ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট একাউন্টেন্ট ফারুক আহমেদকে ঘুষ লেনদেনের সময় হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে বাজারপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। 

ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনার উপ পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পাসপোর্ট সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এক গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ফারুক আহমেদ। প্রথম কিস্তি ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় দুদকের একটি বিশেষ টিম তাকে আটক করে। 

ভুক্তভোগী মেহজাবিন সরকার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি তিনি দুদককে জানালে এই অভিযান পরিচালিত হয়। 

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মো.

ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তার ঘুষ গ্রহণের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

এই ঘটনার পর পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ ছিল, যা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।”

স্থানীয়রা দুদকের এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

উপ পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক বলেন, “এটা আমাদের নতুন কমিশনের প্রথম অভিযান। একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের একটি গোপন টিম ওই এলাকায় অবস্থান নেন। এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে পাসপোর্ট সমস্যা সমাধান করে দিবে বলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান। পরবর্তীতে আজকে দুপুরে টাকা নিতে এলে তাকে আমরা হাতেনাতে আটক করি। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, এর আগেও ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তবে এটি প্রথমবারের মতো সরাসরি অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো।

ঢাকা/হিমেল/এস

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ