জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আলোচনার আয়োজন সরকার করবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

অবশ্য এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দীর্ঘ আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারেনি। কমিশন সুপারিশ দেওয়ার পর দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মতবিরোধ আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে দলগুলো নিজ উদ্যোগে পারস্পরিক আলোচনায় বসবে কি না বা তারা ঐকমত্যে আসতে পারবে কি না—তা নিয়ে সংশয় আছে।

আমরা কোনো আলটিমেটাম দিইনি, আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার সরকারের মতো পদক্ষেপ নেবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা

গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত আটটা) সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অন্যদিকে গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলনে এ–সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তবে তিনি মনে করেন, দলগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য একজন ‘রেফারি’র অভাব হতে পারে। তাঁরা আশা করেন এখানে প্রধান উপদেষ্টা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে গতকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ-আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে।

গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি বিকল্প সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর একটিতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ে সংসদ এটি করতে ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। অন্য বিকল্প সুপারিশটিও প্রায় একই। তবে সেখানে বলা হয়েছে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা হবে। না হলে কী হবে, তা উল্লেখ নেই।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে আসে।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি স্তর—আদেশ জারি, গণভোট এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা দেওয়া। এ তিনটি স্তর নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতপার্থক্য আছে। তবে এখন মূল মতবিরোধ গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা না রাখা নিয়ে।

বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্ত করা এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়। এতে লক্ষ করা হয়, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনা করার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে ও তার বিষয়বস্তু কী হবে—এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

আসিফ নজরুল বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমত প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নেই, সেটাও সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

আলটিমেটাম নয়, আহ্বান

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, কবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হতে পারে? জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটু সময় দিতে চাই। যে বিষয়টি উল্লেখ করলাম, আমরা একটু দেখি।’

রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তারা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার কী করবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কোনো আলটিমেটাম দিইনি, আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার সরকারের মতো পদক্ষেপ নেবে।’

সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আলোচনার আয়োজন করে দেবে কি না—এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকার বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছরে আলোচনা করে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা সরকার করছে।

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষে অভিযোগ করা হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশনে যে বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন সুপারিশে এসে সেগুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে বা সম্পূর্ণভাবে সেগুলো রক্ষা করা হয়নি।

এর জবাবে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’

দলগুলোর মতপার্থক্য যেখানে

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ করার বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মপরিধিতে ছিল না। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের পর ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এ আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সনদ ও গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়।

বিএনপি মনে করে, জুলাই সনদ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায়, তার ভিত্তিতে একটি নতুন অধ্যাদেশ করে গণভোট হবে। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার পক্ষে। দলটি মনে করে, এটি হলে আগামী সংসদকে আলাদা কোনো ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হবে।

বিএনপি মনে করে, কোন কোন প্রস্তাবে কোন কোন দলের ভিন্নমত আছে, সেগুলো জুলাই সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেইমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সুতরাং গণভোটে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে যারা জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হবে, তারা ভিন্নমত অনুসারেই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সংস্কার টেকসই করতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট করতে হবে। গণভোট হতে হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে। ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোও সনদ ও গণভোটে থাকবে। গণভোটে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে রায় এলে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যেভাবে ঐকমত্য কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।

এনসিপির অবস্থানও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানের কাছাকাছি। তবে দলটি বলেছে, তারা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চায়। সেটা থাকলে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনও হতে পারে বা আগেও হতে পারে। এ ছাড়া দলটির দাবি, রাষ্ট্রপতি নয়, জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, তা সুসংহত করতে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই জ ত য় সনদ ব স স ক র প রস ত ব আইন উপদ ষ ট আহ ব ন জ ন আলট ম ট ম র সরক র র সরক র স গণভ ট র গণভ ট ক পদক ষ প ভ ন নমত উল ল খ র জন য ইসল ম গতক ল ব এনপ এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।

এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকার, রাজনৈতিক দল সবারই দায়িত্ব আছে
  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কেন এমন দুর্বোধ্য পথ
  • এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে