কলোনিয়াল ন্যারেটিভ আর অধিপতি মতাদর্শকে চুরমার করে দাঁড়ানো জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে জনমনে আড়াল করে দাবিয়ে রাখা শত সহস্র অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা ও আকাঙ্ক্ষা জনআওয়াজ হিসেবে সামনে এসেছে গ্রাফিতির ভেতর দিয়ে। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা ও আওয়াজ গায়েব করার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু অভ্যুত্থানের রক্তস্মৃতি অস্বীকার করে এসব জনআকাঙ্ক্ষা মুছে ফেলতে নানা কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। গ্রাফিতি বদলে ফেলা বা তা নিয়ে আপত্তি উত্থাপন অন্যায় ও অমূলক। গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট থেকে বিচ্ছিন্ন। দেশে যখন সংস্কার ও জনআকাঙ্ক্ষা পাঠের তৎপরতা চলছে, তখন পাঠ্যবইয়ের মলাটে গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি সংঘর্ষমূলকই শুধু নয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিরও বিরোধী।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মাধ্যমিক স্তরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের মলাটের পেছনে  গণঅভ্যুত্থানের একটি গ্রাফিতি ব্যবহার করেছিল। ঐ গ্রাফিতিতে পাঁচটি সতেজ পাতাসহ গাছের ছবি আছে। একেকটি পাতা একেকটি সামাজিক-ধর্মীয়-জাতিগত পরিচয় বহন করছে: মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু ও আদিবাসী। নিচে লেখা আছে– ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। গণঅভ্যুত্থানের মূল আওয়াজ ‘ইনক্লুশন’ এতে স্পষ্ট। 

পাঠ্যপুস্তকে এই গ্রাফিতি ব্যবহারের কারণে এনসিটিবি যেখানে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার, সেখানে গণঅভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পর এটা নিয়ে আপত্তি তোলে কিছু মানুষ। এনসিটিবিও গ্রাফিতিটি বদলে ফেলেছে! বদলাতে গিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা নিয়ে তৈরি আরেক গ্রাফিতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এটি গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি অসম্মান। গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বদলে ফেলার এই পাঁয়তারা কোন কর্তৃত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়? জনআকাঙ্ক্ষার আওয়াজকে রাষ্ট্র কি এভাবে বদলে দিতে পারে? 

বাইনারি-বিভাজন নয়

যারা আপত্তি তুলেছেন, তারা ভিত্তিহীন বহু বক্তব্য সামনে আনছেন। প্রথমত, এনসিটিবির উল্লিখিত বইতে কোথাও ‘আদিবাসী’ প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির আলোকচিত্র। ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়তে কর্তৃত্ববাদী সংবিধান বদলের আওয়াজও তুলেছে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান। অথচ আপত্তিকারীরা গ্রাফিতিটির বিরোধিতা করতে গিয়ে আগের সংবিধানকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সেখানেও তারা মন গড়া তথ্যকে সংবিধান প্রদত্ত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। সংবিধানে নাকি আছে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’, তাই ‘আদিবাসী’ শব্দটি অসাংবিধানিক। অথচ সংবিধানের কোথাও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দ নেই; আছে ‘নৃগোষ্ঠী’। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩.

ক ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

গণঅভ্যুত্থানের বদলে ফেলা গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে আদিবাসী তরুণদের সমাবেশে হামলা হয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারী পক্ষ গ্রাফিতি বাতিলের আন্দোলনকারীরাও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এনসিটিবি কি এই রক্তপাত ও সংঘাতের দায় এড়াতে পারে? দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত, ন্যায়বিচার ও আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিক রাষ্ট্র। 

আদিবাসী ও আদিবাসিন্দা

‘আদিবাসী’ ও ‘আদিবাসিন্দা’ শব্দ দুটি উচ্চারণের কারণে বহুজনের কাছে সমার্থক মনে হলেও এগুলো সম্পূর্ণ পৃথক অর্থ বহন করে। বাঙালি জাতি অবশ্যই বাংলা ভূখণ্ডের আদিবাসিন্দা। বহু আদিবাসী জাতিও এই ভূখণ্ডের বহু অঞ্চলের আদিবাসিন্দা। কিন্তু বাঙালিরা আদিবাসী নন। ঠিক যেমনভাবে বহু আদিবাসী বহু অঞ্চলের আদিবাসিন্দা নন। প্রান্তিক জাতিসত্তাগুলো নিজেদের একক সামাজিক বর্গ পরিচয় হিসেবে এই প্রত্যয়টি বহু আগে থেকেই ব্যবহার করছে। সেটা বাঙালিসহ সবার কাছে বহুকাল থেকেই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। ১৯৪৪ সালে নওঁগার বদলগাছীতে পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধবিহারের কাছে স্থাপিত হয় ‘পাহাড়পুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়’। এর পর দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। কেউ বিদ্যালয়ের নাম থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দটি মুছে দেয়নি। দেশব্যাপী ‘আদিবাসী’ নাম নিয়ে এমন অনেক শিক্ষালয় জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করে চলেছে। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের মহেশপুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের শ্রীবরদীর বাবেলাকোনা আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের খৈচালা আদিবাসী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিনাজপুরের কাহারোলের সাধনা আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বটতুলী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওগাঁর ধামইরহাটের সোনাদিঘী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নামকরণের এই ধারা সমাজ-শ্রেণি কি বর্গে বহুত্ববাদ ও অন্তর্ভুক্তির মৌলিক সাংস্কৃতিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। ১৯৬২ সালে মধুপুর জাতীয় উদ্যান ঘোষণার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ যে প্রচারপত্র বিলি করে, তা শুরু হয়েছিল ‘আদিবাসী জনগণ’ পরিচয় দিয়ে। ১৯৭২ সালে গণপরিষদে দাঁড়িয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাও বলেছিলেন, ...আমরা বাঙালি নই, আমরা অনেকে চাকমা, মারমা। সংবিধানে সকল জাতিসত্তার পরিচয় নাই। সংবিধানে ‘আদিবাসী’ শব্দটি না থাকলেও দেশের অন্য আইন ও নীতিতে এই শব্দটি গৃহীত হয়েছে। 

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০’ অনুযায়ী ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ বলতে উক্ত আইনের তপশিলে উল্লিখিত বিভিন্ন আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শ্রেণির জনগণকে বোঝানো হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির (২০১০) অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো’। 

কে কোথায় কোথা থেকে আগে বা পরে এসেছে এবং এর মাধ্যমে মানুষের ইতিহাস কিংবা বিকাশমানতাকে রুদ্ধ করার প্রক্রিয়াও প্রবলভাবে ঔপনিবেশিক ও কর্তৃত্ববাদী। ঢাকার মণিপুরিপাড়া, মগবাজার, কুর্মিটোলা কিংবা তেজতুরীপাড়া কি আজ আর আদিবাসী মানুষের আছে? আদিবাসী পরিচয়ের খুব ঘনিষ্ঠ ইনডিজেনাস পিপলস এবং এর সর্বজনীন সংজ্ঞায়ন হয় না। জাতিরাষ্ট্র গঠনের আগে থেকে যেসব সমাজ প্রথাগত আইনে পরিচালিত হয় এবং নিজস্ব ভাষা, দর্শন, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি আত্মপরিচয়ের মাধ্যম হিসেবে মানে, তারাই ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টি ব্যবহার করে। আত্মপরিচয়ের এই মর্যাদা রাষ্ট্র থেকে জাতিসংঘ– সর্বত্র স্বীকৃত। 

রাষ্ট্রের কর্তব্য

আদিবাসী প্রত্যয়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপত্তিকারীরা কোথা থেকে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটি হাজির করলেন, নিশ্চিতভাবে তা অনৈতিহাসিক নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কলোনিয়াল লিগ্যাসি এবং অধিপতি জাত্যাভিমান ও নিওলিবারেল কর্তৃত্ববাদ। সংবিধানে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটি না থাকলেও এই পরিচয়টি রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত কর্তৃত্ববাদী রেজিমে বহুলভাবে ব্যবহার করেছিল। আর দেশের বাঙালি ও আদিবাসী জনমনে এক ধরনের বাইনারি-বিভাজন টিকিয়ে রেখেছিল। এই নামে একটি আইনও তৈরি হয়েছিল। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এসব বাইনারি-বিভাজনকেই প্রশ্ন করেছে।

কোনো মানুষ কোনো বিষয়ে তার মতামত কিংবা আপত্তি অবশ্যই উত্থাপন করতে পারে। রাষ্ট্র সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করবে। কিন্তু মতপ্রকাশের নামে গণঅভ্যুত্থানের উল্লিখিত গ্রাফিতির বিরুদ্ধে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন আপত্তি তোলা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘আদিবাসী তর্কের’ বাইনারি-বিতর্ক উস্কে দেওয়া হচ্ছে। জবরদস্তিমূলক আদিবাসী-বাঙালি পাতানো বিরোধ তৈরির এমন কূট-প্রবণতা অতীতেও বহু হয়েছে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়েছে, প্রাণ গিয়েছে, বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হয়েছে। খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে হামলা থেকে নাহার চা বাগানে নিতাই তাঁতি কিংবা জুড়িতে অবিনাশ মুড়ার প্রাণহানির ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আদিবাসী-বাঙালির মধ্যে বাইরে থেকে পাতানো বিরোধকে বোঝা যায়। গণঅভ্যুত্থান এসব পাতানো বিরোধ ও বাইনারি ন্যারেটিভের বিপরীতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের আওয়াজ উঠিয়েছে। আমরা আশা করব, পাঠ্যপুস্তকে গণঅভ্যুত্থানের সেই গ্রাফিতি ফিরিয়ে আনা হবে। জনআকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র সকল পাতার মর্যাদা ও আত্মপরিচয় সুরক্ষায় সক্রিয় হবে।

গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা মুক্তি পাক

বাংলাদেশে আদিবাসী জনসংখ্যা এবং মোট জাতিসংখ্যা নিয়ে তর্ক আছে। সর্বশেষ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ এবং জাতিগোষ্ঠী ৫০টি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ সালের ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে আদিবাসীদে মাতৃভাষা ৪০টি। আদিবাসী জীবন- জনপদ বিভিন্নভাবে বিমর্ষ, প্রান্তিক ও অধিকারহীন। পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের জাত্যাভিমানী ও কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা আদিবাসী পরিসরকে আরও সংকুচিত ও রক্তাক্ত করে তোলে। গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির মধ্য দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের সর্বজনের মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা উচ্চারিত হয়েছে, গায়ের জোরে তা বদলে ফেলা কর্তৃত্ববাদকেই পুনঃস্থাপনের প্রবণতাকে উস্কে দেয়। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়ার জনআকাঙ্ক্ষার মুক্তি ঘটুক!

পাভেল পার্থ: লেখক ও গবেষক
[email protected] 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন র গ র ফ ত এনস ট ব প রবণত ত হয় ছ আওয় জ

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল ছাত্রদল

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনুরোধে শহীদ মিনার ছেড়ে দিয়ে ৩ আগস্টের ছাত্র সমাবেশ শাহবাগে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। এরই অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশের কর্মসূচি ছিল আমাদের। দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিও পাই। তবে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণার পরই গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি, একই দিনে একই স্থানে জাতীয় নাগরিক পার্টিও সমাবেশ করতে চায়। এরপর তারা একাধিকবার আমাদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের অনুরোধ জানায়।”

ছাত্রদলের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমাদের মতো একটি সংগঠনের জন্য এ ধরনের কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন খুবই দুরূহ ও কষ্টসাধ্য বিষয়। তবুও গণতান্ত্রিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী, পরমতসহিঞ্চু, গ্রহণযোগ্য রাজনীতির ধারক হিসেবে আমরা তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়েছি। শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি আমাদের আগে থাকলেও আমরা শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা দিতে চাই। তাই আমরা সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন ৩ আগস্টের ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে শাহবাগে।”

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “আমরা জানি, রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে কর্মসূচি হলে কিছু জনভোগান্তি হতে পারে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিছক কর্মসূচি স্থান পরিবর্তনের বিষয় নয়—এটি ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে উদারতার অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিতে চাই।”

তিনি আরো বলেন,  “অভ্যুত্থানের পরও কারো ওপর দমন চালাইনি আমরা, কোন হল বা সিট দখল করিনি। আমাদের রাজনীতির ভাষা উস্কানির বিপরীতে শান্তি, সংঘাতের বিপরীতে উদারতা। যারা সফল অভ্যুত্থানের ‘একক মালিক’ হতে চান, আমরা আশা করি, তারা আমাদের এই অবস্থান থেকে শিক্ষা নেবেন এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের পথে ফিরে আসবেন।”

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষাঙ্গনে আমরা একটি ইতিবাচক ধারার গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি গড়ে তুলতে চাই। সেখানে থাকবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহাবস্থান এবং রাজনৈতিক পরিশীলন। সেই রাজনীতির শক্তি হবে উদারতা ও পরমতসহিঞ্চুতা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা দাবি করেন, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাদের অবদানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করাই তাদের লক্ষ্য।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁধন-সাবার ভার্চুয়াল দ্বন্দ্বে যোগ দিলেন অরুণা বিশ্বাস
  • অভ্যুত্থানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন ব্রাত্য
  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল ছাত্রদল
  • চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা