বিদ্যালয়ের সংঘর্ষ হাসপাতালে নিয়ে গেল বিএনপি-জামায়াত
Published: 12th, January 2025 GMT
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একটি বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার ৬ নম্বর সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া গ্রামে প্রথম দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গিয়েও দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নাদপাড়া যুবমিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিষয়ে গত ১৮ নভেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর পরই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরোধ দেখা দেয়। এর এক পক্ষে রয়েছেন শৈলকুপা উপজেলা জামায়াতের আমির মতিয়ার রহমান ও অন্য পক্ষে আছেন সারুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নওশের বিশ্বাস। বিদ্যালয়ের নতুন কমিটিতে সভাপতি হতে চান মতিয়ার রহমান। অন্য দিকে নওশের বিশ্বাস সভাপতি করতে চান তাঁর মেয়ে নূরজাহান বিশ্বাস বা ছোট ভাই শামসুদ্দিন বিশ্বাসকে।
নাদপাড়া যুবমিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের ভাষ্য, কমিটি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় সমর্থকদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। এ কারণে রোববার দুপুরে তিনি মতিয়ার রহমানের পক্ষে একটি কমিটি ও নওশের বিশ্বাসের পক্ষে আরেকটি কমিটি প্রস্তাব করেন। উভয় পক্ষ কমিটি দুটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনেই তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জেরে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
সংঘর্ষের সময় অস্ত্রের আঘাতে সেকেন্দার বিশ্বাস, আলিম বিশ্বাস, শাওন বিশ্বাস, বাচ্চু বিশ্বাস, ওমর ফারুক, রফিকুল ইসলাম, রবিউল বিশ্বাস, আনোয়ার, তানভির হোসেন, মাসুদ, মেহেদী, সোহেল, আলিম, রবি হোসেন, শহিদুল ইসলাম, রিপন, মনিরুদ্দিন, মনিরুল ইসলাম, রোজদার আলী, রতন বিশ্বাস, কলিমুদ্দিন, শাহীন, রুদ্রসহ ৩৫ ব্যক্তি আহত হন। তারা এখন শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সংবাদ পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় হাসপাতালে তাদের স্বজন ও নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরা আবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
নওশের বিশ্বাসের ভাষ্য, উপজেলা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কমিটি নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। এ কারণে রোববার দুটি কমিটি প্রস্তাব করেন প্রধান শিক্ষক। দুপুরে তাঁর পক্ষের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে সমর্থকরা বিদ্যালয় থেকে বের হন। এটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় মতিয়ার রহমানের সমর্থকরা বিদ্যালয়ের সামনেই তাদের বাধা দেন। তর্কের এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিলে তাদের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা তাদের বাড়িঘরেও ভাঙচুর চালিয়েছে।
মতিয়ার রহমান দাবি করেন, নাদপাড়া গ্রামের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ তাঁকেই অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু বিএনপির নওশের বিশ্বাস তাঁর পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন। সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোববার দুটি কমিটি প্রস্তাব করেন।
তাঁর অভিযোগ, প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় নওশের বিশ্বাসের পক্ষ থেকে উস্কানিমূলক কথা বলা হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তবে ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
এ সংঘর্ষের সংবাদ পেয়েছেন বলে জানান উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতান আলী। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদ আল মামুন বলেন, নাদপাড়া গ্রামের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। সেখানে উভয় পক্ষের সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ এসে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে।
শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, নাদপাড়া গ্রামের বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই উপদেষ্টার গড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।
বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে গতিরোধ করা, সরকারি কাজে বাধা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে রোববার রাতে গোয়ানঘাট থানায় ১৫০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন থানার এসআই ওবায়েদ উল্লাহ। মামলার পর সোমবার ভোরে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মামলার ৬নং আসামি কালিনগরের দেলোয়ার হোসেন দুলু, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান মিয়া ও ছৈলাখেল অষ্টম খন্ডের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ।
শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তারা ফেরার পথে জাফলং পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিএনপির সংগঠনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার আটকে নানান স্লোগানে বিক্ষোভ করা হয়। ঘটনার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে বহিষ্কার ও জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে শোকজ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সমকালকে জানান, গতকাল রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে। দ্বিতীয় আসামি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সোহেল আহমদ, ওমর ফারুক, সুমন শিকদার, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আব্দুস সালাম ও আব্দুল জলিল।