বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দিয়ে ৪২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। লে-অফ প্রত্যাহার করে সব পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি শুরু করা এবং বিদেশি কার্যাদেশ পাওয়ার সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে কারখানা ও ব্যবসা চালু রেখে সব বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো.

এনাম উল্লাহ এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন।

সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, “৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক কারখানা ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় চলতি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বেতনাদি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেব্রুয়রি মাস থেকে বিশাল জনবলকে আর কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না। ফলে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবেন। সেই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, দোকানদার, যানবাহন, স্কুল-মাদ্রাসা-কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে। এসবের সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।”

তিনি বলেন, “বেক্সিমকোর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবেন। তাদের পরিবারের প্রায় ২ লাখ সদস্য এবং এ শিল্পকারখানাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান হওয়া প্রায় ৮ লাখ মানুষের রিজিক বন্ধ হয়ে যাবে। এই ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষের মাঝে প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী, শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং ৫ হাজারের মতো ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি আছেন, যাদেরকে আমরা পরম মমতায় সমাজ ও পরিবারের বোঝা হওয়া থেকে রক্ষা করছি। সরকারের সিদ্ধান্তে যদি কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে তারা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে প্রায় ৪২ হাজার নতুন বেকার এবং ব্যবসা-বাড়িভাড়াবঞ্চিত লাখো মানুষ নৈরাজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নতুন সঙ্কট তৈরি করবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে লে-অফ প্রত্যাহার করে ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়া মহাদেশের একটি বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ। শুধু বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশনই প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করত। সেই কারখানাগুলো বন্ধ ও ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত করায় সরকার ও জনগণ সেই বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা আমাদের জাতীয় আয় ও রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ।

মো. এনাম উল্লাহ বলেন, “বর্তমান সময়ের উপযোগী মেশিনারিজ, প্রযুক্তি আর ৪২ হাজার দক্ষ জনবল নিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠা আজকের বেক্সিমকোর গার্মেন্টস শিল্প মরিচা ধরার অপেক্ষায় আছে। আমাদের মাসিক প্রায় ৪০-৫০ লাখ পিস পোশাক তৈরির সক্ষমতা, এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং অত্যাধুনিক মেশিনে সজ্জিত প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি ও এক্সেসরিজ তৈরির কারখানা, টেক্সটাইল মিল ও দক্ষ জনবল বায়ারদের প্রধান আকর্ষণ।”

তিনি আরো বলেন, “কম্পোজিট গ্রুপ হওয়ায় শুধু তুলা ও কেমিকেল কেনা ছাড়া পোশাক তৈরির জন্য অন্য কিছু বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় না। এসব সুবিধা বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে থাকায় বায়াররা আমাদেরকে কার্যাদেশ দিতে সব সময় তৎপর থাকেন। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকালীন বৈশ্বিক সঙ্কটের মাঝেও বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশন পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে ছিল। এরকম একটি লাভজনক শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে, ১০ লাখ মানুষের মুখের আহার কেড়ে নিয়ে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির ব্যাহত করে বর্তমান জননন্দিত সরকার কী সুবিধা লাভ করছেন, আমরা জানি না। তাই, সবিনয়ে অনুরোধ, অবিলম্বে আমাদের কারখানাগুলো খুলে দিয়ে ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীসহ ১০ লাখ মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।”

বেক্সিমকোর এই কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যই করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ৬ মাস ধরে বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সকল ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই; অন্যদিকে দায়-দেনার পরিমাণ প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সকল প্রকার চাপ অব্যাহত আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, যদি আয় থেকে দায় শোধ ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সকল দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর করার বিকল্প নেই।”

মো. এনাম উল্লাহ বলেন, “সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে দায় পরিশোধের চাপ সৃষ্টি শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায্যও বটে। এই দায় বহন করার সক্ষমতা কোনো সরকার বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারখানা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া যতই প্রলম্বিত হবে, বেক্সিমকোর দায়ও তাতে বাড়তে থাকবে। তাই, অবিলম্বে বায়ারদের কার্যাদেশ পাওয়ার সুবিধার্থে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নিয়ে উৎপাদন শুরু করার মাধ্যমে সকল দায়-দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।”

বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির ২ বছরের টাকা জমে গেছে এবং অফিসারদের ৪ মাসের বেতনের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। বর্তমান আর্থিক দুরবস্থার ভেতর এই বকেয়াগুলো পাওয়া গেলেও সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তির খরচটা মিটিয়ে ফেলা যেত। টাকার অভাবে সন্তানদের নতুন বছরে নতুন ক্লাসে ভর্তি করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “বেক্সিমকোর যে পরিমাণ ঋণ আছে, তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদায় করা সম্ভব না। এই ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া। এই ঋণ চাওয়া হয় চার মাসের জন্য। এই ঋণ দেওয়া হলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করে বকেয়া ঋণও পরিশোধ করতে পারব। সেক্ষেত্রে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব, এ ধরনের একটি প্ল্যানও আমরা দিয়েছি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে এনাম উল্লহ বলেন, “আমরা মালিক বলতে এখন আমাদের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীকে বুঝি। এমডি আছেন, রিসিভার আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এমডি মহোদয় বেক্সিমকোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সব ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।”

ঢাকা/এনটি/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর শ ধ র ব যবস থ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ