যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও
Published: 21st, January 2025 GMT
‘আমেরিকান ড্রিম’ বিশ্বের কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার নাম। উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সই করেছেন একাধিক নির্বাহী আদেশে। এতে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপরেও। প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব এবং পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আরও যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্পের অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষাবিষয়ক উল্লেখযোগ্য নির্বাহী আদেশের মধ্যে রয়েছে– জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সমাপ্তি, আশ্রয় ও শরণার্থী প্রোগ্রাম স্থগিতকরণ, সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং মাদক চোরাকারবারি চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে বিপদগ্রস্ত ও নিপীড়নের শিকার শরণার্থীদের সমর্থন-সহায়ক কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের কিছু বিতর্কিত কর্মসূচিও আবার চালু করছেন। যেমন ‘মেক্সিকোয় থাকুন’ কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় মেক্সিকো ছাড়া অন্য দেশগুলোর আশ্রয়প্রার্থীদের মামলা মার্কিন আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মেক্সিকোয় থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করা হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে থাকে– এমন প্রথা বাতিল আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। ৩০ দিন পর এ আদেশ কার্যকর হবে। কোনো বিদেশি নাগরিক যদি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শিশু জন্ম দেন, সেই শিশুর সঙ্গে তার বাবা-মাও নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন। এ আদেশের ফলে সেটিও আর থাকছে না। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেশটির সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী দিয়ে সুরক্ষিত। সংবিধানের এ ধারা বাতিল করতে হলে অবশ্যই আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।
অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর হবে জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসন নিয়ে মোট ছয়-সাতটি নির্বাহী আদেশ জারি হতে পারে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল-বিষয়ক আদেশে ট্রাম্প সই করেছেন। বাকিগুলো করেন কিনা, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আগের বারও অভিবাসন নিয়ে কঠোর হয়েছিলেন ট্রাম্প। দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বের করে দেবেন। সেই সঙ্গে পরিবারের একজন নাগরিকত্ব নিয়ে বাকিদের এক এক করে নিয়ে যাওয়ার নিয়মও বাতিল হবে।
বাংলাদেশের ক্ষতির ব্যাখ্যায় হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্যতম। ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আবার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা আরও যাচাই-বাছাই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে।
নির্বাহী আদেশ কার্যকর করতে সংবিধান পরির্বতন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে নাগরিকদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন রয়েছে। ফলে এটিকে বাতিল করতে আদালতে যেতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। তবে বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে ৬ জন বিচারক রিপাবলিকানদের। ফলে সেখান থেকে এ আদেশের পক্ষে ব্যাখ্যা বের করে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের খুব বেশি কষ্ট হবে বলে মনে হয় না।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে আইনি চ্যালেঞ্জের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমরা পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা জন্মগত নাগরিকত্বের এই ব্যবস্থা রাখি। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা মনে করি, আমাদের ভালো ভিত্তি আছে।
এই নীতি ঘোষণার মুহূর্তেই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) এটি নিয়ে একটি মামলা করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ থমাস উলফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল আলোচনা মাত্র। প্রেসিডেন্ট এটি বাতিল করতে পারবেন না। কারণ, সংবিধান স্পষ্টভাবে এটির নিশ্চয়তা দিয়েছে। এখানে জন্মগ্রহণ মানেই নাগরিকত্ব। কোনো নির্বাহী আদেশ আদালতের লড়াইয়ে টিকবে না।
আশ্রয় ও শরণার্থী প্রোগ্রাম স্থগিতকরণ
আশ্রয় প্রার্থনা ও শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া নির্বাহী আদেশে স্থগিত করা হয়েছে, যা অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করবে। যার উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী গ্রহণ প্রোগ্রামকে আমেরিকান নীতি ও স্বার্থের সঙ্গে আরও সংগতিপূর্ণ করা। আদেশ অনুযায়ী, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও পররাষ্ট্র দপ্তর ৯০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। সেখানে তারা বিশ্লেষণ করবে– শরণার্থী গ্রহণ পুনরায় শুরু করা জাতীয় স্বার্থে হবে কিনা। তাদের প্রতিবেদন আসার আগ পর্যন্ত শরণার্থী গ্রহণ স্থগিত থাকবে।
শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা সংস্থা গ্লোবাল রিফিউজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও ক্রিস ও’মারা ভিগনারাজা বলেন, শরণার্থী প্রোগ্রাম শুধু একটি মানবিক সাহায্যের মাধ্যম নয়। এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতৃত্ব দেখিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে যাচাই প্রক্রিয়া জোরদার
অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং এবং যাচাই প্রক্রিয়া জোরদার করা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই আদেশে জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমেরিকানদের সুরক্ষায় ভিসা ইস্যু করার প্রক্রিয়ায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যেন অনুমোদিত অভিবাসীরা জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসতে না পারে।
নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। ফলে ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত সামরিক সম্পদ মোতায়েন হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন পেন্টাগনের বাহিনী এবং সম্পদ সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন করতে ব্যবহার করতে পারবে।
মাদক চোরাকারবারি চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা
মাদক চোরাকারবারি চক্রগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে। এই পদক্ষেপ বিশেষত এমএস-১৩ ও ট্রেন ডি আরাগুয়ার মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে। তাদের বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কার্টেলের সদস্যদের সহজে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার করতে পারবে। এমনকি যারা চক্রগুলোকে সাহায্য করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে, ট্রাম্পের শপথের পরপরই ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। অ্যাপটি অভিবাসীদের বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী মেক্সিকোয় আটকা পড়েছেন। অ্যাপটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত থাকা হাজার হাজার নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অ্যাপটি সহায়তা করেছে।
এই আকস্মিক পদক্ষেপে মেক্সিকো সীমান্তে অপেক্ষমাণ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। হাইতি, ভেনেজুয়েলাসহ সারাবিশ্ব থেকে আসা এসব ব্যক্তি স্যুটকেস নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অ্যাপয়েন্টমেন্টও পেয়েছিলেন। ভেনেজুয়েলার মেলানি মেন্ডোজা যখন দেখতে পান, সিবিপি অ্যাপে তাঁর সোমবার দুপুর ১টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়েছে, তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি পরিবারসহ মেক্সিকোর টিজুয়ানার সীমান্ত ক্রসিংয়ে অপেক্ষা করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর সঙ্গে এই টিজুয়ানা ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ জনকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো।
মেলানি মেন্ডোজা বলেন, জানি না, আমরা এখন কী করব! আমি পৃথিবীর কাছ থেকে কিছু চাই না; শুধুই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি। আমি ঈশ্বরকে অনুরোধ করছি যেন আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
তাঁর চারপাশের অভিবাসীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছিলেন বা চুপচাপ কাঁদছিলেন। অনেকে শূন্য দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে ছিলেন। বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন। তখনও সীমান্তের একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল– সিবিপি ওয়ান অ্যাপ ডাউনলোড করুন। এটি আপনার অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করবে।
সিবিপি ওয়ান কার্যত একটি লটারির মতো। অ্যাপটি দিনে আটটি সীমান্ত ক্রসিংয়ে ১ হাজার ৪৫০ জনকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুযোগ দেয়। সিবিপির তথ্য অনুসারে, দিনে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ স্লটের জন্য চেষ্টা করেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ত ল কর পদক ষ প শরণ র থ র জন য কর ছ ন স গঠন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষা আন্দোলনের চেতনা বনাম রাষ্ট্রের নীরবতা
পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলনের ওপর দাঁড়িয়ে ইতিহাস আমাদের প্রভূত জাতীয়তাবাদী শক্তি দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুরোনো ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ নতুন মোড়ক জন্ম দিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের মানুষ, যা তাঁরা ১৯০৫-১৯১১ সাল পর্যন্ত গ্রহণ করেননি; কিন্তু ১৯৪৮ সালের পর সেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে গ্রাহ্য করা জরুরি ছিল।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ হয়ে উঠল পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক ‘ডমিনেন্ট হেজিমনি’র বিপরীতে নিপীড়িত জাতিসত্তার কণ্ঠস্বর। এই প্রভাব বাংলাদেশকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে জন্ম দিলেও ভাষা আন্দোলন আমাদের পাঠ্যপুস্তকীয় ইতিহাসে শুধু ‘বায়ান্ন’ ও ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’তে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এটা রাষ্ট্রই সুচারুভাবে গড়ে তুলেছে। কেননা, এতে তার তথাকথিত উদারবাদী রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা সহজ হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় প্রতিরোধের রাজনীতিকে।
রাষ্ট্রের এই রাজনীতির সবচেয়ে বড় বলি হয়েছে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন, মুখ্যত বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে এ রাষ্ট্রে, শিক্ষা আন্দোলন প্রসঙ্গে তার সিকিভাগ বিদ্যায়তনিক মনোযোগও দেওয়া হয়নি। অথচ ভিন্ন আলাপ তুললে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন মূলত ভাষা আন্দোলনের যে প্রতিরোধ, সেটিরই একটি পরিবর্ধিত রূপ এবং প্রাথমিক পূর্ণতার জন্মদাতা।
আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এই গৌরবগাথার বয়ান পাবেন মাত্র এক অনুচ্ছেদ। এই দ্বিচারিতার পেছনেও অন্য এক রাজনীতি আছে। সত্য এই যে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান হয়ে বাংলাদেশ অর্জন পর্যন্ত; কিন্তু নতুন দেশে শিক্ষাব্যবস্থা যতটা সর্বজনীন ও বি–উপনিবেশিত করা উচিত ছিল, সেদিকে রাষ্ট্র ও সরকারগুলোর যথাযথ আগ্রহ আজও নেই।
কেন হয়েছিল শিক্ষা আন্দোলনব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার পথ ধরেছিল পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রী শাসকগোষ্ঠী। ঔপনিবেশিক মনোজগৎ নিয়েই ১৯৫৯ সালের ৫ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের সচিব এস এম শরীফের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাবাদর্শে শিক্ষাকে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষায় শরীফ শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। মাত্র আট মাসে প্রস্তুত সেই প্রতিবেদন প্রত্যাঘাতের ভয়ে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। প্রকাশিত হওয়ার পরপরই পূর্ববঙ্গ আবার ফুঁসে ওঠে। ভেঙে ফেলে আইয়ুব শাহির রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সময়ের কঠিন-কঠোর মার্শাল ল। কেন? এর গুরুত্বটা অনুধাবন করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনের সুপারিশে শরীফ কমিশন প্রথমত বলেছিল, উর্দু হবে পাকিস্তানের শিক্ষার ভাষা, ইংরেজি হবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলক আর বাংলা বর্ণমালার বদলে চালু হবে রোমান হরফ (রোমান হরফে ইউরোপীয় বহু দেশ তাদের ভাষাকে লিখিতভাবে প্রকাশ করে)।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষাকে পণ্য ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্র শিক্ষার দায়িত্ব নেবে না বলে কমিশন সুপারিশ করে। অর্থাৎ যাঁর টাকা আছে, শিক্ষার অধিকার তাঁরই, এটাই ছিল এই সুপারিশের মূলকথা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক (ফ্রি) না করার পরিপূর্ণ পাঁয়তারা ছিল এই সুপারিশে। পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পূর্ববঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। কমিশনের সুপারিশ তাতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে উঠল। গ্রাম-অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গে বরাবরই কৃষক ও শ্রমিকেরা ছিল সংখ্যাগুরু। ভাষা ও অর্থের মারণাস্ত্র প্রয়োগ করলে এই বিশাল মেহনতি শ্রমজীবী শ্রেণির সন্তানেরা শিক্ষিত হবে কীভাবে?
এই যে দুটি বিপদ, এগুলো নতুন নয়, পুরোনোই। ১৮৩৫ সালে দেওয়া ম্যাকওলে নীতিরই নতুন সংস্করণ। প্রথমে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি চাপিয়ে দেওয়া; তারপর ইংরেজি না জানলে চাকরি না পাওয়ার আতঙ্ক ঢোকানো ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি। ঠিক একই খড়্গ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আবারও নেমে এল ১৯৬২ সালে।
শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরোধিতা ও মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে রাজপথে নামলেন। লম্বা সে লড়াইয়ের ইতিহাস। সে ইতিহাস গৌরবেরও, চাঞ্চল্যেরও। লম্বা সময় ধরে লড়াই করার পর ১৭ সেপ্টেম্বর হরতাল ডাকা হলো, যার মূল কুশীলব ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের মোহাম্মদ ফরহাদ ও ছাত্রলীগের সিরাজুল আলম খান।
সেই হরতালের মিছিলে গুলি চলল। শহীদ হলেন মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। টঙ্গীতে সুন্দর আলী। সেই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘শিক্ষা দিবস’। কিন্তু সেটি নামে, মর্মে-কর্মে অতলান্ত বিস্মৃতির ছাপ।
ভাষার প্রশ্নটি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানেরও প্রশ্নশিক্ষার প্রশ্নটি যে ভাষার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তা শরীফ কমিশনের সুপারিশ থেকেই স্পষ্ট। কিন্তু একে শুধু ১৯৫২ বা ১৯৬২ সালের ঘটনাবলি দিয়ে মোটেও বোঝা যাবে না। যেতে হবে ইতিহাস ও রাজনীতির আরও গভীরে।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আট বছরের সংগ্রাম তাতে আপাত সফল হয়; কিন্তু এই সাফল্যের চেয়েও বড় অর্জন আছে।
ভাষার প্রশ্নটিকে পূর্ববঙ্গের উদয়োন্মুখ (অ্যাসপায়েরিং) শিক্ষিত মধ্যবিত্ত (শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবীরা) যে আর্থসামাজিক বয়ান দিয়ে মোকাবিলা করেছিলেন, তার তুল্য বিচার হতে পারে ১৮৫৭ সালের প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহের সঙ্গে। সেই প্রতিরোধকে ঔপনিবেশিক বিদ্যায়তনিক ভাষায় ক্ষুদ্রার্থে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বলা হলেও আদতে তা ভারতবর্ষের ঔপনিবেশিক উৎপাদন সম্পর্ক তথা সার্বিকভাবে উৎপাদন পদ্ধতিকে নাকচ করে পুরো ভারতবর্ষে প্রতিরোধের আগুন জ্বালিয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য প্রকট। ভাষার সঙ্গে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সম্পর্ককে সামনে আনা হয়েছিল। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছিল, তা মুসলিম লীগ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহই প্রথম নাকচ করে প্রতারণা করেন। সেই স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গের জমিনে সব আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে।
ভাষা হিসেবে বাংলাকে নাকচ করে দেওয়ার সঙ্গে এই স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করার সম্পর্ক আছে। পূর্ববঙ্গ স্বায়ত্তশাসন পেলে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই তার গঠন তৈরি হতো। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষমতাকাঠামো তার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইল উর্দু, যা পূর্ববঙ্গের আমজনতার কাছে ‘ভিনদেশি’ ভাষাই ছিল মুখ্যত। এমতাবস্থায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসে গেছে।
শিক্ষার মাধ্যম (মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন) ও চাকরির পরীক্ষার ভাষা উর্দু হলে বাঙালি সেই ভার বহন করতে পারত না। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানিরা উর্দুকে শুধু একক রাষ্ট্র ভাষাই বানাতে চায়নি, পঞ্চাশের দশকে বাংলা লিখতে বলেছিল ফার্সি-আরবি প্রভাবিত নাস্তালিক হরফে, যে হরফে পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষাগুলো লিখিত।
নৌবাহিনীর পরীক্ষা উর্দুতে নেওয়ার প্রতিবাদ এ জন্যই হয়েছিল। নদীমাতৃক পূর্ববঙ্গকে পশ্চিমা উর্দুভাষী রেজিমেন্ট দ্বারা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলার এই প্রবণতা খেয়াল করার মতো। মনে রাখতে হবে, এই প্রবণতা পঞ্চাশের দশকের শুরুর প্রবণতা, একাত্তরের গণহত্যা যার চূড়ান্ত পরিণতি। ভাষাকেন্দ্রিক লড়াই তাই শুধু ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সীমিত ছিল না। এর সঙ্গে একটি প্রতারিত জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিকভাবে বিকাশের সম্পর্ক জড়িত। জড়িত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও।
আর অন্তরে ছিল এমন একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যারা ১৮৫৭ সালের মতোই প্রথাগত উৎপাদন–সম্পর্ক ও উৎপাদনপদ্ধতিকে সমূলে উৎপাটন করে আপামর জনগোষ্ঠীর কথা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবে। যুক্ত হয়েছিল ভূমিব্যবস্থা বদলে ফেলতে চাওয়া বিখ্যাত তেভাগা আন্দোলনের লড়াইয়ের স্পিরিট, যার প্রভাবে ১৯৫০ সালের জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়।
১৯৫০ সালে রাজশাহীর জেলে সংঘটিত হয় কুখ্যাত ‘খাপড়া ওয়ার্ড হত্যাকাণ্ড’, যেখানে রাজবন্দী বামপন্থী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ৭ জন নিহত হন, আহত হন ৩০ জনের বেশি। ১৯৫৪ সালে আদমজী ও কর্ণফুলী কারখানায় বাঙালি শ্রমিকদের ওপর অবাঙালি মালিকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া দানবীয় হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৯০ জন, আহত হন ২৫০ জনের বেশি শ্রমিক। ভাষা আন্দোলন এসব নির্মমতার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধের অপর নাম।
সবিশেষে এই আন্দোলন এমন কিছু আর্থসামাজিক বিষয় সামনে এনেছিল, যা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের মেহনতি মানুষের দুর্দশা লাঘবের বড় মঞ্চ হয়ে উঠেছিল, স্বপ্ন দেখিয়েছিল উৎপাদন-সম্পর্ক বদলের। এ কারণেই এটি একটি আন্দোলন মাত্র ছিল না, ছিল অভিজাত ক্ষমতাকাঠামোর বিরুদ্ধে একেকটি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ‘অনন্য অভ্যুত্থান’।
শরীফ শিক্ষা কমিশন বাতিল হয় শিক্ষার্থীদের আত্মবলিদানের শক্তিতেই। মনে রাখতে হবে, রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল; লড়াইটা তাই মূল ভাষা আন্দোলনের চেয়েও কঠিন ছিল; কিন্তু এই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলে ফেলার প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন ছিল। নতুন রাষ্ট্র অভিজাত শ্রেণির বিপক্ষে যেতে চায়নি। তাই ভাষা আন্দোলনের পরম্পরা হিসেবে শিক্ষা আন্দোলনের যে চেতনা তৈরি হয়েছিল, তা লোপাট হয়ে গেছে।ভাষা ও ‘শিক্ষার মাধ্যম’ অঙ্গাঙ্গি ছিলনতুন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, এ প্রসঙ্গ মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ভারত ভাগ হওয়ার আগপর্যন্ত বারবার এড়িয়ে গেছেন। পূর্ববঙ্গের নেতারাও সেটি অনুভব করেননি। ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম প্রাদেশিক পরিষদে শিক্ষার অধিকার প্রসঙ্গে যে ইশতেহার তুলে ধরেন, তাতে ভাষার প্রসঙ্গটি স্থান পায়নি। ছাত্র-যুবা ও বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু ঠিকই আলাপটা তুলেছিলেন। তবে সেটি শুধু রাষ্ট্রভাষার প্রসঙ্গে নয়, এর সঙ্গে তাঁরা শিক্ষার মাধ্যম নিয়েও কথা বলেছেন।
১৯৪৭ সালের জুলাইয়ে গণ আজাদী লীগ, ১৯৪৭ সালের ৬-৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা—বাংলা না উর্দু শীর্ষক পুস্তিকায় তমদ্দুন মজলিস বাংলাকে পূর্ববঙ্গের দাপ্তরিক ভাষা করার পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি তোলেন। গণতান্ত্রিক যুবলীগ তো অবৈতনিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষারও দাবি জানায়।
মোদ্দাকথা, শুধু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেই ভাষার অধিকার বাস্তবায়িত হয় না। এর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হয় মূলত শিক্ষায়, সরকারি দপ্তরে ও চাকরির পরীক্ষায়; কিন্তু ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক স্বীকৃতির তথাকথিত ভণিতা ছাড়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি পাকিস্তানিদের মনোভাব কখনোই বদলায়নি। সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন শরীফ শিক্ষা কমিশন। এ জন্যই শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের বয়ান ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি।
শিক্ষা ও আজকের বাংলাদেশশরীফ শিক্ষা কমিশন বাতিল হয় শিক্ষার্থীদের আত্মবলিদানের শক্তিতেই। মনে রাখতে হবে, রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল; লড়াইটা তাই মূল ভাষা আন্দোলনের চেয়েও কঠিন ছিল; কিন্তু এই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলে ফেলার প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন ছিল। নতুন রাষ্ট্র অভিজাত শ্রেণির বিপক্ষে যেতে চায়নি। তাই ভাষা আন্দোলনের পরম্পরা হিসেবে শিক্ষা আন্দোলনের যে চেতনা তৈরি হয়েছিল, তা লোপাট হয়ে গেছে।
যে কারণে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে বারবার শিক্ষার্থীদের নামতে হয়েছে। এরশাদের আমলে মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়েছেন, যে দিনটি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস নামে স্বীকৃত হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করতে হয়েছে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে বর্ধিত ফি–বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
বিস্ময়কর বটে, বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই হয়তো জানেনই না শিক্ষা দিবস কী ও কেন! ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বর সম্পর্কে জানেন; কারণ, পাঠ্যপুস্তকে এগুলো স্বাভাবিক মহিমায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর নিয়ে সেটি করতে গেলে রাষ্ট্রকে সরাসরি শিক্ষা সংকোচন নীতি ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে; কিন্তু রাষ্ট্র সেটি করবে না।
সেটি করলে রাষ্ট্রের তথাকথিত উদার অর্থনীতি ও ব্যক্তিমালিকানায় শিক্ষাকে সোপর্দ করার সব নকশা শিক্ষার্থী সমাজের কাছে উন্মোচিত হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীরা তখন প্রশ্ন করবেন, ‘এ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমি বৈষম্যের শিকার কেন হচ্ছি? কেন রাষ্ট্র দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হলেও, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে দিলেও যেকোনো স্তরে আমার শিক্ষার ভার বহন করবে না?’
এসব প্রশ্নের উত্তর পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোয় চলতে চাওয়া রাষ্ট্রের কাছে নেই। শিক্ষা দিবসের দুর্দমনীয় চেতনা তাই শুধু কাগজের কালিতেই লেখা আছে; মর্মে নেই, কর্মে তো নেই-ই।
ড. সৌমিত জয়দ্বীপ, সহকারী অধ্যাপক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত লেখকের নিজস্ব