মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার দায়ে এক পপ গায়ককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরানের একটি আদালত। বিতর্কিত এই পপ গায়কের নাম আমির হোসেইন মাগসুদলু ওরফে তাতালু। গতকাল রবিবার এ রায় দেওয়া হয়।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। 

ইরানি সংবাদপত্র এতেমাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির আপত্তি মেনে নিয়েছে এবং ব্লাসফেমির (ধর্ম অবমাননা) মামলায় আগে দেওয়া পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করেছে।’ পত্রিকাটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরায় চালু করা হয় এবং এবার আসামিকে নবী (সা.

)–এর অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

ইরান দূতাবাসে ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার

ইরান-রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

ইরানি সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, তেহরানের প্রথম ফৌজদারি আদালত পুনর্বিচারের পর মহানবীকে অবমাননার অভিযোগে ৩৭ বছর বয়সী তাতালুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, পূর্বের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করেছে। 

তবে এই রায় এখনো চূড়ান্ত নয় এবং এটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে, রবিবার ইরানের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে, তাতালুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার খবর দেশটির বিচার বিভাগ অস্বীকার করেছে। বিচার বিভাগের জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, এখনো কোনো চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়নি।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এই দাবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ৩৭ বছর বয়সী তাতালু ২০১৮ সাল থেকে তুরস্কে বাস করতেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে ইরানের কাছে হস্তান্তর করে তুরস্ক। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। 

তাতালু একজন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী, যিনি র‍্যাপ, পপ এবং আরএনবি মিউজিক মিশিয়ে গান গাইতেন। তিনি এর আগে ‘পতিতাবৃত্তি’ প্রচারের জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং ইরানের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও অশ্লীল কনটেন্ট বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।

বিতর্কিত ভাবমূর্তি থাকা সত্ত্বেও, তাতালু ২০১৭ সালে সালে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ইরানের এই সংগীতশিল্পী দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির সমর্থনে গান গেয়েছিলেন। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের বরাতে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ইরানে কমপক্ষে ৯০১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং আগের বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি।

তুর্ক বলেন, “ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে, যা গভীর উদ্বেগজনক। এই ক্রমবর্ধমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জোয়ার বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ