Samakal:
2025-05-01@03:25:56 GMT

ছেঁড়া পাতা জোড়া লাগান

Published: 21st, January 2025 GMT

ছেঁড়া পাতা জোড়া লাগান

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রতিবাদের অন্যতম মাধ্যম ছিল গ্রাফিতি। ঢাকা শহরে শুধু নয়, বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্ন দেয়ালে লেখা হয়েছে মানুষের মনের কথা। শিক্ষার্থীরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়, সেটি ফুটে উঠেছে এসব গ্রাফিতিতে। আগে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দেয়াল দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগ। গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি আঁকার মধ্য দিয়ে সেই দেয়ালও দখলমুক্ত করে শিক্ষার্থীরা। 

অন্যতম শক্তিশালী গ্রাফিতি ছিল একটি গাছে কয়েকটি পাতা; এক একটিতে লেখা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আদিবাসী। নিচে লেখা ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। গ্রাফিতিটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে, এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষ বাস করে। কাউকে বাদ দেওয়া বা অস্বীকার করা যাবে না। এ গ্রাফিতিটি তার গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পুস্তকের শেষ মলাটে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বইটি শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও না পৌঁছালেও কিছুদিন থেকে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছিল। কীভাবে? সরকার জানে; কিন্তু মনে করছে, অন্যরা জানে না। সব সরকারই জনগণকে বোকা ভাবে এবং এটিই কাল হয়।

যা হোক, গ্রাফিতিটি বিষয়ে অন্যরা বেশি না জানলেও ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে একটি সংগঠন জেনে মাঠে নেমে যায়। সংগঠনটির নাম আগে শোনা যায়নি। কিন্তু তাদের একটি প্রতিবাদের কারণেই সরকার তাড়াহুড়া করে পাঠ্যপুস্তক থেকে সেই গ্রাফিতি সরিয়ে অন্য গ্রাফিতি যুক্ত করে। তার মানে, জনগণ সংগঠনের নাম ও কার্যকলাপ সম্পর্কে না জানলেও সরকার নিশ্চয় ভালোভাবে জানে। তা না হলে সরকারের কাছে কেন তারা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? তাদের খুশি করতে কেন সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়ল?

সরকার শুধুই দাবি মেনে গ্রাফিতি সরিয়েছে, তা নয়। এই সংগঠনের প্রতি সরকারের আশীর্বাদ আরও স্পষ্ট হয় ১৫ জানুয়ারি বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। পাঠপুস্তক থেকে গ্রাফিতি সরানোর প্রতিবাদে সেদিন এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিল আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। একই স্থানে সেদিন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি পাল্টা দাবিদাওয়া নিয়ে যায় এবং আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আগে কর্মসূচি দেওয়ার পরও সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হলো না কেন? বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ কর্মীদের হাতে থাকা লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা। পতাকা বাঁধা লাঠি দিয়েই আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পেটানো হচ্ছে। তাদের হাতে ক্রিকেট স্টাম্পও ছিল। সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু আদিবাসী  শিক্ষার্থীদের রক্ষায় কোনো ভূমিকা নেয়নি। কেন নেয়নি? কারণ, এ সংগঠনের পেছনের শক্তি সম্পর্কে পুলিশ জানে। পরদিন এই হামলার প্রতিবাদে যখন আরেকটি প্রতিবাদী মিছিল হয়, সেই মিছিলেও হামলা হয়। পুলিশ টিয়ার শেলের গ্যাস ছোড়ে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। অন্যকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দেওয়া লোকজন নিজেদের ‘ফ্যাসিজম’ কীভাবে ঢাকবে? 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হামলার ঘটনাটি সেদিনই হলো যেদিন সংবিধান সংস্কার কমিটি তাদের প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। যে প্রস্তাবনায় বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান চার নীতির মধ্যে গণতন্ত্র রেখে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং দরদের কথা যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত হয়েছে ‘বহুত্ববাদ’-এর মতো অতি কাঙ্ক্ষিত শব্দ। কিন্তু কোনোটির সঙ্গেই যেন কোনোটি মেলে না। একদিকে বহুত্ববাদের অঙ্গীকার, অন্যদিকে আদিবাসীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা। তাদের অন্যায়– তারা আদিবাসীর স্বীকৃতি চায়।

মনে রাখতেই হবে– জুলাইয়ের অভ্যুত্থান হয়েছিল সাম্য, মর্যাদা, প্রাপ্যতা, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্রের অঙ্গীকার থেকে। সেই অভ্যুত্থান থেকে তৈরি অন্তর্বর্তী সরকার বারবার বৈষম্যহীনতার অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে কেন? সমতা ও মর্যাদার প্রতীক গ্রাফিতিটি কেন পাঠপুস্তকে রাখতে পারল না? 
সাম্প্রতিক একটি বিষয় বেশ নজরে পড়ছে। প্রায়ই কপালে বা লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে অন্যদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটা কি জাতীয় পতাকার অবমাননা নয়? হেলমেট বাহিনীর জায়গায় তাহলে তৈরি হচ্ছে পতাকা বাহিনী?

এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা দেখেছি প্রধান উপদেষ্টাসহ অনেক উপদেষ্টাই আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করছেন। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকেই লক্ষ্য করলাম, এ বিষয়ে তারাও আগের সরকারের মতো ‘গাঁইগুঁই’ শুরু করেছেন। আগের মতো ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ ব্যবহার করছেন। কিন্তু কেন? 
আমার তর্কের জায়গা স্পষ্ট। ঘটনার বিচার এবং দুই দিনের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদানের দাবির পাশাপাশি প্রথম প্রশ্ন পাড়তে চাই, কেন যে কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠন ছোটখাটো ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালেই সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে? সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে বলেই ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে পেরেছে। নাকি তারা সরকারেরই লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে?

ঢাকা শহর বাদেও আদিবাসী অঞ্চলে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হলেই কেবল ঘটনার দুই দিন পর সরকার নিন্দা জানায়। ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়গুলা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারের কারণেই বিষয়টি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে। নিন্দা প্রকাশ ও দু’জনকে গ্রেপ্তার কি ক্ষততে মলম লাগানো? এ ধরনের আচরণ আগের সরকারও করত। মানুষ সেটি গ্রহণ না করায় তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা এসেছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। অভ্যুত্থানের মূল দাবি ছিল– দেশ কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়; সবার হবে। কিন্তু কই সে বোধ? যে সরকার একটি গ্রাফিতিই রাখতে পারে না, তারা আবার বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করবে? যদি ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গ্রাফিতি তুলে নিতে পারে, তাহলে আদিবাসী ও অন্যদের দাবি মেনে সেটি আবার পাঠবইয়ে যুক্ত করতে সমস্যা কোথায়? আদিবাসী স্বীকৃতিতেই-বা বাধা কী? যদি এগুলো না করতে পারে, তাহলে ধরে নিতে হবে, বর্তমান সরকারও আগের সরকারের পথেই হাঁটছে।

জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান 
বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zobaidanasreen@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক ত কর র সরক র সরক র র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩