মেধাবীদের দেশে রাখতে স্টার্টআপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
Published: 19th, October 2025 GMT
স্টার্টআপ খাতে মূলধন বিনিয়োগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা কম। অতীতে তহবিল বিতরণের ক্ষেত্রেও সঠিক তদারকি ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে গঠিত নতুন ভেঞ্চার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি আমলা নয়, স্টার্টআপ তহবিল বোঝে এমন মানুষ প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশে–বিদেশে থাকা মেধাবী শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ও বিদেশযাত্রা কমাতে এই খাতে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ রোববার ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। আলোচনা সভার আয়োজন করে দেশীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডি ভেঞ্চারের এমডি শফিক উল আযম। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স ও বিডি ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা, চালডালের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিমসহ বিডি ভেঞ্চারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে স্টার্টআপ নীতিমালা সংশোধন করেছে। উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে পুনঃ অর্থায়ন দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যাতে বদনাম হয়। স্টার্টআপ খাত নিয়ে আমাদের সামনে সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে চাই।’
আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো স্টার্টআপ অর্থায়নে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। যারা প্রথাগত ব্যাংক ঋণের শর্ত পূরণ করতে পারে না, তাদের জন্য এই তহবিল একটি বিশাল সুযোগ। জাতিকে কেবল সঞ্চয়পত্রের মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মতো উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। এর ফলে দেশে একটি শক্তিশালী ও গতিশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিডি ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, ‘স্টার্টআপ খাতে ভারত একটি বড় উদাহরণ। তাদের উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেম বিশ্বজুড়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও বেসরকারি মূলধন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পরিচিত। তবে আমরা এখনো এই খাতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি।’
এবিবির চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই। আমাদের ব্যাংকাররা সাধারণত লাভ-লোকসান হিসাব (প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট) বোঝেন, কিন্তু ভেঞ্চার তহবিল বা মূলধন ব্যবস্থাপনা বোঝেন না। এখন সময় এসেছে মূলধন অর্থায়ন শুরু করার। মূলধন না আসলে অর্থনীতি টেকসই হবে না। ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি মূলধনের উৎস, দীর্ঘমেয়াদি নয়। ব্যাংকের টাকা দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় না।’
আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন বিডি ভেঞ্চারের সাবেক চেয়ারম্যান নূর এ আলম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, বিডিজবস ডট কমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট র টআপ খ ত কর মকর ত উদ য ক ত সরক র তহব ল ম লধন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত
তিন দফা দাবি আদায়ে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর আন্দোলনকারী একজন শিক্ষক নেতা প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন।
ওই শিক্ষক নেতা বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষা শেষে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাতেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা পাঠদান করেন। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে চার লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।
প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়া, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতার নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে আছেন।
গত ২৭ নভেম্বর তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করে। এই পরিষদ বুধবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করে।
প্রায় একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করেছিল। বৃহস্পতিবার থেকে তারাও বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি শুরু করে। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।
এর মধ্যে কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তালা ভেঙে পরীক্ষা হয়েছে। পুলিশ ও আনসারের পাহারায়ও পরীক্ষা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিছু বিদ্যালয়ে ‘কোনোরকম’ পরীক্ষা হলেও উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। সব মিলিয়ে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) বড় রকমের সমস্যায় পড়ে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও তালা, কোথাও পরীক্ষা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এই কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আন্দোলন দমাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে যায়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষক নেতাসহ বৃহস্পতিবার বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষককে ‘প্রশাসনিক কারণে’ এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।