আজ কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে শুরু হচ্ছে লোকজ মেলা
Published: 17th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। বিকেলে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ময়ূরপঙ্খী মঞ্চে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্পীদের প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ মোট ১০০টি স্টল বরাদ্দ হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ৬৪ জন কারুশিল্পী এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন বলে ফাউন্ডেশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আবহমান গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এ মেলা ও উৎসব আয়োজন করে আসছে। ১৯৯১ সাল থেকে নিয়মিত চলছে এই উৎসব। গতকাল শুক্রবার সকালে ফাউন্ডেশন চত্বরে দেখা যায়, পুরো চত্বর রং-বেরঙে সেজেছে। প্রধান ফটকের সামনে থেকে সড়কে দুই পাশে ঝোলানো হয়েছে আনন্দ পতাকা। ফাউন্ডেশনের অফিসকক্ষের সামনে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন কাগজের তৈরি ময়ূর। পুরো চত্বরজুড়ে আল্পনা আঁকা।
এ সময় মেলা চত্বরে দোকানিদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। কেউ কেউ শেষ সময়ে বাঁশ ও কাঠের সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত। এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনী, লোকজ প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানো আয়োজনও থাকছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেবেন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার।
ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের মেলায় সোনারগাঁয়ের জামদানি, মৌলভীবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শীতলপাটি, মাগুরা ও ঝিনাইদহের শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও মৃৎশিল্প; কক্সবাজারের শাঁখা ও ঝিনুক শিল্পসহ শিল্পীরা অংশ নেবেন। প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে বাউলগান, পালাগান, লোকসংগীত শিল্পীদের পরিবেশনা থাকবে। তারা লোকগীতি পরিবেশনা করবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’