আয়কর রিটার্নে জমানো টাকা দেখাবেন কীভাবে
Published: 4th, November 2025 GMT
প্রতিবছর করদাতাদের আয়কর রিটার্নে পুরো এক বছরের আয় ও খরচের চিত্র দেখাতে হয়। এ ছাড়া করযোগ্য আয়ের ওপর কর দিতে হয়। কিন্তু বছর শেষে আপনার কিছু টাকা সঞ্চয় থাকতে পারে। এই টাকা ব্যাংক হিসাব বা নগদ থাকতে পারে।
আয়কর রিটার্নে এই জমা টাকা দেখাতে হবে। ব্যাংক হিসাব ও নগদ—দুই খাতেই এই টাকা রিটার্নে দেখানো উচিত। কারণ, পরের বছর আবার এই টাকা যুক্ত করে আপনার আয় ও ব্যয়ের হিসাব করতে হবে। মনে রাখবেন, ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকা ও নগদে থাকা টাকা এক বিষয় নয়। তাই রিটার্নে দেখানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যাংক হিসাবের টাকাব্যাংক হিসাবের টাকা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হলে একটি নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। আপনার ব্যাংক হিসাবের বিবরণীতে ৩০ জুন তারিখে যা স্থিতি থাকবে, আয়কর রিটার্নে আপনি সেটাই দেখাবেন। আপনার যদি একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলে প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের ৩০ জুনের স্থিতি আলাদা করে দেখাতে হবে।
অনেকেই নিজের ব্যাংক হিসাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের টাকা জমা রাখেন ও উত্তোলন করেন। এতে আপনার লেনদেন অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই তাঁদের অনেকেই ব্যাংক হিসাবের তথ্য গোপন করেন। যা ভবিষ্যতে বড় জটিলতায় ফেলতে পারে। তাই ব্যাংক হিসাবে শুধু নিজের অর্জিত টাকাই লেনদেন করা উচিত। অন্যের টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে এলে এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকা উচিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ম অনুসারে, পাঁচ লাখ টাকার যেকোনো লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে।
নগদ টাকাঅনেকে বলেন, রিটার্ন বেশি করে নগদ টাকা দেখাবেন। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটা ভুল ধারণা। অস্বাভাবিক বেশি নগদ টাকা থাকলে কর কর্মকর্তাদের সন্দেহ হতে পারে। অস্বাভাবিক নগদ টাকা দেখালে ফাইল নিরীক্ষায় (অডিট) পড়তে পারে।
অনেকেই না বুঝে রিটার্নে ২০-৩০ লাখ টাকা নগদ বা ক্যাশ ইন হ্যান্ড দেখিয়ে দেন। অনেকে আবার আয়কর রিটার্নে হিসাব মেলাতে না পারায় নগদ টাকা বেশি দেখান। যেন ঘরে বসেই সে একটা মিনি ব্যাংক খুলে বসতে পারবেন। এ ধরনের ভুল কখনোই করবেন না।
সহজ একটি বিষয় চিন্তা করুন, আমরা আমাদের বাসায় কত টাকা পর্যন্ত নগদ রাখি? এমন মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম যে কিনা নিজের ব্যাংকে টাকা না রেখে বাসায় লাখ লাখ টাকা রাখেন। তাই ৩০ জুন তারিখে আপনার হাতে নগদ (আনুমানিক) যে পরিমাণ টাকা ছিল, আপনি সেটাই দেখাবেন।
তবে আইনের ফাঁকফোকরের কারণেও অনেকে নগদ টাকা বেশি দেখান। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনেরা অনেকটা সমবায়ের মতো করে টাকা জমান। এর কোনো দলিলাদি নেই, অনেকটা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের মধ্যে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে টাকা রাখেন।
কিন্তু রিটার্নে সেই সঞ্চয়ের হিসাব দেখানো যায় না। কিছুদিন পর হয়তো একটি জমি কেনেন তাঁরা। যখন সম্পদ হিসাবে জমি রিটার্নে দেখান, তখন আয়ের উৎস দেখাতে হয়। তখন ক্যাশ ইন হ্যান্ড বা নগদ টাকা রিটার্নে দেখানো থাকলে তা সহজেই জমির বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো যায়। এ ক্ষেত্রে জমির জন্য সঞ্চয় করা অর্থও বৈধ এবং ক্যাশ ইন হ্যান্ড থেকে বিনিয়োগের টাকাও বৈধ হিসাবেই ধরা যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয়কর র ট র ন নগদ ট ক আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের আয়কর নথি তলবের নির্দেশ
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল, তাঁর স্ত্রী কাশমিরি কামাল এবং তাঁদের দুই মেয়ে কাশফি কামাল ও নাফিসা কামালের আয়কর নথি তলবের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। দুদকের পৃথক চারটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র জজ সাব্বির ফয়েজের আদালত আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ এ আবেদনগুলো করেন। পরে আদালত তা মঞ্জুর করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
লোটাস কামালের আয়কর নথি তলবের আবেদনে বলা হয়, লোটাস কামালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর নামে ৩২টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন করার অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে।
কাশমিরি কামালের আবেদনে বলা হয়, মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ৪৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ১৪৬ টাকা অর্জন করেছেন। এই অবৈধ সম্পদ তিনি তাঁর স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে উক্ত প্রতিষ্ঠান এবং নিজ নামে মোট ২০টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ২৯ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ২০৭ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করার অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে।
কাশফি কামালের আয়কর নথি তলবের আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে মুস্তফা কামাল তাঁর অবৈধভাবে অর্জিত ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৫ টাকা বৈধ করতে নিজ কন্যা কাশফি কামালের নামে দেখিয়েছেন। এ ছাড়া কাশফি কামালের নামে খোলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৮৭ কোটি ৪৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন।
নাফিসা কামালের আবেদনে দাবি করা হয় যে মুস্তফা কামাল তাঁর অবৈধ ৬২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৬ টাকা বৈধ করতে মেয়ে নাফিসা কামালের নামে স্থানান্তর করেছেন। এখানেও নাফিসা কামালের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। তাঁর নামে মোট ১৮টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে।