কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার আমলা ইউনিয়নের বুড়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আমলা ইউনিয়নের বুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ইউনিয়ন জামায়াতের আমির নাসিম রেজা মুকুল ও স্থানীয় বিএনপির কর্মী রাশেদ মাহমুদ নাসিরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। তাঁরা দুজনেই কমিটির আহ্বায়ক প্রার্থী ছিলেন। অ্যাডহক কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহারের জন্য মুকুলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন নাসির। এ নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল শনিবার রাতে মুকুলকে হুমকি দেন নাসির।

এরই প্রতিবাদে আজ বেলা তিনটার দিকে বুড়াপাড়া বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে জামায়াতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদ সভায় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল গফুর উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির কর্মী নাসিরের সমর্থকেরা সেখানে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও উত্তেজনা শুরু হয়। একপর্যায়ে নাসিরের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন হামলা চালান। এতে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৮ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ৬ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ১২ জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার বলেন, বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন জামায়াতের আমিরের নাম দেওয়া হয়েছিল। অথচ বিএনপির নেতা নাসির তার নাম প্রত্যাহার করে নিতে হুমকি দিচ্ছিলেন। এরই প্রতিবাদে সমাবেশ করার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। হামলায় তাঁদের অনেকে আহত হয়েছেন।

মিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহমত আলী রব্বান বলেন, ‘নাসির একসময় ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। এখন তিনি বিএনপির কর্মী। ঘটনাটি যেহেতু স্থানীয় দুই পক্ষের, তাই এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমাম বলেন, হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের মধ্যে একজন বৃদ্ধের অবস্থা গুরুতর। প্রত্যেকে মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ