মধ্যস্থতা নিয়ে আদানির প্রস্তাবে রাজি নয় পিডিবি
Published: 4th, November 2025 GMT
ভারতীয় কোম্পানি আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। সিঙ্গাপুরের সালিসি আদালতের মাধ্যমে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে আদানি। তবে এতে রাজি নয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির প্রক্রিয়া তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এতে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। প্রমাণ সংগ্রহে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।
সূত্রমতে, গত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে একতরফা চুক্তির সুযোগ নিয়েছে আদানি। এ চুক্তির বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা বিচারাধীন। আদালতের আদেশে তদন্ত চলছে। এতে আদানিকে দেশি-বিদেশি আদালতে জবাবদিহি করার মতো তথ্য-প্রমাণ আসছে। এসব প্রমাণ আদালতে জমা দেওয়া হবে। এ কারণে মধ্যস্থতার জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে অনুরোধ করে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের রেজিস্ট্রারের কাছে ২ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছে পিডিবি।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিরোধের ধরন অত্যন্ত জটিল। আর্থিক পরিমাণও অনেক বড়। আদানির অনুরোধ বিবেচনায় নিয়েই বর্তমান পরিস্থিতি এই বিরোধ মধ্যস্থতায় পাঠানোর জন্য উপযুক্ত নয় বলে মনে করছে পিডিবি। এতে দুই পক্ষের সময় ও অর্থের অপচয় হতে পারে।
এতে আদানিকে দেশি-বিদেশি আদালতে জবাবদিহি করার মতো তথ্য-প্রমাণ আসছে। এসব প্রমাণ আদালতে জমা দেওয়া হবে। এ কারণে মধ্যস্থতার জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে অনুরোধ করে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের রেজিস্ট্রারের কাছে ২ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছে পিডিবি।চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব অভিযোগ আদানির আবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গত ৫ অক্টোবর চিঠি দিয়ে এটি আদানিকে জানানো হয়েছে এবং তদন্তের জন্য বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে।
বিরোধ নিয়ে সালিসি আদালতে যাওয়ার আগে প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক; যাতে কোনো সমাধান আসেনি। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দুই পক্ষের সমঝোতায় মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা; সিঙ্গাপুরে যেটি নিয়োগের প্রস্তাব করেছে আদানি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, আদানির চুক্তিতে দুর্নীতি তদন্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। জাতীয় চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি কাজ করছে। আদালতের নির্দেশনায় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। তাই এখন মধ্যস্থতার সুযোগ নেই, আদালত অবমাননা হতে পারে। বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বকেয়া আগের সরকারের সময় থেকে জমেছে। অধিকাংশ ইতিমধ্যে শোধ করা হয়েছে, হচ্ছে। এরপরও বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলে তা হবে দুঃখজনক।
বিরোধের বাইরে থাকা এ পাওনা পরিশোধে পিডিবি ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার আছে আদানির। প্রসঙ্গত, গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি।সরবরাহ বন্ধের কথা জানিয়ে চিঠিএদিকে বকেয়া শোধ না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হবে জানিয়ে গত ৩১ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে আদানি। গত বছরের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। তাতে বলা হয়, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়ার অর্থ শোধ করা না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করতে বাধ্য হবে তারা। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত থাকার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) পাবে আদানি।
আদানির চিঠিতে বলা হয়, এর আগে গত ২৭ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার বকেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওনা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। বিরোধের বাইরে থাকা এ পাওনা পরিশোধে পিডিবি ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার আছে আদানির। প্রসঙ্গত, গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি।
চুক্তি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমাভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে নির্মিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ।
আদানির চুক্তি পর্যালোচনা করে গত রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। এরপর মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, আদানির চুক্তির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মাসখানেকের মধ্যে শক্ত প্রমাণ সামনে আসবে। এসব প্রমাণ নিয়ে দেশে–বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় ত র জন য তদন ত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।