ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধনের পর মাত্র ১০০ কেজি ইলিশ বিক্রি
Published: 19th, January 2025 GMT
মাত্র ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে ইলিশ! অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও এই দামেই ইলিশ বিক্রির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। আজ রোববার দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ‘স্বল্পমূল্যে’ ইলিশ বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করার পর বিএফডিসিতে দুপুর ২টা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়।
আগে থেকেই ঘোষণা ছিল ৪৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের সমুদ্রের ইলিশ প্রথম লটে বিক্রি হবে ৮৫০ কেজি। কিন্তু ২টা ৪০ মিনিটিই বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আজ ইলিশ কিনতে এসে ফির গেছেন বহু মানুষ। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১০০ কেজি মাছ।
ইলিশের দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মানুষ যাতে ইলিশের স্বাদ পেতে পারেন সেজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়-ইলিশ কিনে হোন ধন্য’। কিন্তু আজ স্বাদ নিতে এসে অনেকই হতাশ হয়েছেন।
বিএফডিসির আউটলেটের বিক্রেতা নাজমুল বলেন, আমাদের ২টা ৪০ মিনিটের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। আজকে ১০০ কেজি বিক্রি করেছি। আজ আর বিক্রি করব না। তবে স্টক থাকা সাপেক্ষে বিক্রি চলবে। ক্রেতারা আবার পরদিন এসে কিনতে পারবেন।
রাজধানীর বাংলা মোটর থেকে মাছ কিনতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, কারওয়ান বাজার এসে এখানে ভিড় দেখতে পাই। পরে এসে দেখি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছর ধরে ইলিশ কিনিনি। কিন্তু এখানে এসেও কিনতে পারিনি। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এত অল্প মাছ বিক্রির কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া সাগরের মাছ এমনিতেই বাজারে দাম কম। নদীর মাছের স্বাদ অন্য রকম, ফলে দামও বেশি। তারপরও কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যারা ইলিশ কিনেছেন তাদের মধ্যে অনেক সরকারি কর্মকর্তাকেও দেখেছি। স্বল্প মূল্যের উদ্যোগটি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই থাকল।
মো.
যারা ইলিশ কিনতে পেরেছেন তারা জানান, বাজারে অনেক বেশি দাম হওয়ায় সবশেষ কবে ইলিশ কিনেছেন তাদের মনে নেই। তবে এখন কম দামে ইলিশ কিনতে পেরে তারা খুশি।
রাজধানীর ফার্মগেটের বাসিন্দা আতিকুর রহমান দেড় কেজির দুটির ইলিশ কিনেছেন। তিনি বলেন, এত কম দামে ইলিশ কিনতে পারব কল্পনা করিনি। তবে সরকার চাইলে স্বল্পমূল্যের এই কার্যক্রমের আওতা আরও বাড়াতে পারে। তাতে বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ নয়, এর সঙ্গে স্বাদ, রান্না, জীবনযাপন অনেক কিছু জড়িত। ক্রয়সীমার মধ্যে রেখে বাংলাদেশের মানুষের ইলিশ খাওয়ার অধিকার আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা হয়তো সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। আমরা শুধু এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। আরও বেশি কীভাবে মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পারি সেই চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান বলেন, ইলিশ হবে স্বস্তির মাছ- এটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। প্রথম দিন আমরা মাত্র ১০০ কেজি মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছি। ফলে অনেকেই কিনতে পারেননি। আমরা সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। তবে দুই লটে আমরা ১৭০০ কেজি মাছ বিক্রি করব। আমাদের মূল লক্ষ্য বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। জনসাধারণ যেন ইলিশ খেতে পারে, সেটা যেন তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা যায় এ ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এটা খুবই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। আরও বেশি কি করে দিতে পারি সেই চেষ্টা করব। আমরা বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই।
মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী বলেন, ইলিশ খুব দুর্লভ হয়ে গেছে। আমরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরি। দেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ইলিশ বিক্রির এই উদ্যোগ প্রথম। এর মাধ্যমে সুলভ মূল্যে ইলিশ দিতে পারব। এই মাছটা আমিষের বিরাট উৎস। আমাদের লক্ষ্য থাকবে এই উদ্যোগ যেন দেশব্যাপী পৌঁছে দিতে পারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১০০ ক জ মৎস য আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’