চট্টগ্রাম বন্দরে এক কর্মসূচি প্রত্যাহার, আরেকটি চলছে
Published: 19th, October 2025 GMT
একলাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে নানা কর্মসূচি চলছে। আজ রোববার গাড়ির মালিকদের সংগঠনগুলো গাড়ি না চালানোর কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিদিন চার ঘণ্টা কর্মবিরতি শুরু করেছে। আজ রোববার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। সপ্তাহজুড়ে এই কর্মবিরতি চলবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
বন্দর ঘিরে নানা কর্মসূচির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি কনটেইনার ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বন্দরের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রমের গতি কমে গেছে।
ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ১৫ অক্টোবর থেকে এই নতুন মাশুল কার্যকর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে বন্দরের বিভিন্ন ধরনের সেবার মাশুল আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে নতুন মাশুল কার্যকর করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষ অভিযোগ করছে। এ কারণে একলাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে বন্দর ব্যবহারকারী অনেকগুলো সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে।
গাড়িমালিকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার
সব ধরনের সেবা মাশুল বাড়াতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যানবাহন প্রবেশের ফি বা মাশুল একলাফে চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে গাড়ির মালিকদের সংগঠন ১৫ অক্টোবর থেকে বন্দরে গাড়ি না চালানোর কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম তিন দিন বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গত শনিবার থেকে সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।
গাড়ির মালিকদের এই কর্মসূচির কারণে বন্দর ঘিরে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ কারণে আজ রোববার দিনের বেলায় বন্দরে আসা বেশির ভাগ জাহাজ অলস বসে ছিল। শুধু বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো–নামানোর কার্যক্রম চালু ছিল। এ অবস্থায় রোববার দুপুরে বন্দর ভবনে গাড়ি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। ওই বৈঠকে গাড়ির বর্ধিত প্রবেশ ফি বা মাশুল স্থগিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন গেজেট প্রকাশের আশ্বাস দেন বন্দর চেয়ারম্যান।
* গাড়ি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আজ দুপুরে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান* বৈঠকে গাড়ির বর্ধিত মাশুল স্থগিতের আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপর গাড়ি বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়
* প্রতিদিন চার ঘণ্টার কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা
বৈঠকে উপস্থিত আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো.
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি চলছে
গাড়ি মালিক সংগঠনগুলো কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আজ থেকে তাদের পূর্বঘোষিত চার ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে। রোববার সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রথম দিনের মতো এই কর্মবিরতি পালন করেছে তারা। কর্মসূচি অনুযায়ী, এ সময়ে বন্দরসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে বিরত ছিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস।
পোর্ট ইউজার্স ফোরাম বা বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের আহ্বানে এই কর্মসূচি পালন করছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর নেভি কনভেনশন হলে সংগঠনটির আহ্বায়ক আমীর হুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অর্থাৎ চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন এ কর্মসূচি পালন করবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একলাফে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন তাঁরা।
আমদানি–রপ্তানিতে চাপ বাড়ছে
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করে আসছে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন। বন্দর ঘিরে এসব কর্মসূচির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য খালাস ও রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, আজ সকাল আটটা পর্যন্ত বন্দরে ২৯৫ একক কনটেইনার খালাস হয়েছে। সাধারণত গড়ে তিন হাজার একক কনটেইনার খালাস হয়। আবার ডিপো থেকে ৭৮১ একক রপ্তানি কনটেইনার বন্দরে আনা হয়। সাধারণত প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার একক কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে সেই কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বাড়ছে। আবার পণ্য খালাস কমে গেলে বন্দরে আমদানি পণ্যের জটও বাড়বে।
বেসরকারি ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শনি ও রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। তবে গাড়ি মালিক সমিতির কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়ায় খুব দ্রুত রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে মোট কনটেইনারের ৯৯ শতাংশ পরিবহন হয়। বাকি ১ শতাংশ পরিবহন হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। ফলে এই বন্দরের কোনো কর্মসূচির প্রভাব পড়ে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে। কারণ, কনটেইনারে রপ্তানির পুরোটাই এ বন্দর দিয়ে নেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর বহন দ র কর র বব র ব য হত প রথম একল ফ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় সম্পর্ক জোরদার করতে রাজি বাংলাদেশ-কুয়েত
বাংলাদেশ ও কুয়েত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, শ্রম, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার ও বহুমাত্রিক সহযোগিতায় রূপ দিতে দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শক সভায় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে।
রোববার বাংলাদেশ ও কুয়েতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের রাজনৈতিক পরামর্শ সভা শেষে সন্ধ্যায় প্রচারিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকালে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের এবং কুয়েতের এশীয়–বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত সামিহ ইসা জোহর হায়াত তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এদিকে ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সামিহ ইসা জোহর হায়াত। সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সামিহ ইসা বলেন, বাংলাদেশ ও কুয়েত শ্রম সহযোগিতাসহ সম্পর্ক জোরদারে শিগগিরই একাধিক খাতে নতুন চুক্তি করবে।
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক পরামর্শ সভার উল্লেখ করে সামিহ ইসা বলেন, বৈঠকে খাদ্যনিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, সামরিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান—এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই একাধিক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা জোহর হায়াত বলেন, সকালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আলীর একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা আরও বলেন, ‘আমরা আবারও ১৯৯০ সালে কুয়েতে দখলদারত্বের সময় বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। তখন থেকে পাঁচ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা আমাদের পাশে থেকে মাইন অপসারণ ও মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছেন।’
বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও ফ্লাইট বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে কুয়েত এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ৭টি, আল–জাজিরা এয়ারওয়েজ ১৪টি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে আরও নতুন রুট ও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে, যা খুব শিগগির বাস্তবায়িত হবে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা বলেন, শ্রম সহযোগিতা নবায়নের বিষয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে, যা ভবিষ্যতে উচ্চপর্যায়ের সফরের সময় সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যৌথ বিবৃতিবাংলাদেশ ও কুয়েত প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় প্রতি দুই বছর পরপর পর্যায়ক্রমে এ বৈঠক ঢাকা ও কুয়েত সিটিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর ও বিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি হয়।
বৈঠকে দুই পক্ষ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করে। ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনের’ অধীন বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ এবং প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলা ও অনলাইন নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়। দুই পক্ষই ‘কুয়েত ভিশন ২০৩৫’–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনশক্তি সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আলোচনায় থাকা সমঝোতা স্মারকগুলো চূড়ান্ত করার বিষয়ে পর্যালোচনা করে।
জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং হালাল খাদ্য খাতে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। দুই দেশ যৌথ বাণিজ্য কমিটি পুনরায় সক্রিয় করার পাশাপাশি ২০২৬ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজনে রাজি হয়েছে। বৈঠকে কুয়েত ফান্ড (কেএফএইডি) সহায়তার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো ও বিমান যোগাযোগে নতুন সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে সম্মত হয়।