বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী কমলে ইলিশের দাম কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ’বাজারে যে ব্যবস্থা আছে, তাতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম কমানো কঠিন। তবে আমরা প্রমাণ রাখতে চাই মাছ ধরার উৎস থেকে সরাসরি বিক্রয়ের জায়গায় আনতে পারি, তাহলে এটার দাম কমানো সম্ভব। আমরা বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। 

রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি ভবনের সামনে ‘ইলিশ মাছের সরবরাহ ও মূল্য শৃঙ্খলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রয়’ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।   

মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জনসাধারণ যেন ইলিশ মাছ খেতে পারে, সেটা যেন তাদের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি। এটা খুবই ক্ষুদ্র উদ্যোগ, জানি আপনারা সবাই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। আমরা এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবো, আরও বেশি কি করে দিতে পারি সেই চেষ্টা করে যাবো।

জানা গেছে, ইলিশ মাছ বিপণন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। এই কার্যক্রমের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়—ইলিশ কিনে হোন ধন্য’। স্বল্প মূল্যের ইলিশ বিক্রির কর্মসূচিতে ৪৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায়। বিএফডিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই লটে বিক্রয়যোগ্য ইলিশ মাছের পরিমাণ ৮৫০ কেজি। ক্রেতারা আগে এলে আগে পাবেন। 

উদ্বোধনের পর ২০ জন ক্রেতা মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টার হাত থেকে মাছ ক্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন। প্রথম দেড় কেজি ইলিশ মাছ কিনেছেন মো.

দুলাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, বাজারে অনেক বেশি দাম হওয়ায় সবশেষ কবে ইলিশ কিনেছেন তার মনে নেই। কম দামে ইলিশ কিনতে পেরে খুশি হয়েছেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইলিশ মাছ এখন খুব দুর্লভ মাছ হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করবো শুধু ইলিশ না, অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও কম দামে বিক্রি করতে। পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্পমূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রিতে সফলতা পেলে পরে আমরা আরও বড় উদ্যোগ নেব।’

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরে উপপরিচালক উম্মে হাবিবা, ফিস ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশনের (ফোয়াব) সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র দ ম কম ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়েছে ৪ কিশোরী

রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে চার কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করলেও এখনও খোঁজ মেলেনি দু’জনের। উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের অভিযোগ, পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন হতো। তাই জীবন বাঁচাতে তারা পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। 

জানা যায়, রংপুর নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকায় সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ৬৮ জন শিশু-কিশোর রয়েছে। এখানে সাধারণ হারিয়ে যাওয়া, প্রতিবন্ধী, এতিম ও মামলা সংক্রান্ত কারণে আদালত থেকে পাঠানো শিশু-কিশোরদের ঠাঁই হয়। গত ১২ জুন রাতে প্রতিষ্ঠানটি থেকে চার কিশোরী পালিয়ে যায়। তাদের উদ্ধারে সমাজসেবা কার্যালয়ের তেমন উদ্যোগ না থাকলেও পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দু’দিন পর রোববার দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। ওই দিনই পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে আবার সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু আদালতের বারান্দায় থাকা এক কিশোরীর মা মেয়েকে আবার পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে আপত্তি জানান। 

ওই কিশোরীর মা সাংবাদিকদের জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাঁর মেয়ের ওপর শারীরিক মানসিক ও যৌন নির্যাতন হতো। মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। এ ছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে মেয়ে নিখোঁজ হলে তিনি থানায় জিডি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে দেয়নি সমাজসেবা কর্মকর্তারা। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজসেবা কর্মকর্তারা থানায় জিডি করেন। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নয়, থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে পুলিশের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের আদেশ ছাড়া এটি সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়।

পালিয়ে যাওয়া ওই কিশোরী বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিবাসীদের ওপর নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়। সম্প্রতি একটি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। এর পর ওই মেয়েটির ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। সেই মেয়েটিকে এখন আর কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে গালাগাল করা হয়। আদালত আমার মঙ্গলের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখেছিল। কিন্তু সেখানকার অবস্থা দেখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রে আমার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আরও দু’জন শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক মেয়েই নির্যাতনের শিকার হয়ে সেখানে আর থাকতে চায় না, প্রায় সময় কান্নাকাটি করে। 
আলাপকালে পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত এক নারী গণমাধ্যম থেকে মেয়েটিকে আড়াল করতে তাকে টেনে নিয়ে দ্রুত আদালতপাড়া ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা কিশোরীকে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত ওই নারী কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। একই বিষয়ে উদ্ধার হওয়া আরেক কিশোরীর বক্তব্য নিতে চাইলে নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলেনি সে। 

আজ সোমবার সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে (বালিকা) সরেজমিন দেখা যায়, গেট বাইরে থেকে বন্ধ। পরিদর্শনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয় দিলেও প্রথমে গেট খুলতে রাজি হননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পরে গেট খুলে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। 

জেরার মুখে চার কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে। সাধারণত কেন্দ্রের গেটের চাবি আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত আয়া রুমা বেগমের কাছে থাকে। চার কিশোরী পালিয়ে যাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মনিমুন আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

বিষয়টি নিয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অনিল চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। 

এদিকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এ এ এম মুনীর চৌধুরী বলেন, যে শিশু-কিশোরীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া ও দেখভালের জন্য রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের কেউ যদি হারিয়ে যায়, নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে তাহলে তা উদ্বিগ্নের বিষয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিবাসীদের রক্ষা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ