যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল জিউফ্রের: নতুন বইয়ে তথ্য
Published: 20th, October 2025 GMT
কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের হাতে ‘যৌনদাসী হিসেবেই মারা যেতে পারেন’ বলে আশঙ্কা করতেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে। তাঁর স্মৃতিকথা থেকে এমনটা জানা গেছে। জিউফ্রের আত্মহত্যার প্রায় ছয় মাস পর ওই স্মৃতিকথা প্রকাশ হতে যাচ্ছে।
‘নোবডি’স গার্ল’ নামের বইটি আগামীকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এর একটি পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়েছে বিবিসি। এ বইতে বহুল আলোচিত যৌন অপরাধী এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী জিউফ্রে তাঁর জীবনের নানা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
আত্মজীবনীতে জিউফ্রে দাবি করেছেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনি তিনবার যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় জেফরি এপস্টেইন ছাড়াও আরও আটজন তরুণী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করেছিলেন।
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হওয়া স্মৃতিকথাটি মধ্য লন্ডনের একটি বইয়ের দোকান থেকে কিনেছে বিবিসি। এ বইয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে তরুণীদের হয়রানির শিকার হওয়ার একটি জটিল চিত্র ফুটে উঠেছে।
এ নিপীড়নের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জেফরি এপস্টেইন এবং তাঁর সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল। ২০১৯ সালে কারাগারে মারা যান এপস্টেইন। আর ম্যাক্সওয়েল যৌন পণ্য পাচারের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
বইয়ে জিউফ্রে উল্লেখ করেছিলেন, অনেক বছর পরও তিনি তাঁদের দুজনকে (এপস্টেইন ও ম্যাক্সওয়েল) কতটা ভয় পেতেন।
বইটির একটা বড় অংশজুড়ে ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। জেফরি এপস্টেইন কীভাবে তাঁকে নিপীড়ন করতেন, সে বর্ণনা দিয়েছেন জিউফ্রে।
বইয়ে জিউফ্রে লিখেছেন, এপস্টেইন এত ভয়ংকরভাবে তাঁর ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন যে তাঁর খুব যন্ত্রণা হতো। ওই সময় তিনি প্রার্থনা করতেন যেন অচেতন হয়ে যান।
বাকিংহাম প্যালেসের একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, বইটি প্রকাশকে কেন্দ্র করে এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওপর চাপ বাড়তে পারে।
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হওয়া স্মৃতিকথাটি মধ্য লন্ডনের একটি বইয়ের দোকান থেকে কিনেছে বিবিসি। এ বইতে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে তরুণীদের হয়রানির শিকার হওয়ার একটি জটিল চিত্র ফুটে উঠেছে।গত শুক্রবার প্রিন্স অ্যান্ড্রু স্বেচ্ছায় ডিউক অব ইয়র্কসহ রাজকীয় নানা পদবি ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে অ্যান্ড্রু বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
জিউফ্রে এবং লেখক অ্যামি ওয়ালেস মিলে নতুন বইটি লিখেছেন।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে বলেছেন, ২০০১ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ম্যাক্সওয়েল তাঁকে জাগিয়ে বলেছিলেন, দিনটি একটি ‘বিশেষ দিন’ হবে এবং ‘সিন্ডারেলার মতো’ তিনি একজন সুদর্শন প্রিন্সের দেখা পাবেন।
জিউফ্রে আরও বলেছেন, দিনের শেষের দিকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয়, ম্যাক্সওয়েল তাঁকে (অ্যান্ড্রু) বলেছিলেন তাঁর (জিউফ্রে) বয়স অনুমান করতে।
অ্যান্ড্রুর বয়স তখন ৪১ বছর ছিল। তিনি যথাযথভাবেই জিউফ্রের বয়স বলতে পেরেছিলেন। তখন জিউফ্রের বয়স ছিল ১৭ বছর।
সেই রাতে জিউফ্রে লিখেছেন, তিনি প্রিন্স অ্যান্ড্রু, জেফরি এপস্টেইন ও গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে লন্ডনে ট্রাম্প নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রিন্স ‘অনেক ঘামছিলেন’।
আরও পড়ুন১৪০ কোটি টাকায় যৌন হয়রানির মামলা নিষ্পত্তি প্রিন্স অ্যান্ড্রুর১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২প্রিন্স অ্যান্ড্রু.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য ক সওয় ল প রক শ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়ি ফিরল মোস্তফার নিথর দেহ, অন্ধকার নেমে এল সাত সদস্যের পরিবারে
সন্ধ্যায় বাজার হাতে নিয়েই বাড়ি ফেরার কথা ছিল গোলাম মোস্তফার। পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) বাবার ওষুধ, বৃদ্ধ মায়ের সেবা, স্ত্রী-সন্তানের মুখের হাসি—সবই তো তাঁর কষ্টার্জিত আয়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। প্রতিদিনের মতো ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন ভোরে। কিন্তু সংসারের টানেই ঘরে ফেরা সেই সন্ধ্যাটা হয়ে উঠল তাঁর জীবনের শেষ সন্ধ্যা। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বেপরোয়া গতির এক মোটরসাইকেলের আঘাতে নিথর দেহ হয়ে ফিরলেন তিনি। তাতে অন্ধকার নেমে এল সাত সদস্যের পরিবারে।
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ব্রাদার্স হিমাগারের সামনে মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান গোলাম মোস্তফা। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গোলাম মোস্তফার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর জয়বাংলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ইসহাক আলীর একমাত্র ছেলে।
পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলীর জমিজমা নেই। একমাত্র ছেলেকে সিলেটে রিকশা চালিয়ে বড় করেছেন ও জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বাবার পর সংসারের হাল ধরেন গোলাম মোস্তফা। তাঁর সহায়সম্বল বলতে দুই শতক জমির ওপর টিনের দুটি ঘর ও আয়ের একমাত্র অবলম্বন ইজিবাইকটি। প্রতিদিন ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে সাত সদস্যের পরিবার চলত। গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর বড় ছেলে মামুন মিয়া স্থানীয় মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে মাওয়া মণি সপ্তম শ্রেণিতে এবং আরেক ছেলে আবদুর রহমান হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র (৯)।
বাজার নিয়া যে বাড়ি আসির চাইল। কোনঠে বাজার। ওমরা কেন কথা কয় না। কায় ওমাক মারি ফেলাইল।আবেদা বেগম, গোলাম মোস্তফার স্ত্রীপুলিশ জানায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারাগঞ্জ চৌপথী থেকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক দিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম মোস্তফা। মহাসড়কের ব্রাদার্স হিমাগারের সামনে ইজিবাইক নিয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় পেছন থেকে দ্রুতগতিতে একটি মোটরসাইকেল এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে গোলাম মোস্তফা ইজিবাইক থেকে সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে গোলাম মোস্তফার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। স্ত্রী–সন্তানেরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশী-স্বজনে পুরো বাড়ি ভরে গেছে। সবার চোখেমুখে কান্নার ছাপ। বাড়ির এক কোণে নির্বাক তাকিয়ে আছেন গোলাম মোস্তফার বাবা ইসহাক আলী। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করতে থাকেন, ‘মুই মরনু হয়, তা–ও মোর বাবাটার যদি জানটা বাঁচিল হয়, তাহলে তো ছাওয়াগুলোক দেখার লোক থাকিল হয়। এ্যালায় কায় মোর ওষুধ আনবে, কায় ছাওয়ার ঘরে খাওন-খোড়াক দিবে। কেমন করি সংসার চলবে, হামরা বাঁচমো কেমন করি কন।’
গোলাম মোস্তফার স্ত্রী আবেদা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘বাজার নিয়া যে বাড়ি আসির চাইল। কোনঠে বাজার। ওমরা কেন কথা কয় না। কায় ওমাক মারি ফেলাইল।’ এ কথা বলেই তিনি মূর্ছা যান।
গোলাম মোস্তফার মা মোসলেমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। এরপর কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘এ্যালা কায় হামাক দেখবে, কায় মাও কয়া ডাকবে, ছোট ছোট নাতি-নাতনিগুলো যে এতিম হয়া গেল। ওমাক কায় পড়ার খরচ দিবে। কেমন করি হামার চুলা জ্বলবে।’
প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ইজিবাইক চালিয়ে অনেক কষ্ট করে মোস্তফা ভাই বাবা-মা স্ত্রী সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেন। এভাবে তাঁর মৃত্যু হবে কল্পনা করতে পারছি না। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মোস্তফা ভাই। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। কীভাবে ছয় সদস্যের সংসার চলবে।’
ইউপি সদস্য মোনায়েম খান বলেন, গোলাম মোস্তফার পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ। ইজিবাইক চালিয়ে তাঁর সংসার চলছিল। এক দিন গাড়ি নিয়ে বের না হলে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত জোটে না। তাঁর ছোট ছোট তিন ছেলে-মেয়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। এমন মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল-ইজিবাইক সংঘর্ষে ইজিবাইকের চালক নিহত হয়েছেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেলটি জব্দ করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।