ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের আয়োজন চলছে। গতকাল সোমবার বলেছেন, আগামী সপ্তাহে শপথ গ্রহণের পর খুব দ্রুত তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের পর খুবই দ্রুত তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা বললেও ওই বৈঠক ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি ট্রাম্প।

ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক হলে সেটা হবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার প্রথম বৈঠক। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া। ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এ কথা বলে গেছেন ট্রাম্প।

কোন কৌশলে ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প নিউসম্যাক্সকে বলেন, ‘দেখুন, সেখানে কেবল একটি কৌশলই আছে এবং সেটা পুতিনের ওপর নির্ভর করছে। এই যুদ্ধ যেভাবে চলছে, সেটা নিয়ে পুতিন খুবই রোমাঞ্চিত হয়ে আছেন, এমনটা আমি কল্পনা করতে পারছি না। কারণ, এমনকি তাঁর জন্যও এই যুদ্ধ ঠিকঠাকমতো চলছে না।’

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, পুতিনও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি খুব দ্রুত দেখা করতে চলেছি। আমি যত দ্রুত সম্ভব এটা করব.

..আগে তো আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু কিছু জিনিস আছে, সেগুলো আপনাকে সেখানে বসে করতে হবে।’

আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন চলছে: ট্রাম্প১০ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের মতো একই কথা বলেছেন তাঁর বেছে নেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ। গত রোববার তিনি বলেছিলেন, আগামী কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ প্রত্যাশা করছেন।

১৯৬২ সালে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েই প্রথম মস্কো এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের এতটা অবনতি হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ