টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধের প্রতিবাদে বাসদের সমাবেশ
Published: 13th, January 2025 GMT
শতাধিক পণ্যে শুল্ক–কর আরোপ, টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ ও ৪৩ লাখ পরিবারের ফ্যামিলি কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। সমাবেশ থেকে গ্রাম-শহরে শ্রমজীবীদের জন্য রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর দাবি জানিয়েছে দলটি।
বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ক্রমাগত মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। সেখানে অর্থবছরের মাঝখানে নতুন করে শতাধিক নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকার। আইএমএফের পরামর্শে এই করারোপের কোনো নৈতিক ভিত্তি বর্তমান সরকারের নেই। এটি শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল।
বজলুর রশীদ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনিয়মের অভিযোগ তুলে সারা দেশে টিসিবির ৪৩ লাখ পারিবারিক কার্ড বাতিল করেছে। এত বেশি পরিমাণ কার্ডে অনিয়মের অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়। উচিত ছিল পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। পাশাপাশি টিসিবির ট্রাক সেল কর্মসূচিও বন্ধ করে দিয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ আরও বিপদে পড়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বাসদ নেতা বজলুর রশীদ।
বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার ইনচার্জ নিখিল দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর নেতা খালেকুজ্জামান, জাকির হোসেন, নাসির উদ্দিন ও রুখসানা আফরোজ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।