স্টার্টআপ খাতে মূলধন বিনিয়োগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা কম। অতীতে তহবিল বিতরণের ক্ষেত্রেও সঠিক তদারকি ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে গঠিত নতুন ভেঞ্চার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি আমলা নয়, স্টার্টআপ তহবিল বোঝে এমন মানুষ প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশে–বিদেশে থাকা মেধাবী শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ও বিদেশযাত্রা কমাতে এই খাতে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ রোববার ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। আলোচনা সভার আয়োজন করে দেশীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডি ভেঞ্চারের এমডি শফিক উল আযম। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স ও বিডি ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা, চালডালের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিমসহ বিডি ভেঞ্চারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে স্টার্টআপ নীতিমালা সংশোধন করেছে। উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে পুনঃ অর্থায়ন দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যাতে বদনাম হয়। স্টার্টআপ খাত নিয়ে আমাদের সামনে সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে চাই।’

আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো স্টার্টআপ অর্থায়নে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। যারা প্রথাগত ব্যাংক ঋণের শর্ত পূরণ করতে পারে না, তাদের জন্য এই তহবিল একটি বিশাল সুযোগ। জাতিকে কেবল সঞ্চয়পত্রের মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মতো উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। এর ফলে দেশে একটি শক্তিশালী ও গতিশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিডি ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, ‘স্টার্টআপ খাতে ভারত একটি বড় উদাহরণ। তাদের উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেম বিশ্বজুড়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও বেসরকারি মূলধন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পরিচিত। তবে আমরা এখনো এই খাতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি।’

এবিবির চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই। আমাদের ব্যাংকাররা সাধারণত লাভ-লোকসান হিসাব (প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট) বোঝেন, কিন্তু ভেঞ্চার তহবিল বা মূলধন ব্যবস্থাপনা বোঝেন না। এখন সময় এসেছে মূলধন অর্থায়ন শুরু করার। মূলধন না আসলে অর্থনীতি টেকসই হবে না। ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি মূলধনের উৎস, দীর্ঘমেয়াদি নয়। ব্যাংকের টাকা দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় না।’

আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন বিডি ভেঞ্চারের সাবেক চেয়ারম্যান নূর এ আলম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, বিডিজবস ডট কমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ট র টআপ খ ত কর মকর ত উদ য ক ত সরক র তহব ল ম লধন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় সম্পর্ক জোরদার করতে রাজি বাংলাদেশ-কুয়েত

বাংলাদেশ ও কুয়েত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, শ্রম, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার ও বহুমাত্রিক সহযোগিতায় রূপ দিতে দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শক সভায় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে।

রোববার বাংলাদেশ ও কুয়েতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের রাজনৈতিক পরামর্শ সভা শেষে সন্ধ্যায় প্রচারিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকালে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের এবং কুয়েতের এশীয়–বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত সামিহ ইসা জোহর হায়াত তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এদিকে ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সামিহ ইসা জোহর হায়াত। সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সামিহ ইসা বলেন, বাংলাদেশ ও কুয়েত শ্রম সহযোগিতাসহ সম্পর্ক জোরদারে শিগগিরই একাধিক খাতে নতুন চুক্তি করবে।

দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক পরামর্শ সভার উল্লেখ করে সামিহ ইসা বলেন, বৈঠকে খাদ্যনিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, সামরিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান—এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই একাধিক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা জোহর হায়াত বলেন, সকালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আলীর একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা আরও বলেন, ‘আমরা আবারও ১৯৯০ সালে কুয়েতে দখলদারত্বের সময় বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। তখন থেকে পাঁচ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা আমাদের পাশে থেকে মাইন অপসারণ ও মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছেন।’

বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও ফ্লাইট বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে কুয়েত এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ৭টি, আল–জাজিরা এয়ারওয়েজ ১৪টি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে আরও নতুন রুট ও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে, যা খুব শিগগির বাস্তবায়িত হবে।

সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা বলেন, শ্রম সহযোগিতা নবায়নের বিষয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে, যা ভবিষ্যতে উচ্চপর্যায়ের সফরের সময় সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যৌথ বিবৃতি

বাংলাদেশ ও কুয়েত প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় প্রতি দুই বছর পরপর পর্যায়ক্রমে এ বৈঠক ঢাকা ও কুয়েত সিটিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর ও বিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি হয়।

বৈঠকে দুই পক্ষ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করে। ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনের’ অধীন বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ এবং প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলা ও অনলাইন নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়। দুই পক্ষই ‘কুয়েত ভিশন ২০৩৫’–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনশক্তি সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আলোচনায় থাকা সমঝোতা স্মারকগুলো চূড়ান্ত করার বিষয়ে পর্যালোচনা করে।

জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং হালাল খাদ্য খাতে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। দুই দেশ যৌথ বাণিজ্য কমিটি পুনরায় সক্রিয় করার পাশাপাশি ২০২৬ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজনে রাজি হয়েছে। বৈঠকে কুয়েত ফান্ড (কেএফএইডি) সহায়তার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো ও বিমান যোগাযোগে নতুন সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে সম্মত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ