চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হল। গত বছরের নভেম্বরে এই হলের খাবারে পাওয়া গিয়েছিল সিগারেটের টুকরো। এর আগে এ হলের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছিল। খাবারের নিম্নমানসহ নানা কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও আন্দোলন চলত এই হলে। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী হলের চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এই হলে খাবারে চালু হয়েছে নতুন ব্যবস্থা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। 

সোহরাওয়ার্দী হলে নতুন করে চালু হয়েছে ‘মেস’ ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর্চিদের পরিবর্তে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হলের এই নিয়মে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই কমিটি গত শুক্রবার থেকে ১৫ দিনের কার্যক্রম শুরু করেছে। মেস পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে ১৫ দিনের অর্থ একসঙ্গে নিয়েছে কমিটি। খাবারের পদ ও ধরনেও অন্যান্য হলের তুলনায় এসেছে ভিন্নতা। ৩০ টাকায় এই হলে এখন ভাতের সঙ্গে পাওয়া যায় তিনটি তরকারি। কমিটির সদস্যরা জানান, নিয়মিত আয়োজনে ভাতের সঙ্গে একটি আমিষ ও দুটি শাক-সবজির আয়োজন থাকবে। 
সোহরাওয়ার্দী হলের এই ব্যবস্থা অনুসরণের কথা চলছে অন্যান্য হলেও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু খাবার বা আবাসন নয়; রাজনৈতিক দখলদারিত্বমুক্ত হওয়ায় হলগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা। কোনো ধরনের ভোগান্তি, তদবির, নেতাদের ধরাধরি ছাড়াই বৈধভাবেই সিটে উঠতে পারছেন তারা। তবে এখনও পানি, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে।  

পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬৬ সালে চবির যাত্রা শুরু। কিন্ত প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পেরিয়ে এখনও পূর্ণ আবাসিক হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আসন মাত্র পাঁচ হাজার। ছাত্রদের আবাসিক হলে মাত্র দুই হাজার ৭১৪ ও ছাত্রী হলে দুই হাজার ৩৮৪ জনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এই হলগুলোতেও গত সাত বছরে হয়নি বৈধ আসন বরাদ্দ। নিয়ম মেনে সর্বশেষ এসব হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। এর পর হলগুলোর দখল নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ছাত্রদের সাতটি হলের অধিকাংশ কক্ষই ছিল তাদের দখলে। কোন কক্ষে কে থাকবে, সেটা নির্ধারণ করতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। কয়েক দফা চেষ্টা করেও প্রশাসন বৈধভাবে হলে আসন বরাদ্দে ব্যর্থ হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে পাল্টেছে এ চিত্র।  

আলাওল হলের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হলে শৃঙ্খলায় আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তন দেখছি। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংঘাত না থাকায় বেশ স্বস্তিতে আমরা। খাবারের মান কিছুটা ভালো হয়েছে। 
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.

আবদুল মান্নান বলেন, ছাত্রদের একটি কমিটি খাবারের দায়িত্ব পালন করছে। আমার মনে হচ্ছে, তারা বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব সামলাচ্ছে। শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার হলে পানি সমস্যার সমাধান করেছি শিক্ষার্থীরা সিটে ওঠার আগেই। আলাওল হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ওয়াইফাই সমস্যা আছে। সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত