‘লাল সন্ত্রাসই একমাত্র উপায়’ বলে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘমল্লার বসু। একইসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন সশস্ত্র যুদ্ধের। এরই প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় এ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। হল পাড়া থেকে মিছিল নিয়ে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন। পরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দেয়ালে সর্বহারা পার্টির সিরাজ শিকদারের গ্রাফিতি মুছে দেন।

এ সময় ‘লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘উদ্দ্যানের গাঁজাখোর উদ্যানে ফিরে যা’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

সমাবেশে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, “এ দেশে যখনই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়, খেয়াল করলে দেখবেন তার পেছনে এ লাল সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। তারা যুগ যুগ ধরে লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা দিয়েছে এবং দিবালোকে মানুষকে হত্যা করেছে। তারা সেই লাল সন্ত্রাসকে পুনরায় কায়েম করতে চায়। এখন ডাকসু হলে দুইটা ভোটও পাবে না। তাই তারা এমন সন্ত্রাস কায়েমের চেষ্টা করছে। তারা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির পাশের দেয়ালে শিরাজ সিকদারের গ্রাফিতি এঁকেছে। কেউ যদি এমন সন্ত্রাসের চেষ্টা করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের বিষদাঁত ভেঙে ফেলবে।”

এবি জুবায়ের বলেন, “আমরা আজকের এ প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ থেকে বলতে চাই এটি সার্বভৌমত্তের উপর আঘাত। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”

আজিজুল হক নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “এ সংগঠন আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসাবে কাজ করেছে। ছাত্রলীগ সব সংগঠনকে দমন করেছে, কিন্তু এদের জায়গা দিয়েছে। নতুন করে কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, “আমরা যখন ক্যাম্পাসে এসেছি সন্ত্রাসীরা এসব বামদের জায়গা করে দিয়েছে। জুলাইয়ের মতো একটি বিপ্লবের পর এখনো দেখছি তারা আওয়ামী ন্যারেটিভকে শক্তিশালী করতে চায়। আমরা দেখি উদ্যানের গেট বন্ধের পর কারা মব করেছে। কারা প্রক্টরের সঙ্গে বাজে ব্যাবহার করেছে। এদের অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এদের গ্রেফতার করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘমল্লার বসু নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করা এক ইংরেজী বার্তায় তিনি বলেন, “একমাত্র বিকল্প লাল সন্ত্রাস। প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে প্রতিরক্ষামূলক সহিংসতা। আমরা জাগরণ এবং মিছিল করি, যার সহিংস হওয়ার ক্ষমতা নেই। তা দ্বারা আপনি কখনই আপনার কমরেডদের রক্ষা করতে পারবেন না। মানুষ আপনাকে পছন্দ করবেন ঠিকই, কিন্তু কেউ অনুপ্রাণিত হবে না। কারোরই আর ‘মুক্তমনা’ পার্টির দরকার নেই। শহীদদের কেউ পরোয়া করে না। ফ্যাসীবাদ তখনই ভালো, যখন সে মৃত।”

তিনি ডানপন্থাকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন, “এ ডানপন্থীদের পাগলামিতে আপনাকে সার্বভৌমত্বের নামে হত্যা করা হবে এবং আপনার চরিত্রকে হত্যা করা হবে। মুক্তমনা ও ‘কেন্দ্রবাদী’ যারা, তাদের হৃদয় তারা ডানপন্থার কাছে বিক্রি করেছে। তারা দাবি করবে, এটি একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং উভয় পক্ষই কতটা খারাপ। আপনাদের খুব কম বন্ধুই আছে। এমনকি একজনকেও হারানোর সামর্থ্য আপনাদের আর নাই। আর মানুষ ভেড়ার মত। আপনি কি আজীবন মেষপালক হতে ইচ্ছুক?”

গুপ্ত রাজনীতির দিকে ইঙ্গিত করে মেঘমল্লার বলেন, “প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করা বন্ধ করুন। প্রকাশ্যে কমিটি দেওয়া বন্ধ করুন। আমরা সতর্ক না হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। দাঁত ও নখর বেরিয়ে আসছে। এভাবেই আপনার পথকে আপনি ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ থেকে বাঁচাতে পারবেন। আসুন এটিকে আমাদের গুপ্ত বন্ধুদের কাছে নিয়ে যাই। আমাদের সাথেই থাকুন।” 

যদিও তিনি ওই পোস্ট ডিলেট দিয়েছেন। এরপরও তার স্ক্রিনশট ঘিরে চলছে তুমুল সমালোচনা। সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা ও নিরাপত্তার উপর আঘাত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ