চিনি খেতে নিষেধ করায় মারামারিতে আবদার হোসেন নামে এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাকে গুরুতর অবস্থায় যশোর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় রাতেই আহত শ্রমিকের ছোটভাই আফজাল হোসেন চারজনের নামে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে আকাশ ও ইউনুস আলীর ছেলে রকি ইসলাম।

মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানান, ওইদিন মিলে আখ নিয়ে আসা কয়েকজন ট্রলি ড্রাইভার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা মিলের ওজনকৃত চিনির বস্তা থেকে চিনি খেতে গেলে শ্রমিকরা নিষেধ করেন। এ নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর ট্রলি ড্রাইভাররা বাইরে বেরিয়ে এসে সংঘবদ্ধ হয়ে লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে পুনরায় কারখানাতে গিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে একজনকে গুরুতর জখম করে।

এ সময় সেখানে থাকা অন্যান্য শ্রমিকদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে পালিয়ে যাওয়ার সময় আকাশ ও রকি নামে দুইজন ট্রলি ড্রাইভারকে ধরে ফেলে। তাদের টাইম অফিসে আটকে রাখা হয়। এ হামলায় গুরুতর আহত কারখানার বোয়িং হাউজের ফোরম্যান আবদার হোসেনকে প্রথমে কালীগঞ্জ ও পরে যশোর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

এ ঘটনার কিছু সময় পর মিল প্রশাসন বিষয়টি কালীগঞ্জ থানা পুলিশে অবহিত করলে পুলিশ মিলে এসে ওই দু’জনকে আটক করে থানাতে নিয়ে যায়। আটক ওই দু’জনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাতেই থানাতে একটি এজাহার দায়ের হয়েছে।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম মারামারি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আহত শ্রমিককে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, মারামারির খবর শুনে তিনি পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ঘটনায় জড়িত দু’জনকে আটক করেছেন। এ ঘটনায় ৪ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন: তারেক রহমান

‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’-এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান-আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।”

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”

আরো পড়ুন:

বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই: গয়েশ্বর

লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে: নজরুল ইসলাম

তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”

পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।”

“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”

“গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না”, বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ