছে। আমি এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন সানি বলেন, ‘‘গোলাম হামিম আমাদের সিনিয়র ভাইকে (কনসালটেন্ট অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা.

মোমিনুল) ডাক্তারদের মেসেঞ্জার গ্রুপে গালাগালি করে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে মোমিনুল ভাই বিষয়টি আমাকে জানালে আমি গোলাম হামিমকে জিজ্ঞাসা করি, সিনিয়র ভাইকে কেন এমন গালাগালি করেছিস? তোর কী কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে? নাকি কিছু খেয়েছিস। বয়সে সে আমার চার বছরের ছোট। তখন হামিম উল্টো আমাকে গালাগালি করে। আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আমি তাকে দেখা করার জন্য বললে আমাকে তার ক্লিনিকে যেতে বলে। যে কারণে তার ওখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু, কথা বলার সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাই দুটো চড় দিয়েছি। এরপর আর কথা বলার রুচি হয়নি। তাই চলে আসি। এটা আসলে শাসনের মতো। কিন্তু, এখন সে এটাকে অন্যভাবে রঙচঙ দিচ্ছে।’’

শেরপুর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/এনাম/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে শুটকি উৎপাদনের ধুম, রপ্তানির টার্গেট ৪০০ কোটি টাকা

কক্সবাজারের নাজিরারটেকে এখন শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত অনেক মানুষ। সমুদ্রতীরের বিস্তীর্ণ বালুচরে সারিবদ্ধ বাঁশের মাচায় দিনভর শুকানো হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাছ। নভেম্বর থেকে জমে ওঠা শুটকি তৈরির মৌসুম চলবে আগামী জুলাই পর্যন্ত। মৌসুমজুড়ে নাজিরারটেক ও জেলার অন্যান্য উপকূলীয় মহালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সমুদ্রতীরবর্তী প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এ মহালে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রধানত শুটকি উৎপাদন চলে। তবে, বৃষ্টি না থাকলে অন্য সময়েও কিছু উৎপাদন হয়। সাগর থেকে ধরা তাজা মাছ বাঁশের মাচায় ৩ থেকে ৪ দিন সূর্যের তাপে শুকিয়েই তৈরি হয় শুঁটকি। এরপর সেগুলো চলে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কিছু শুটকি রপ্তানির জন্য প্যাকেটবন্দি করা হয়।

নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, সোনাদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আরো তিন শতাধিক শুটকি মহালে সমানতালে উৎপাদন চলছে।

সম্প্রতি নাজিরারটেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০টির বেশি মহালে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, ফাইস্যা, নাইল্যাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। গভীর সমুদ্র থেকে ধরা মাছ এনে জেলেরা বিক্রি করেন এসব মহালে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু নাজিরারটেকেই প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কর্মরত শ্রমিক রশিদা খাতুন (৩২) রাইজিংবিডিকে বলেন, “ভোরে বাসা থেকে এসে সারাদিন মাছ ধুয়ে মাচায় সাজাই। কাজটা কষ্টের হলেও ভালো আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে।”

শ্রমিক নুরুল আমিন (৪১) বলেন, “গভীর সাগর থেকে মাছ এনে মহালে দেওয়া হয়। শুটকি মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি আয় হয় আমাদের।”

আয়েশা বেগম (২৮) বলেন, “প্রতিদিন রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। তারপরও আমরা খুশি, কারণ এখানে নারী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বেশি। মৌসুমে প্রতিদিন যা পাই, তা দিয়ে ঘরের সব খরচ চলে যায়।”

ছাবের আহমদ (৪৫) বলেন, “এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি মাছ শুকানো হয়। শ্রমিকের কাজ অনেক, কিন্তু অভিজ্ঞ হলে দ্রুত করতে পারি। সবাই মিলে কাজ করি, তাই উৎপাদনও বেশি হয়।”

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, “নাজিরারটেকে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ ২০–২৫ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি হয়।”

বাজার ঘুরে দেখা গেছে- লইট্যা শুঁটকি প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, পোয়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাইট্যা ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, কোরাল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা এবং রূপচাঁদা ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আ. ক. ম. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, “প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে অর্ধশতাধিক আড়ত ও প্রায় ২ হাজার ব্যবসায়ী যুক্ত। এখান থেকে প্রতিদিন ২০০ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়।”

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, “গত বছর হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় পোপা শুঁটকি রপ্তানি করে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় হয়। এ বছর উৎপাদন ভালো হলে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।”

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ