আজও বেড়েছে বিশ্ববাজারে তেলের দাম, পেরিয়ে গেল ৮০ ডলার
Published: 13th, January 2025 GMT
আজ সোমবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন বাড়ল তেলের দাম। ফলে গত চার মাসের মধ্যে এই প্রথম ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলার পেরিয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এবার মূলত রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও ভারতে রাশিয়ার তেল বিক্রি ব্যাহত হতে পারে, এই আশঙ্কায় তেলের দাম বাড়ছে।
আজ বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৪৮ ডলার বেড়ে ৮১ দশমিক ২৪ ডলারে উঠেছে। তার আগে ৮১ দশমিক ৪৯ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল এই তেলের দাম। গত ২৭ আগস্টের পর এটাই তেলের সর্বোচ্চ দাম। ব্রেন্ট ক্রুডের সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও বেড়েছে। এই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৫৩ ডলার বা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮ দশমিক ১০ ডলারে উঠেছে। এর আগে তা ৭৮ দশমিক ৩৯ ডলারে উঠেছিল।
চলতি জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখের পর এই উভয় জাতের তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত শুক্রবার রাশিয়ার তেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব আছে। এবারের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার গ্যাস কোম্পানি গাজপ্রম নেফট ও সারগাটনেফত গ্যাসও আছে; সেই সঙ্গে আছে রাশিয়ার তেল পরিবহন করা ১৮৩টি জাহাজ। মূলত তেল বিক্রি করে রাশিয়ার যুদ্ধ করার সক্ষমতা যেন হ্রাস পায়, তা নিশ্চিত করতেই বাইডেন প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেলের মূল ক্রেতা চীন ও ভারতের তেল কেনা ব্যাহত হবে। তারা হয়তো আবারও মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনা বাড়াতে বাধ্য হবে। এ কারণে তাদের কেনা তেলের দাম বাড়বে, বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা তেমনটাই মনে করছেন।
বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তেলবাহী ট্যাংকারের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার পর প্রভাব পড়বে রাশিয়ার তেল–বাণিজ্যে। এসব ট্যাংকারের মধ্যে অনেক ট্যাংকার ভারত ও চীনে তেল সরবরাহ করত। এমনকি এগুলোর মধ্যে কিছু ট্যাংকার ইরানের তেলও পরিবহন করত।
এ ছাড়া শীতকালে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। তার সঙ্গে দামও বাড়ে।
দীর্ঘদিন দাম কম থাকার পর ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩৯ মার্কিন ডলারে ওঠে। সে বছর গড়ে তেলের দাম ১০০ ডলারের ওপরে উঠেছিল।
এর পর থেকে দাম অবশ্য কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯৮ মার্কিন ডলারে উঠেছিল। গড় দাম ছিল ৮৩ ডলার। তেলের দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রভাবশালী সংগঠন ওপেকের পক্ষ নানান সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও দাম তেমন একটা বাড়েনি। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও তেলের দামে অতটা প্রভাব পড়েনি। নতুন এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান
ভুলক্রমে সীমানায় ঢুকে পড়ায় পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি বিএসএফের অনুরোধেও কর্ণপাত করছে না পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে পঠানকোট বিএসএফ দপ্তরে স্বামীর সর্বশেষ খবর জানিত ছুটে গেছেন পুর্নমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পরিবার।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পেহেলগাও সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে আটক হন বিএসএফ সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়া পৌরসভার ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। পুর্নম পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি চব্বিশ ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল।
বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে কড়া রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের নিচে আশ্রয় নেন পুর্নম। এ সময় তিনি ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে গেলে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন। এ দিকে ঘটনার পর তিনবার পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে বিএসএফ। কিন্তু তারা পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে দেয়নি।
স্বামীর এমন দুঃসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী। শেষবার হোলির সময় ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন পুর্নম। গত ৩১ মার্চ কাজে যোগ দেন তিনি।
পুর্নমের বাবা ভোলানাথ সাউ জানান, ছেলেকে নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কোনো খবর পাচ্ছেন না। বিএসএফ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে ছেলেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন।
সীমান্তরক্ষীদের ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে দুই বাহিনীর বৈঠকের পরে তাদের মুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। পাক রেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত এই ইস্যুতে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসেছেন বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের প্রতিনিধি দল। কিন্তু মিমাংসা হয়নি।
এরপরই রবিবার পুর্নমের বাড়ি যান বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পুর্নমকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। যদিও মৌখিক কথায় আর ভরসা রাখতে রাজি নন রজনী। এ কারণে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ সোমবার পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তথ্য না পেলে দিল্লি গিয়ে স্বামীর খবর জানতে চাইবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএসএফের পরিচালক জেনারেল দলজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন ঘটনার পরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। এমনকি পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে কমান্ডার স্তরে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুচরিতা/তারা