একলাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে নানা কর্মসূচি চলছে। আজ রোববার গাড়ির মালিকদের সংগঠনগুলো গাড়ি না চালানোর কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিদিন চার ঘণ্টা কর্মবিরতি শুরু করেছে। আজ রোববার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। সপ্তাহজুড়ে এই কর্মবিরতি চলবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

বন্দর ঘিরে নানা কর্মসূচির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি কনটেইনার ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বন্দরের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রমের গতি কমে গেছে।

ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ১৫ অক্টোবর থেকে এই নতুন মাশুল কার্যকর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে বন্দরের বিভিন্ন ধরনের সেবার মাশুল আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে নতুন মাশুল কার্যকর করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষ অভিযোগ করছে। এ কারণে একলাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে বন্দর ব্যবহারকারী অনেকগুলো সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে।

গাড়িমালিকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার

সব ধরনের সেবা মাশুল বাড়াতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যানবাহন প্রবেশের ফি বা মাশুল একলাফে চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে গাড়ির মালিকদের সংগঠন ১৫ অক্টোবর থেকে বন্দরে গাড়ি না চালানোর কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম তিন দিন বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গত শনিবার থেকে সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।

গাড়ির মালিকদের এই কর্মসূচির কারণে বন্দর ঘিরে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ কারণে আজ রোববার দিনের বেলায় বন্দরে আসা বেশির ভাগ জাহাজ অলস বসে ছিল। শুধু বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো–নামানোর কার্যক্রম চালু ছিল। এ অবস্থায় রোববার দুপুরে বন্দর ভবনে গাড়ি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। ওই বৈঠকে গাড়ির বর্ধিত প্রবেশ ফি বা মাশুল স্থগিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন গেজেট প্রকাশের আশ্বাস দেন বন্দর চেয়ারম্যান।

* গাড়ি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আজ দুপুরে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান
* বৈঠকে গাড়ির বর্ধিত মাশুল স্থগিতের আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপর গাড়ি বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়
* প্রতিদিন চার ঘণ্টার কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা

বৈঠকে উপস্থিত আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো.

ইউসুফ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মাশুলের নতুন গেজেট প্রকাশ করার কথা বলেছেন বন্দর চেয়ারম্যান। গাড়ির প্রবেশ ফি আগের নিয়মে অর্থাৎ ৫৭ টাকা হারে আদায় করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ কারণে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে বন্দরের পণ্য আনা–নেওয়ার জন্য যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি চলছে

গাড়ি মালিক সংগঠনগুলো কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আজ থেকে তাদের পূর্বঘোষিত চার ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে। রোববার সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রথম দিনের মতো এই কর্মবিরতি পালন করেছে তারা। কর্মসূচি অনুযায়ী, এ সময়ে বন্দরসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে বিরত ছিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস।

পোর্ট ইউজার্স ফোরাম বা বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের আহ্বানে এই কর্মসূচি পালন করছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর নেভি কনভেনশন হলে সংগঠনটির আহ্বায়ক আমীর হ‌ুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অর্থাৎ চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন এ কর্মসূচি পালন করবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।

কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একলাফে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন তাঁরা।

আমদানি–রপ্তানিতে চাপ বাড়ছে

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করে আসছে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন। বন্দর ঘিরে এসব কর্মসূচির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য খালাস ও রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, আজ সকাল আটটা পর্যন্ত বন্দরে ২৯৫ একক কনটেইনার খালাস হয়েছে। সাধারণত গড়ে তিন হাজার একক কনটেইনার খালাস হয়। আবার ডিপো থেকে ৭৮১ একক রপ্তানি কনটেইনার বন্দরে আনা হয়। সাধারণত প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার একক কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে সেই কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বাড়ছে। আবার পণ্য খালাস কমে গেলে বন্দরে আমদানি পণ্যের জটও বাড়বে।

বেসরকারি ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শনি ও রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। তবে গাড়ি মালিক সমিতির কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়ায় খুব দ্রুত রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে মোট কনটেইনারের ৯৯ শতাংশ পরিবহন হয়। বাকি ১ শতাংশ পরিবহন হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। ফলে এই বন্দরের কোনো কর্মসূচির প্রভাব পড়ে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে। কারণ, কনটেইনারে রপ্তানির পুরোটাই এ বন্দর দিয়ে নেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর বহন দ র কর র বব র ব য হত প রথম একল ফ আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা

যুদ্ধের ইতি টানতে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি। মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এক রুশ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে তাঁরা এ বৈঠক করেন। এ বৈঠক প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে এবং মধ্যরাতের পর শেষ হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আপসে পৌঁছাতে পারিনি। তবে মার্কিন কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে।’

উশাকভ মঙ্গলবারের আলোচনাকে ‘খুবই ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ উল্লেখ করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ওয়াশিংটন ও মস্কো— উভয় পক্ষের সামনে এখনো অনেক কাজ বাকি।’

মার্কিন প্রতিনিধিদল একটি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে রাশিয়ার রাজধানীতে গিয়েছিল। সেখানে আগের ফাঁস হওয়া ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনার খসড়ার হালনাগাদ সংস্করণ নিয়ে আলোচনা হয়। ফাঁস হওয়া ‘খসড়াটি রাশিয়ার পক্ষে গেছে’— ইউক্রেন ও দেশটির মিত্রদের এমন কঠোর সমালোচনার মুখে ওয়াশিংটন এতে পরিবর্তন আনে।

কিয়েভ ও ইউরোপের পাল্টা প্রস্তাবটিরও নিন্দা করেছে ক্রেমলিন। পুতিন বারবার বলে আসছেন, এটি তাঁর দেশের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কো, রাশিয়া; ২ ডিসেম্বর, ২০২৫।

সম্পর্কিত নিবন্ধ