এইচএমপিভি প্রতিরোধে হিলি ইমিগ্রেশনে মেডিকেল টিম
Published: 13th, January 2025 GMT
দ্য হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপি) প্রতিরোধে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপজেলা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম কার্যক্রম শুরু করে।
আরো পড়ুন: দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত
আরো পড়ুন:
ভারত থেকে এলো ৫ টন জিরা
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর
ভারতে এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় হিলি চেকপোস্টে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
“ভারতে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি, সতর্কতা নেই হিলি স্থলবন্দরে” শিরোনামে গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি.
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এই চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে আজ সকাল থেকে এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি কোন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হবে।”
হিলি ইমিগ্রেশনের ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, “ভাইরাসটি প্রতিরোধে পাসপোর্ট যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারো যদি সর্দি-জ্বর, কাশি, গলাব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ পরামর্শ দেওয়া হবে। যদি কেউ বেশি অসুস্থ হন, তাহলে তাকে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন: কোভিডের মতোই বিপজ্জনক হতে পারে এইচএমপিভি, প্রতিরোধে করণীয়
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, “এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে এই চেকপোস্টে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। মেডিকেল টিম পাসপোর্টধারী যাত্রীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ করলে যাত্রীদের কাস্টমসের কার্যক্রম করা হচ্ছে।”
ইচএমপিভি সংক্রমণ নিয়ে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড ১৯ এর মতোই এই ভাইরাস। বাংলাদেশেও এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান বা সিডিসি’র ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ‘‘এইচএমপিভি কোভিড-১৯ এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস। যার অর্থ হচ্ছে, এই পৃথক দুই ভাইরাসের জীনের গঠন একই। এই ভাইরাসও কোভিড ১৯ এর মতো শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। কিন্তু এই ভাইরাস একই পরিবারের ভাইরাস নয়। সুতরাং কোভিডের টিকা নেওয়া থাকলে বা আগে কখনো কোভিড হলেও আপনার এইচএমপিভির সংক্রমণ হতে পারে। কোভিডের ইমিউনিটি আপনাকে এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে না।”
লক্ষণ কী:
ভাইরাসটির ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ তিন থেকে পাঁচদিন। অর্থাৎ কেউ এতে সংক্রমিত হলে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে তার দেহে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।এই ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে––
১. জ্বর
২.সর্দি/নাক থেকে পানি পড়া/নাকবন্ধ ভাব
৩.হাঁচি/কাশি/গলাব্যথা
৪. চামড়ায় র্যাশ
এই ভাইরাস থেকে যে কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিয়োলাইটিস, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা জটিল রোগে আক্রান্তদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যেভাবে ছড়ায়: শীত ও বসন্তকালে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বেশি আক্রমণ করে। মূলত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। কেউ যদি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে আরেকজনের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান যেমন দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করলে তারপর সেই হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়:
১. বাইরে গেলেই মাস্ক পরা
২. ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া।
৩. হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
৪. আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জন সমাগমস্থল এড়িয়ে চলা।
৫. হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেওয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সঙ্গে সঙ্গে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা।
৬. যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেওয়া।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
৮. সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
যেহেতু এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি তাই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।