সরকার, রাজনৈতিক দল সবারই দায়িত্ব আছে
Published: 4th, November 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য ও বিভক্তি রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসে সাত দিনের মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তা কতটা কাটবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ তৈরি হয়েছে, তাতে উদ্বেগ জানানো হয়। সাত দিনের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই সমঝোতার দায়িত্ব অর্পণ করল। প্রশ্ন হলো, এই সিদ্ধান্ত কি আদৌ কোনো ফলাফল আনতে পারবে?
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচনের আগে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই অনিশ্চয়তা দূর করার দায় ও দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে। রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা দেখেছি যে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা ও কোনো কোনো জায়গায় ছাড় দিয়েই কয়েকটি দল বাদে আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রায় সব দলই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এ ধরনের ঐক্য প্রচেষ্টা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। সনদ বাস্তবায়নের উপায় এবং গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে না পরে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে সমঝোতায় আসার ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে একই দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত। তবে আমরা মনে করি, শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে দায়িত্ব চাপানো নয়, সমঝোতার ব্যাপারে সরকারকেও নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। যদিও এই সুপারিশের আইনি ভিত্তি নিয়ে সংবিধানবিশারদেরা প্রশ্ন তুলেছেন। এরপরও বলা যায়, ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়ে দেওয়ার পর এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের।
দেশের নাগরিকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এ নির্বাচনের সঙ্গে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, জাতীয় নিরাপত্তার মতো অতি জরুরি ও সংবেদনশীল বিষয়গুলো জড়িত। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে বেশির ভাগ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী কে হবেন, সেটাও নির্ধারণ করেছে। সব মিলিয়ে দেশ নির্বাচনী আবহে প্রবেশ করছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হলে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে?
অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যে পৌঁছানোর জন্য সাত দিন সময় দিয়েছে। আমরা আশা করি, দলগুলো নিজেরা বসে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে। ঐকমত্যে পৌঁছানো ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের, সেই দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোরও। এখানে দায়িত্বকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণযাত্রায় সব অংশীজন দায়িত্বশীল আচরণ করবে—সেটাই প্রত্যাশিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ঐকমত য সমঝ ত গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।
এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।