পর্তুগালের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ
Published: 19th, October 2025 GMT
শুক্রবার বিকেলের সূর্যটা একটু নরম হয়ে এলে লিসবনের মার্তিম মনিজ যেন পাল্টে যায়। ট্রামের ঘণ্টা বাজতে বাজতেই গলির ভেতর থেকে ভেসে আসে ভাজা সিঙ্গারার গন্ধ। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কারও ডাক—“ভাই, এক কাপ চা দিবেন।” আশেপাশে তাকালে মনে হয় না, এটা ইউরোপের কোনো শহর। বরং ঢাকার কোনো মোড়, কিংবা নারায়ণগঞ্জের কোনো বাজার। বিদেশের মাটিতেও এখানে টিকে আছে এক টুকরো বাংলাদেশ—বাংলাদেশিদের কোলাহল, খাবার, ভাষা আর হাসির আড্ডায়।
মার্তিম মনিজে বাংলাদেশিদের পদচারণা শুরু নব্বইয়ের দশকে। কাজের খোঁজে, ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্নে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছিলো পর্তুগালের লিসবনে। প্রথমে সংখ্যায় কম হলেও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ছোট ছোট দোকান, মুদি ব্যবসা, মানি এক্সচেঞ্জ আর রেস্টুরেন্ট। বছরের পর বছর পরিশ্রম আর পর্তুগিজ সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লড়াই বাংলাদেশিদের স্থায়ী করে তোলে এই এলাকায়। এখন মার্তিম মনিজকে বলা হয় ‘বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র’।
প্রবাস জীবনের গল্প সবসময় সহজ নয়। প্রথমদিকে ভাষার বাধা, বৈধ কাগজপত্রের অভাব, কাজের কষ্ট—সবই ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। কেউ কেউ নির্মাণশ্রমিক হিসেবে দিন শুরু করেছে, কেউ আবার রেস্টুরেন্টে ওয়েটার। সীমাহীন পরিশ্রম, অনিশ্চয়তা আর টিকে থাকার লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে আজকের বাংলাদেশি সমাজ। এখন অনেকেই ছোট দোকান থেকে শুরু করে সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন, কেউ আবার নিজের রেস্টুরেন্টকে শহরের মানচিত্রে পরিচিত নাম করে তুলেছেন। কিন্তু সেই পথটা ছিল ভীষণ কঠিন—কষ্ট, ত্যাগ আর অক্লান্ত পরিশ্রমের পথ।
আজ মার্তিম মনিজ মানে শুধু বাজার নয়—এটা বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। বিরিয়ানি থেকে শুরু করে সিঙ্গারা, সমোসা, মিষ্টি—সবই পাওয়া যায় এখানে। বাংলা গানের সুর ভেসে আসে দোকান থেকে, আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে শোনা যায় আড্ডায় মিশে যাওয়া বাংলা শব্দ। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবসের মতো দিনগুলোতে এলাকায় সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ—পর্তুগিজরাও কৌতূহল নিয়ে যোগ দেন সেই আনন্দে। প্রবাসে থেকেও এই সংস্কৃতির রঙই মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—“আমরা বাংলাদেশি, আমরা গর্বিত।”
বাংলাদেশিদের জন্য মার্তিম মনিজ শুধু বাজার বা ব্যবসার কেন্দ্র নয়—এটা একধরনের সামাজিক আশ্রয়। নতুন আসা প্রবাসীরা এখানে সহজে কমিউনিটির সঙ্গে মিশে যায়, পায় আপনজনের মতো সাহায্য। দূরদেশে থেকেও মার্তিম মনিজ হয়ে উঠেছে পরিচিত, নিরাপদ আর আপন ঠিকানা।
প্রবাস মানে শুধু ভিনদেশে থাকা নয়, প্রবাস মানে দেশকে বুকে বয়ে বেড়ানো। লিসবনের মার্তিম মনিজে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে মনে হয়—ঢাকার কোনো রাস্তায় হাঁটছি, চারপাশে পরিচিত ভাষা আর আপন গন্ধ। পর্তুগালের মাটিতে এই ছোট্ট বাংলাদেশ যেন প্রমাণ করে—দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও বাংলাদেশ আমাদের ভেতরে বেঁচে থাকে, শ্বাস নেয়, কোলাহলে মিশে যায়।
নারায়ণগঞ্জ টাইমস সর্বশেষ জনপ্রিয় ১আরো পড়ুন
হাসপাতালে জিম্মি লাশ, ডিসির হস্তক্ষেপে পরিবারের কাছে ফেরত
ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াড সিজন-২'র ক্যাম্পেইন শুরু
“স্যালুট টু জুলাই ওয়ারিয়র্স” শীর্ষক অনুষ্ঠানে লজিক অফ বাংলাদেশ
ডেমরায় ৬ তলা ভবন হেলে পড়েছে ৭ তলা ভবনে : আতঙ্ক
জার্মানিতে সাস্টের ঘ্রাণ, হৃদয়ের টানে একত্রিত হচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
শুরু হচ্ছে ‘এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’র ২০তম আসর
এনসিপি জাপান শাখার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
মার্চ ফর গাজা সফল করার লক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসীর অংশগ্রহণ
২৩১/১ বঙ্গবন্ধু সড়ক (৬ষ্ঠ তলা, লিফটের ৫)
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, নারায়ণগঞ্জ
নির্বাহী সম্পাদক: মোশতাক আহমেদ (শাওন)
ফোন:+৮৮০১৯৩৩-৩৭৭৭২৪
ইমেইল : [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
© ২০২৫ | সকল স্বত্ব নারায়ণগঞ্জ টাইমস কর্তৃক সংরক্ষিত | উন্নয়নে ইমিথমেকারস.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ম র ত ম মন জ স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ পর ত গ ল র প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াইহাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি-যুবদলের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৬ জন হাসপাতালে
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খালিয়ারচর পশ্চিম পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে উভয় পক্ষের আহত ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মতিন (৫০), জমির আলী (৫০), রাফি মিয়া (২৪), খায়ের উদ্দিন (৪২), জোনায়েত মিয়া (২৫), কালু মিয়া (৩৭), খলিলুর রহমান (৪০), আল আমিন (২৫), রশিদ মিয়া, (৫০), মনির হোসেন (৩৫), মজিবুর রহমান (৫০), সালাউদ্দিন মিয়া (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৫), শুভ মিয়া (২৫), জুনায়েদুর রহমান (২৫), রাজীব মিয়া (১৫), আহাদ মিয়া (১৮), তামিম মিয়া (১৪), আবদুর রহিম (৪৫), আলমগীর হোসেন (৪২), স্বপন মিয়া (৪০) ও আমির আলী (৬০)।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মতিন, খায়ের, জোনায়েত, কালু, খলিলুর ও আল আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যরা আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ফকির জহিরুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি কবির হোসেনের অনুসারীদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই নেতা নিজেদের প্রভাব বাড়াতে নিজ বলয়ে নতুন লোকজন ভেড়াতে শুরু করেন। এ সময় উভয় পক্ষই একে-অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসনের অভিযোগ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি গ্রামের একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে পুরোনো বিরোধ বাড়তে থাকে। সেই বিরোধের জেরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে জহিরুল ও কবিরের অনুসারীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর আজ খালিয়ারচর পশ্চিম পাড়া গ্রামের ফকির বাড়ি জামে মসজিদের সামনে উভয় পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয়রা। তবে কে বা কারা গুলি ছুড়েছেন, জানা যায়নি।
এ বিষয়ে যুবদলের নেতা ফকির জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিদের শেল্টার দিচ্ছে কবিরের লোকজন। তারা মামলায় জামিন না নিয়েই এলাকায় ঘোরাফেরা করলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাধা দেন। এর জেরে এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে কবিরের লোকজন। এলাকাবাসী তখন প্রতিরোধ করে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা কবির হোসেন বলেন, ‘বিনা উসকানিতে আমার অনুসারীদের ওপর হামলা করে জহিরুলের লোকজন। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের ঘটনায় রাত আটটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী ইসলাম। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।