অ্যান্টার্কটিকায় বরফ আচ্ছাদিত হ্রদের নিচে জীবাণুর নতুন ইকোসিস্টেমের সন্ধান
Published: 13th, January 2025 GMT
অ্যান্টার্কটিকার অ্যামরফাস ও বোল্ডার ক্লে হিমশৈলর মধ্যে অবস্থিত এনিগমা হ্রদ। এই হ্রদের গড় তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট, শীতকালে যা নেমে যায় শূন্যের নিচে ৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। প্রায় স্থায়ীভাবে বরফাচ্ছাদিত থাকায় আবিষ্কারের পর থেকে হ্রদটিকে পূর্ণ হিমায়িত বলে মনে করা হতো। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় অভিযানের সময় রাডার দিয়ে জরিপ করার সময় হ্রদের বরফের প্রায় ৪০ ফুট নিচে পানির সন্ধান পাওয়া যায়। সেই পানির উৎস খোঁজার সময় সেখানে বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, বায়ুমণ্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও লেক এনিগমার পানিতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু রয়েছে। বেশ কিছু জীবাণু সালোকসংশ্লেষী, যা হ্রদে অক্সিজেন সরবরাহ করে। জীবাণুগুলোর মধ্যে প্যাটেসিব্যাক্টেরিয়ার বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। প্যাটেসিব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকার জন্য কৌশল বদলে ফেলতে পারে। আর তাই হ্রদের পরিবেশ চরম হলেও জীবাণুগুলো নিজেদের মতো করে বেড়ে ওঠার কৌশল বের করে নতুন ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে। কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে হ্রদের জীবন সম্পর্কে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঅ্যান্টার্কটিকার বরফের রং বদলে যাচ্ছে, কেন০৯ জানুয়ারি ২০২৫গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী স্টেফানো উরবিনি জানিয়েছেন, এসব ক্ষুদ্র এক কোষী জীবাণু বড় কোনো কোষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেঁচে থাকে। এ ধরনের জীবাণু আগে কখনো বরফাচ্ছাদিত হ্রদে পাওয়া যায়নি। সাধারণত উচ্চ-অক্সিজেন থাকা স্থানে দেখা যায় না এসব জীবাণু।
বরফাচ্ছাদিত হ্রদের নিচে থাকা পানির উৎস সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, অ্যান্টার্কটিকার অ্যামরফাস ও বোল্ডার ক্লে হিমশৈলর আশপাশে বৃষ্টিপাত কম হয়। তীব্র বাতাস ও সৌর বাষ্পীভবন হয় বলে লেক এনিগমায় পানি থাকার কথা না। আর তাই অজানা কোনো ভূগর্ভস্থ পথের মাধ্যমে হ্রদের নিচে পানি জমা হয়েছে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।