দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে এই যুবশক্তির অবদান রাখার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৮ শতাংশ যুবশক্তি বেকারত্বের শিকার যা তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা এবং পেশাগত পরামর্শ বা দিকনির্দেশনার মধ্যে যে বড় ফারাক রয়েছে, সেটি তুলে ধরে।
২০২৪ সালের বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর জরিপে দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চতুর্থাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার এবং গ্রামাঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি। স্নাতক ডিগ্রিধারী ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কখনোই ক্যারিয়ার পরামর্শ বা চাকরি খোঁজার সহায়তা পাননি।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এক হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ‘ব্র্যাক ইউথ ক্যারিয়ার এক্সপো ২০২৫’। তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি, দিকনির্দেশনা এবং দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিপি) একটি অন্যতম উদ্যোগ ‘ক্যারিয়ারহাব’-এর আয়োজনে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শারমিন জাহান। অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমিন জাহান যুব ক্যারিয়ার এক্সপোর মাধ্যমে যুবকদের আকাঙ্ক্ষা এবং সুযোগের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির জন্য ব্র্যাকের প্রশংসা করেন।
মো. কামরুজ্জামান বলেন, চাকরি প্রস্তুতি বা ক্যারিয়ার গঠনে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শেখার আগ্রহ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
খোন্দকার জাকির হোসেন বলেন, ব্র্যাকের ক্যারিয়ার হাব প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ বলেন, ব্র্যাকের ২০২৬–২০৩০ কৌশলগত পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে পরবর্তী পাঁচ বছরে ১০ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।