প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম কার্যদিবসে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন যা অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। উল্লেখযোগ্য নির্বাহী আদেশের মধ্যে রয়েছে- জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সমাপ্তি, আশ্রয় ও শরণার্থী প্রোগ্রাম স্থগিতকরণ, সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং মাদক কার্টেলকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথগুলোতে বড় ধরনের কাটছাঁট। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের কিছু বিতর্কিত কর্মসূচি আবার চালু করতে চাইছেন, যার মধ্যে রয়েছে- রিমেইন ইন মেক্সিকো কর্মসূচি। আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের মামলার রায় হওয়া পর্যন্ত মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা।

অনেক আদেশ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সেই আদেশটি যা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সব মানুষের নাগরিকত্বের অধিকারকে খর্ব করতে চায়।

ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে আমি আমাদের দেশকে হুমকি এবং আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর সেটাই আমি করব।

তবে হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি বেনি থম্পসন (ডি-মিস) এই পদক্ষেপগুলোর সমালোচনা করে বলেন, এই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকানদের বোঝাতে চাইছেন যে তিনি সীমান্ত সমস্যার সমাধান করছেন-কিন্তু তিনি তা মোটেই করছেন না।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সমাপ্তি
ট্রাম্প একটি আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রদান বন্ধ করার ঘোষণা দেন। এটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব শুধুমাত্র বৈধ পন্থায় অর্জিত হওয়া উচিত।  
এই আদেশটি ইতোমধ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা এটিকে অবাস্তব দাবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ থমাস উলফ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের আলোচনা কেবল আলোচনা মাত্র। প্রেসিডেন্টরা এটি বাতিল করতে পারবেন না, কারণ সংবিধান স্পষ্টভাবে এটি নিশ্চয়তা দিয়েছে। কোনো নির্বাহী আদেশ আদালতের লড়াইয়ে টিকবে না।

আশ্রয় ও শরণার্থী প্রোগ্রাম স্থগিতকরণ
ট্রাম্প প্রশাসন শরণার্থী প্রোগ্রাম তিন মাসের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। শরণার্থী গ্রহণের হার পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া ওবামা প্রশাসনের অধীনে ৮৫ হাজার থেকে কমে ট্রাম্পের শেষ বছরে ১১ হাজার ৮০০-তে নেমে আসে। যদিও শেষ বছরে কোভিডের প্রভাব ছিল, আগের দুই বছরে দেশটিতে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারে সীমাবদ্ধ ছিল।

সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি
দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ট্রাম্প সীমান্ত সুরক্ষায় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া “মেক্সিকোতেই থাকুন” নীতি পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে, যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে হবে। 

একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কতজন সৈন্য সীমান্তে পাঠানো হবে তা নির্দিষ্ট করা যায়নি। এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের ওপর নির্ভর করবে।

মেক্সিকোতেই থাকুন বা মাইগ্র্যান্ট প্রোটেকশন প্রটোকলস অনুযায়ী, আশ্রয় প্রার্থীদের তাদের নিজ দেশের পরিবর্তে মেক্সিকোতেই আশ্রয় প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মাদক কার্টেলকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা
কিছু মাদক কার্টেলকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।

এমএস-১৩ এবং ট্রেন ডি আরাগুয়ার মতো কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে কার্টেলের সদস্যদের সহজে গ্রেপ্তার এবং বহিষ্কার করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। এমনকি যারা কার্টেলগুলোকে সাহায্য করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

সমালোচনা ও আইনি চ্যালেঞ্জ
এই পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক নেতারা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এসব আদেশ মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং আইনের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে।  

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো মার্কিন অভিবাসন নীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শরণ র থ স গঠন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ