শেষ হয়েছে বিপিএলের সিলেট পর্ব। ঢাকা পর্বের মতো চায়ের নগরীতেও রান বন্যা দেখেছে দর্শক। সিলেট পর্বে অনেক কিছুর স্বাক্ষী হয়েছেন দর্শকরা। সাব্বির রহমানের ফর্মে ফেরা থেকে শুরু করে তামিম কাণ্ড, সোহানের কীর্তির সঙ্গে লিটন-তানজিদের ব্যাটে রেকর্ডের ঝড়ও দেখেছে সিলেটবাসী। সব মিলিয়ে কেমন গেল সিলেট পর্বের বিপিএল? দেখে নেওয়া যাক।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইগার্সের মধ্যকার রোমাঞ্চকর ম্যাচ দিয়ে শেষ হয় সিলেট পর্ব। ম্যাচে জয়ের খুব কাছে এসেও নাটকীয়ভাবে রংপুরের কাছে ৮ রানে হেরে যায় খুলনা। এই জয়ের ফলে ৭ ম্যাচের সবকটিতে জিতে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে রংপুর। আর এক ম্যাচ জিতলেই তারা প্লে’অফ নিশ্চিত করবে।

ঢাকা পর্বের পুরোটা সময় হারের বৃত্তে বন্দি থাকা ঢাকা ক্যাপিটালস জয়ের দেখা পেয়েছে সিলেটে এসে। চিটাগং কিংস টানা তিন ম্যাচ জিতে নিজেদের ফর্ম ধরে রেখেছে। উল্টো চিত্র খুলনার, তারা টানা তিন ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়েছে। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্বার রাজশাহী মিশ্র পারফরম্যান্সে জয়ের পাশাপাশি হারের স্বাদও পেয়েছে।  

আরো পড়ুন:

তীরে এসে ডুবলো খুলনা, রংপুরের রোমাঞ্চকর জয়

খুশদীল ঝড়ে রংপুরের স্কোরবোর্ডে ‘হাসি’

সব মিলিয়ে পয়েন্ট টেবিলে দুইয়ে আছে চিটাগং কিংস। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট তাদের। ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ফরচুন বরিশাল। ৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চারে খুলনা। ৬ ম্যাচ করে খেলা সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্বার রাজশাহী ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে আছে টেবিলের পাঁচ ও ছয় নম্বরে। ৭ ম্যাচে মাত্র ১ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে ঢাকা।

ঢাকা পর্বে রান খরায় ভুগতে থাকা লিটন দাস সিলেটে এসে পেয়েছেন রানের দেখা। টানা হাফ-সেঞ্চুরি ও অপরাজিত সেঞ্চুরিতে উঠে এসেছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় চারে। ৬ ম্যাচে তার রান ২৪০। তার ওপরের তিনে আছেন তানজিদ হাসান তামিম (২৪৬), উসমান খান (২৪৯)ও জাকির হাসান (২৫১)। সেরা পাঁচের অন্য নামটি সাইফ হাসান। ৭ ম্যাচে তার রান ২২৮।

বোলিংয়ে সিলেট পর্ব শেষে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন দুর্বার রাজশাহীর তাসকিন আহমেদ। ৬ ম্যাচে তার দখলে ১৪ উইকেট। ৫ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে দুইয়ে আবু হায়দার রনি। ৬ ম্যাচে সমান সংখ্যক উইকেট নিয়ে তিনে তানজিম হাসান সাকিব। সমান ৭টি করে উইকেট নিয়ে পরের দুটি স্থানে আছেন যথাক্রমে রংপুরের খুশদিল শাহ ও শেখ মেহেদী হাসান।

সিলেট পর্বের বিপিএল দর্শকদের মাঝে বেশ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। এই পর্বে পুরনো সাব্বিরকে দেখাটা ছিল প্রশান্তির মতো। ব্যাট হাতে দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছেন নানান কারণে বিতর্কিত এই ক্রিকেটার। চট্টগ্রামের বিপক্ষে অপরাজিত ৮২ রানের পর সিলেটের বিপক্ষে করেছেন ১০ বলে ২৩। দুই ইনিংস মিলিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১২টি!

এছাড়াও, সিলেট পর্বে বরিশালের বিপক্ষে রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান খেলেছেন বিপিএলের ইতিহাসের সেরা ম্যাচজয়ী ইনিংস। শেষ ওভারে ৬ বলে ২৬ রানের সমীকরণের ম্যাচে ৩টি করে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ৩০ রান তুলে বরিশালের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দেন রাইডার্স ক্যাপ্টেন।

এই ম্যাচেই রংপুরের ইংলিশ ক্রিকেটার আলেক্স হেলসের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে আলোচনায় আসেন তামিম ইকবাল। দুই পক্ষই যার যার দিক থেকে বক্তব্য দিয়ে আগুনের আঁচ আরও বাড়িয়ে দেন। হেলসের দাবি ছিল, তামিম তাকে অতীত টেনে খোঁচা দিয়েছেন। তামিমের দাবি, সেরকম কিছুই তিনি বলেননি। উল্টো হেলস বরিশালের জুনিয়র এক ক্রিকেটারকে বাজে ভাষায় স্লেজ করেছেন। যদিও জরিমানাটা তামিমই গুনেছেন এক ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়ে।

সিলেট পর্বে শেষ উত্তাপটা ছড়িয়েছেন ঢাকার দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান। দুজন জোড়া সেঞ্চুরিতে বিপিএলের কয়েকটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটি ২৪১ রান তুলে দুজন তছনছ করেছেন রেকর্ড বই। এই রান বিপিএল তো বটেই, যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যেকোনো জুটিতে সর্বোচ্চ। বিপিএলের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে ঢাকা (২৫৪/১)।

সব মিলিয়ে সিলেট পর্ব ঢাকা পর্বকেও ছাড়িয়ে গেছে। দর্শকরা দেখেছেন পয়সা উসুল করা সব নাটকীয় ও রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এবার চট্টগ্রাম পর্ব মাঠ গড়ানোর পালা। বীর চট্টলায় দলগুলো কতটা বীরত্ব দেখিয়ে রোমাঞ্চ ছড়াতে পারবে, সেটা সময়ের হাতেই তোলা থাকলো।

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ