এমনভাবে কাজ করবেন যাতে মানুষ খুশিমনে বিএনপিকে ভোট দেয় : রিয়াদ চৌধুরী
Published: 17th, January 2025 GMT
ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী (রিয়াদ চৌধুরী) দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জানেন দেশনায়ক তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে ৩১ দফা হাতে নিয়েছে।
এই ৩১ দফায় মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সর্বোপরি মানুষের সাধারণ জীবন যাপনের ব্যবস্থা করা। স্বাভাবিকভাবে যাতে মানুষ জীবন যাপন করতে পারে, ঝামেলমুক্তভাবে সমাজ ব্যবস্থা চলতে পারে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্যে আপনারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এমনভাবে মানুষের সাথে মিশবেন, কাজ করবেন যাতে আগামী নির্বাচনে তাদের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে না হয়। যাতে মানুষ এমতেই খুশিমনে বিএনপিকে ভোট দেয়।
তিনি সাবধান করে বলেন, এমন কোন কর্মকান্ড করবেন না যাতে আগামী নির্বাচনে মানুষের কাছে ভোট চাইতে আমরা বিব্রত বোধ করি। কারণ হচ্ছে, সমাজের বা দলের সকল মানুষ এক রকম না।
অনেকেই ভুলভ্রান্তি করতে পারে। আপনারা চিন্তা করবেন, আজকে থেকে সেই ভুলভ্রান্তি দূর করে আগামীতে মানুষের সেবা করে কিভাবে দলের ভাবমুর্তি উজ্জল করা যায় এবং সাংগঠনিক দক্ষতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) বিকালে ফতুল্লা থানাধীন দাপা ব্যাংক কলোনী এলাকায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় রিয়াদ চৌধুরী আরও বলেন, শামীম ওসমান এ এলাকার সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বিগত পনেরো বছরে শুধু ব্যাংক কলোনী নয় দাপা ফতুল্লা এবং ফতুল্লা থানার অর্ন্তগত বিভিন্ন এলাকাতে, সিদ্ধিরগঞ্জেও ব্যাপক হারে মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
যেহেতু এটি দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা তাই আমি উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে বলবো এলাকাবাসী ও প্রশাসনের যারা আছেন, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেবেন।
তিনি বলেন, ৫ তারিখের পরে যেহেতু প্রশাসন এখনও পূর্বের অবস্থায় ফিরতে পারেনি সেজন্য ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় প্রশাসন সাহস করে উঠতে পারে না এ মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
তাই আমি এখানকার নেতৃবৃন্দকে বলবো আপনারা এবং এলাকার মরুব্বি যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে প্রশাসনের সহযোগীতায় মাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করার চেষ্টা করে। ১৯৯১ সালে আমি ছাত্রদলের এ এলাকার দায়িত্বে ছিলাম। ২০০১ সালে আব্দুল খালেক টিপুও ছিলো আমিও ছিলাম। আমি কিন্তু এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। আমরা কোন সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেনি, আমরা কিশোরগ্যাং তৈরি করেনি, আমরা মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। তাই আগামী দিনে বিএনপি নেতকর্মীদের পাশে আপনারা থাকুন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে আপনাদের মঙ্গলের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা আপনারাদের পাশে থাকবে।
বক্তব্য শেষে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন অতিথিবৃন্দরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতীদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান (শুক্কুর মাহমুদ) ও ফতুল্লা থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো: আব্দুল খালেক (টিপু)।
ফতুল্লা থানা তাঁতীদলের সভাপতি হাজী ইউনুস মাষ্টারের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মাকসুদের সঞ্চালনায় এবং সাধারণ সম্পাদক মো: হানিফুর রশিদ ইমনের সার্বিক সহযোগীতায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মুসলিম আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি মো: সাগর সিদ্দিকী, মো: জুয়েল আরমান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক মো: মিলন ঢালী, ফতুল্লা থানা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক শাহ আলম পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আল আমিন, ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবুল বাশার জামান, ফতুল্লা থানা তাঁতীদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মো: হারুন অর রশিদ, ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেশাদ আহমেদ রাসেল, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা অরুণ, সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন, ফতুল্লা থানা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কামাল হোসেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সহ সভাপতি মো: মিঠু খাঁন, সহ সভাপতি রুবেল হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: সৈকত রাজ, আসাদুজ্জামান রিপন, বাহার আলী জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো: মিল্লাত, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: শফিকুল ইসলাম, মো: আলমগীর হোসেন, মো: শ্যামল পাঠান, মো: আলাউদ্দিন হাজী প্রমূখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র স ত দল র স ব যবস থ র জন য গঠন ক রহম ন আপন র করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
এটা অনস্বীকার্য যে মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা হয়, অন্যভাবে বললে মানুষের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই আইনই মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের সহযোগী উপাদান বা হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষত আইন যখন এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়, যাতে অতিবিস্তৃত, অস্পষ্ট এবং অসংগতিপূর্ণ ধারা থাকে কিংবা আইনের দুর্বল এবং ‘সিলেকটিভ’ প্রয়োগ হয়; আইনকে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা নির্বিচার আটকের ন্যায্যতা দেয়, মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং বৈষম্যমূলক চর্চাকে উৎসাহিত করে।
আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে সেসব দেশে, যেখানে আইনের শাসন ভঙ্গুর, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সীমিত এবং গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকে। বাংলাদেশ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
২.
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন অধ্যায়, যেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটে। সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও তৎকালীন সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং সহিংস আক্রমণের ফলে পরবর্তীকালে তা গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। গণ-অভ্যুত্থানে সমাজের সব স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং একটি স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিগত সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যা, সহিংসতা, নির্বিচার আটক ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল।
আন্দোলন চলাকালীন হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে নির্বিচার আটক করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্বীকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার এবং আটকের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া (ডিউ প্রসেস) অনুসরণের যে বিধান, তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণগ্রেপ্তার অভিযানের সময় আটক হওয়া প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিল শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিক আর ১৫ শতাংশ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। হত্যা, নির্বিচার আটক এবং নির্যাতনের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে মানুষের যোগাযোগের অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা, আত্মরক্ষায় বলপ্রয়োগ কিংবা জনস্বার্থের মতো ‘অস্পষ্ট’ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এসব ক্ষেত্রে আইন সহযোগী উপাদান বা অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। যেমন, কারফিউ জারি, প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বা দেখামাত্রই গুলির নির্দেশকে ন্যায্যতা দিতে জননিরাপত্তা এবং জনস্বার্থের মতো বিষয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে মূলত আইন রাষ্ট্রের দমনমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে সহায়তা করেছে, যা মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৩.
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেই নয়, বছরের পর বছর ধরে দেশের শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন বিগত সময়ে কিছু কঠোর ও দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেছিল, যা স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই আইনগুলো ভিন্নমত দমন, নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে কর্তৃতবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ছিল। বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ছিল এমন একটি আইন (যা পূর্ববর্তী আইসিটি আইনের বিতর্কিত এবং দমনমূলক ৫৭ ধারার একটি পদচিহ্ন)। এ আইন বাংলাদেশে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার ভুক্তভোগী ছিলেন অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ নাগরিকও।
এই দমনমূলক ডিএসএ আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে আইনের অপব্যবহারের প্রয়োজন ছিল না, বরং আইনটি ব্যবহার করেই অর্থাৎ আইনের মধ্যে থেকেই মানুষকে হয়রানি এবং নির্যাতন করা সম্ভব ছিল। ডিজিটাল আইনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল ভীতি এবং সেলফ-সেন্সরশিপের সংস্কৃতি তৈরি করে ভিন্নমতকে দমন করা, যা সংবিধান প্রদত্ত বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। লক্ষণীয়, নিপীড়নমূলক ডিজিটাল আইন প্রণয়নে এবং প্রয়োগে বিগত সরকার ডিজিটাল মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যখন ডিজিটাল মাধ্যমে মানবাধিকারের ধারণা ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, বাংলাদেশে দমনমূলক ডিজিটাল আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে এবং বিরোধী কণ্ঠ দমন করে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে পাকাপোক্ত করতে সহায়তা করেছে।
বিগত সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়ে উঠেছিল ভিন্নমত দমনের বড় অস্ত্র